কৃষি খাতে বরাদ্দ বেড়ে ৪০ হাজার কোটি টাকায় উঠল
Published: 2nd, June 2025 GMT
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্যনিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের তুলনায় নতুন অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ বেড়েছে, যার পরিমাণ ১ হাজার ৩৬১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের তুলনায় নতুন বাজেটের আকার ছোট হলেও কৃষি খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। নতুন বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কম।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আজ সোমবার নতুন অর্থবছরের জাতীয় বাজেট ঘোষণা করেন। তাঁর বাজেট বক্তৃতা বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ (বিটিভি) বিভিন্ন চ্যানেল সম্প্রচার করে।
নতুন বাজেটে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ এবং খাদ্যনিরাপত্তা খাতে মোট ৩৯ হাজার ৬২০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল্য বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছিল ৩৮ হাজার ২৫৯ কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের অন্যতম প্রধান অগ্রাধিকার। গত বছর আকস্মিক বন্যায় আউশ ও আমন উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হওয়ায় খাদ্যশস্যের মজুতে কিছুটা ঘাটতি দেখা দেয়। এ ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে আমরা ৯ লাখ মেট্রিক টন চাল এবং ৭ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিই, যার আওতায় ইতিমধ্যে ৮ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং ২ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হয়েছে। পাশাপাশি মাঠপর্যায়ে কৃষকের জন্য ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে সারসহ অন্যান্য উপকরণে প্রয়োজনীয় ভর্তুকি দিচ্ছি। এ ছাড়া খাদ্যনিরাপত্তার গুরুত্ব বিবেচনায় সারের মজুত বা বাফার স্টক বৃদ্ধি করা হয়েছে।’
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন এবং নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলমান রয়েছে। বর্তমানে ১ হাজার ৯০১টি কেন্দ্রের মাধ্যমে সারা দেশে ওএমএস কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তালিকাভুক্ত চা-বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে প্রতি কেজি ১৯ টাকা দরে গম বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়া ‘ভালনারেবল উইমেন বেনিফিট’ কর্মসূচির আওতায় ১০ লাখ ৪০ হাজার দুস্থ নারীকে মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হচ্ছে।
এ ছাড়া আগামী অর্থবছরে খাদ্যগুদামের ধারণক্ষমতা ৩৭ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীতকরণ এবং খাদ্যশস্য ব্যবস্থাপনার প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে বাজেট বক্তব্যে উল্লেখ করেন সালেহউদ্দিন আহমেদ।
কোল্ড স্টোরেজ স্থাপনে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আমদানিতে রেয়াতি সুবিধা প্রদান করে একটি নতুন প্রজ্ঞাপন জারির প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। স্থানীয়ভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদন উৎসাহিত করতে কম্বাইন হারভেস্টার তৈরির যন্ত্রাংশ আমদানিতে বিদ্যমান শুল্ক হ্রাসের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া কৃষি উৎপাদন উৎসাহিত করতে কোনো স্বাভাবিক ব্যক্তির ‘কৃষি হইতে আয়’ অনধিক ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, দেশের মোট শ্রমশক্তির ৪৫ শতাংশ এবং গ্রামীণ কর্মজীবী নারীর প্রায় ৬০ শতাংশ কৃষিতে নিয়োজিত। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১১ শতাংশের ওপরে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল খ ম ট র ক টন বর দ দ আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
‘রাষ্ট্রীয় শোক’ প্রত্যাখ্যান
গণগ্রেপ্তার, নির্যাতন–নিপীড়ন–হয়রানি চলছিল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মুখসারির ছয়জন সমন্বয়ক তখনো আটক ছিলেন ডিবি কার্যালয়ে। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে সরকারি উদ্যোগে লোকদেখানো ‘রাষ্ট্রীয় শোক’ পালন করা হচ্ছিল ৩০ জুলাই। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের এই কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে সেদিন ‘মুখে ও চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা এবং তা অনলাইনে প্রচারের কর্মসূচি’ পালন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এই কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া পড়ে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সমর্থনে ২৯ জুলাই রাত (২০২৪ সাল) থেকেই ফেসবুকের প্রোফাইলে লাল রঙের ফ্রেম ব্যবহার শুরু হয়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মী, লেখক, সাংবাদিক, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির প্রতি সংহতি জানান।
ফেসবুকে অভূতপূর্ব সাড়ার পাশাপাশি নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে ৩০ জুলাই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ক্যাম্পাস ও সড়কে মিছিল করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে মুক্তি দিতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর প্রাণঘাতী গুলি না চালানোর নির্দেশনা চেয়ে আইনজীবী মানজুর-আল-মতিন ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকার করা রিটের শুনানিতে ৩০ জুলাই হাইকোর্ট মন্তব্য করেন ‘এসব মৃত্যু আমাদের সবার জন্যই দুঃখজনক’।
সেদিন দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) ‘হত্যা, অবৈধ আটক ও নির্যাতনের বিচার চাই’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে ১১ দফা দাবি তুলে ধরেন বিশিষ্ট নাগরিকেরা। ‘বিক্ষুব্ধ নাগরিক সমাজ’–এর ব্যানারে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (এখন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা)। অধ্যাপক আসিফ নজরুল (বর্তমান সরকারের উপদেষ্টা), টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, মানবাধিকারকর্মী
শিরীন হক, অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা প্রমুখ এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ওপর যে মাত্রায় বলপ্রয়োগ ও সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করা হয়েছে, তা দেশের জনগণ ও বিশ্ববিবেককে স্তম্ভিত, ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত করেছে।’
অন্যদিকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ‘দেখামাত্র গুলির নির্দেশ’ দেওয়া ও আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ৩০ জুলাই বিবৃতি দেয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারকে সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।
গণ–অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলো সম্পর্কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আবদুল কাদের (বর্তমানে গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক) চলতি জুলাই মাসের ৬ তারিখ রাতে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছেন। সেখানে তিনি লিখেছেন, ২৯ জুলাই (২০২৪ সাল) সরকারের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় শোক এবং কালো ব্যাজ ধারণের ঘোষণা দেওয়ার পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীনের সঙ্গে তাঁর কথা হয়। নাছির উদ্দীন তাঁকে রাষ্ট্রীয় কালো ব্যাজের বিপরীতে লাল ব্যাজ ধারণের প্রস্তাব দেন। পরে মো. আবু সাদিক কায়েমকে (ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা) ফোন করে বিষয়টি জানিয়েছিলেন আবদুল কাদের। সাদিকও সম্মতি দেন। নাছির উদ্দীন ও আবু সাদিকের সঙ্গে বারবার আলোচনা করেই মুখে–চোখে লাল কাপড় বেঁধে ছবি তোলা ও তা অনলাইনে প্রচার করার কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছিল।