চলে গেলেন দক্ষিণি নির্মাতা বিক্রম সুগুমারন। হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে গতকাল রোববার মুম্বাইয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৭ বছর। ভারতীয় গণমাধ্যম ফিল্মফেয়ার জানিয়েছে, বিক্রম মুম্বাই এসেছিলেন প্রযোজকের সঙ্গে পরের ছবির গল্প নিয়ে আলোচনা করতে। কিন্তু চেন্নাই ফেরার আগে বাসে ওঠার সময় হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। তার এমন আকস্মিক চলে যাওয়া শোকের ছায়া ফেলেছে দক্ষিণ ভারতের চলচ্চিত্রে।

তামিলনাড়ুর রামনাথপুরম জেলার পরমাকুড়ি থেকে উঠে আসা বিক্রম সুগুমারনের শুরুটা হয়েছিল অভিনয়ের স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু ভাগ্যের ছকে তিনি পরিচালনার পথে হাঁটেন। নির্মাতা বালু মহেন্দ্রর সহকারী হিসেবে ১৯৯৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত কাজ করেন, অংশ নেন ‘জুলি গণপতি’-সহ বেশ কিছু প্রকল্পে। পর্দার সামনে তাঁর প্রথম উপস্থিতি ছিল ভেত্রিমারানের ‘পোলাধবন’-এ। তবে নির্মাতা হিসেবেই নিজেকে গড়ে তুলেছেন বিক্রম।  

২০১৩ সালে তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘মাধা ইয়ানাই কুট্টাম’ মুক্তি পায়। গ্রামীণ তামিলনাড়ুর বর্ণবাদ ও পারিবারিক জটিলতাকে কেন্দ্র করে নির্মিত এই ছবি দর্শক ও সমালোচকদের মন কাড়ে। ছিমছাম উপস্থাপনাতেও কীভাবে গভীর বিষয়বস্তু ফুটিয়ে তোলা যায়, সেটি দেখিয়েছিলেন বিক্রম। পাশাপাশি ভেটরিমারানের ‘আদুকালাম’ ছবির সংলাপ রচনাও করেছেন তিনি, যা পরে ভারতের জাতীয় পুরস্কার পায়।

দীর্ঘ এক দশক বিরতির পর ২০২৩ সালে বিক্রম আবার পরিচালনায় ফেরেন ‘রাবণা কোত্তম’-এর মাধ্যমে। শানতনু ভাগ্যরাজ অভিনীত এই ছবিতে উঠে আসে প্রতিরোধ ও গ্রামীণ রাজনীতির বিষয়। বিক্রমের প্রয়াণে শানতনু সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘বিক্রম সুগুমারন, আপনার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি। প্রতিটি মুহূর্ত স্মরণীয় হয়ে থাকবে। বড় অল্প বয়সেই চলে গেলেন। আপনাকে মিস করব।’

আরও পড়ুনচলে গেলেন জনপ্রিয় দক্ষিণি নির্মাতা সংগীত শিবান০৮ মে ২০২৪

জানা গেছে, বিক্রম তাঁর পরবর্তী ছবি ‘থেরুম পরুম’-এর কাজ শেষ করে ফেলেছিলেন। পাহাড় আর পর্বতারোহণ নিয়ে তৈরি এই ছবিটি তাঁর আগের কাজগুলোর তুলনায় একেবারে ভিন্ন ঘরানার।
বর্তমানে তাঁর মরদেহ চেন্নাই আনা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ