জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আটক অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। নিঃসন্দেহে এটি বর্তমান বিচারিক ব্যবস্থার প্রতি গণমানুষের আস্থা বাড়িয়ে তুলবে। গত বৃহস্পতিবার তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছিল। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা মামলাটি করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমে জানা যায়, পুলিশের জবানবন্দি অনুযায়ী সুজন মোল্লা আন্দোলনকালে চোখে গুলিবিদ্ধ হন। 
অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের বয়স ৭০ বছর। দীর্ঘ সময় ধরে তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। তাছাড়া তিনি অসুস্থ এবং ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী জামিন পাওয়ার যোগ্য। এসব যুক্তি বিবেচনায় আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেছেন।
আদালতে পুলিশ জবানবন্দিতে বলেছে, গত বছর ১৯ জুলাই আন্দোলন চলাকালে ঢাকার সূত্রাপুর থানার রায়সাহেব বাজারের কাছে স্টার হোটেলের সামনে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের প্রত্যক্ষ প্ররোচনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা এই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন। এতে মামলার বাদী ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লার চোখে গুলি লাগে। এই প্রেক্ষিতে অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করা হয়। 
নিঃসন্দেহে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সহিংসতার নেপথ্যে আমলাতন্ত্র থেকে শুরু করে কোথাও কোথাও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও ইন্ধন কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতা করেছেন। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়েও অভিযুক্তদের তালিকা তৈরি হয়েছে। তবে সবক্ষেত্রে সততা ও যথাযথ প্রক্রিয়া মানা হয়েছে কিনা তা নিয়ে পত্রপত্রিকায় বহু প্রশ্ন উঠেছে। কোথাও কোথাও অর্থের বিনিময়েও মামলা ঠুকে দেওয়া কিংবা প্রত্যক্ষভাবে সহিংসতায় যুক্ত ব্যক্তিদেরও মামলার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। 
একচেটিয়াভাবে সবাইকে একই নিক্তিতে বিচার করে মামলা ঠুকে দেওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ ও দুর্বল করে দেবে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে আন্দোলনের শরিকরাই। এ জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলো, মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে অভিযুক্তের সংশ্লিষ্টতা কেমন– প্রত্যক্ষ নাকি পরোক্ষ তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় যাচাই করা। এতে মামলার ভিত্তি যেমন শক্ত হবে, তেমনি বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের পথ আরও জোরদার করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে অধ্যাপক আনোয়ারা বেগমের জামিন একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে থাকবে। 
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান দাবি গণহত্যায় জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করা। রোববার সংবাদমাধ্যমে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের বিচারকাজ সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এটি ইতিবাচক বার্তা। 
স্বাধীনতার পর থেকেই আমরা রাজনৈতিক সহিংসতা দেখেই চলেছি। স্কুল, কলেজ থেকে শুরু করে সব ধরনের প্রতিষ্ঠান রাজনীতিকীকরণ করা হয়েছে। এতে যেমন প্রতিষ্ঠানগুলো ভেঙে পড়েছে, তেমনি বহুভাবে সমাদৃত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। রাষ্ট্র, সরকারি দল তথা ক্ষমতা একাকার হয়ে গেলে প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো স্বায়ত্তশাসন থাকে না।
গণঅভ্যুত্থানের মূল দাবি আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন নিশ্চিত করা। মামলা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন না হলে বিচারিক ক্ষেত্রে সত্যিকার সংস্কার আনা সম্ভব হবে না। তাই বিশেষ কোনো চাপ, অর্থ বিনিময়, কিংবা প্রভাবের ভিত্তিতে যাতে কারও বিরুদ্ধে মামলা-মোকদ্দমা না হয়, আবার একইভাবে কেউ যাতে ছাড় না পায় তাও সুনিশ্চিত করা জরুরি।  


ইফতেখারুল ইসলাম: সহসম্পাদক, সমকাল 
iftekarulbd@gmail.

com

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

মাহফুজ-আসিফের পদত্যাগ কার্যকর তফসিল ঘোষণার পর

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উপদেষ্টা হিসেবে মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার পদত্যাগ কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) রাতে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

আরো পড়ুন:

মাহফুজ–আসিফের মঙ্গল কামনা প্রধান উপদেষ্টার

পদত্যাগ করলেন উপদেষ্টা আসিফ ও মাহফুজ

প্রেস সচিব বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম। তাদের পদত্যাগ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হবে। এর আগ পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করতে পারবেন।”

মাহফুজ আলম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন করছিলেন।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। সেই সরকারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের ৩ জন প্রতিনিধি জায়গা পান।

এর মধ্যে নাহিদ ইসলাম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং আসিফ মাহমুদ প্রথমে শ্রম উপদেষ্টা, পরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান। পরে শ্রম উপদেষ্টার পরিবর্তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

মাহফুজ আলম শুরুতে উপদেষ্টা পদমর্যাদায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হন। পরে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।

ঢাকা/আসাদ/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হাদিকে হত্যার চেষ্টায় নিন্দা ও উদ্বেগ এনসিপির 
  • মাহফুজ-আসিফের পদত্যাগ কার্যকর তফসিল ঘোষণার পর