যমুনা সেতু-ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে এলেঙ্গা থেকে সেতুর পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার অংশ চার লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে দীর্ঘদিন। আব্দুল মোনেম লিমিটেড নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায় ২০১৬ সালে। নানান জটিলতায় ২০২১ সালে নির্মাণ শুরু হয়। এর পর চার বছরে মাত্র ৪০ শতাংশ কাজ হয়েছে বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন। এতে এবারও ঈদে ঘরমুখী মানুষ ভোগান্তির শিকার হবেন বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।
অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে ধীরগতিতে চলছে নির্মাণকাজ। এতে আগের কয়েকটি ঈদেও মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। পরিবহন সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য, এবার ঈদের দুই দিন আগে ছুটি হবে পোশাক কারখানা। সে সময় যানবাহনের চাপ বাড়বে। এতে সৃষ্টি হবে যানজটের। যদিও ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে বলে প্রশাসনের লোকজন আশ্বাস দিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, অসমাপ্ত সার্ভিস লেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। দুটি গাড়ি এ লেন দিয়ে পাশাপাশি চলতে পারবে। যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তে যানবাহন ও বাইকের জন্য আলাদা বুথ তৈরি করা হচ্ছে। রংপুরগামী হানিফ পরিবহনের চালক কাজী নাসির বলেন, ঈদের দু-এক দিন আগে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়। এবার ঈদের দু’দিন আগে ছুটি হবে, যাত্রীর চাপ বাড়বে। এতে যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশ ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করলে ভোগান্তি হবে না।
যমুনা সেতু চালুর পর মহাসড়কটি দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের অন্তত ২২টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে সড়কটিতে। ঈদের ছুটিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪০ থেকে ৫০ হাজারে। এত গাড়ির চাপে টোল প্লাজা মাঝেমধ্যে বন্ধ রাখতে হয়। ফিটনেসবিহীন ও লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়লে যানজট দীর্ঘ হয়।
এলেঙ্গা থেকে যমুনা সেতুর পূর্ব প্রান্তের গোলচত্বর পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটারে সড়ক বিভাজক বা ডিভাইডার নেই। চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন সুবিধা থাকায় গাড়ি দ্রুত আসে। এর পর গতি কমে যায়, গাড়ি চলে দুই লেনে। এতে ঈদের সময় পূর্ব প্রান্তে দীর্ঘ যানজট দেখা দিলে এ অংশে যাত্রী ও চালকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ফোর লেন না হলেও এলেঙ্গা থেকে পূর্বপ্রান্ত পর্যন্ত ডাবল সার্ভিস লেনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্প পরিচালক ওয়ালিউর রহমানের ভাষ্য, ২০১৬ সালে প্রকল্প হাতে নিলেও মাটি ভরাটের কিছু সমস্যা থাকায় কিছু জায়গায় কাজ করতে সমস্যা হয়েছে। সেসব সমস্যা কাটিয়ে কাজ চলছে। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শেষ করা যাবে বলে আশা তাঁর।
জানা গেছে, মূল সড়কের কাজ শেষ না হলেও ডাবল সার্ভিস লেন দিয়ে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। আর পুরোনো সড়ক দিয়ে ঢাকার দিকে গরুবাহী ট্রাক চলবে। সার্ভিস লেন দিয়ে উত্তবঙ্গের দিকে যাত্রীবাহী যানবাহন চলাচল করবে। এ সময়ে গাড়ি ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা সড়কে লক্কড়ঝক্কড় এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের করেন। এসব গাড়ি মহাসড়কে বিকল হলে উভয় পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। চালকের অদক্ষতা ও ওভারটেক করতে গিয়েও দুর্ঘটনা ঘটে।
দুটি কারণে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে বলে জানান টাঙ্গাইল ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন। প্রথমত, ঝড়বৃষ্টি হলে সড়কে গর্তের সৃষ্টি হয়ে গাড়ির গতি কমে গেলে যানজটের সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়ত, ঈদের আগে পুরোনো ফিটনেসবিহীন গাড়ি নামানোর প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এ সময় যাত্রীর অভাব থাকে না। এসব গাড়ি বিকল হলে যানজটের কারণে রেকার পাঠানো যায় না। এতে যাত্রীরা দুর্ভোগের শিকার হন।
ঈদযাত্রায় যমুনা সেতু দিয়ে সার্বক্ষণিক টোল চালু রাখার চেষ্টা করা হবে জানিয়ে সেতুর সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, দুই প্রান্তে ৯টি করে বুথ দিয়ে যানবাহন পারাপার হবে। এর মধ্যে মোটরসাইকেলের জন্য দুটি করে আলাদা বুথ থাকবে।
এ বিষয়ে জেলার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, মহাসড়কে থ্রি হুইলারসহ ফিটনেস ও রেজিস্ট্রেশনবিহীন যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। মহাসড়ক ও সেতুর ওপর কোনো যানবাহন বিকল হলে তাৎক্ষণিক পাঁচটি রেকারের মাধ্যমে অপসারণ করা হবে। যানজট নিরসনে মহাসড়ক চারটি সেক্টরে ভাগ করে ৬০০ পুলিশ মোতায়েন থাকবে। ঈদে ঘরমুখী মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে যাতায়াত করতে পারেন, তার সব ব্যবস্থা করা হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক প রকল প য নজট র এল ঙ গ ফ টন স

এছাড়াও পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এশিয়া কাপ-২০২৫ এর সুপার ফোরে জায়গা করে নিলো আনপ্রেডিক্টেবল পাকিস্তান। বুধবার দিবাগত রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের শেষ ম্যাচে স্বাগতিক আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে ভারতের সঙ্গী হলো সালমান-শাহীনরা।

দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আলো-ঝলমলে রাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভার পর্যন্ত টিকেছিল আমিরাত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় তাদের ইনিংস। সেই সুবাদে সহজ জয় নিয়ে শেষ চারে জায়গা নিশ্চিত করে পাকিস্তান।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

বেথেলের ইতিহাস গড়া দিনে ইংল্যান্ডের দাপুটে জয়

এই জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে শাহীন শাহ আফ্রিদি। বিপদের মুহূর্তে নামতে হয় তাকে ব্যাট হাতে। সেখানে ১৪ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কার ঝড়ে অপরাজিত ২৯ রানের ইনিংস খেলেন তিনি, যা পাকিস্তানের সংগ্রহকে দাঁড় করায় লড়াইযোগ্য অবস্থানে। শুধু ব্যাটেই নয়, বল হাতেও ছিলেন সমান কার্যকর। ৩ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচ করে তুলে নেন ২টি গুরুত্বপূর্ণ উইকেট। এমন সর্বাঙ্গীন পারফরম্যান্সে স্বাভাবিকভাবেই ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠে যায় তার ঝুলিতে।

তবু শুরুটা বেশ আশাব্যঞ্জক ছিল আমিরাতের। ১৩.৫ ওভার পর্যন্ত তারা প্রতিযোগিতায় টিকে ছিল দারুণভাবে। তিন উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করেছিল ৮৫ রান। কিন্তু এরপর যেন ধস নামে। মাত্র ২০ রানের ব্যবধানে বাকি সাত উইকেট হারিয়ে পুরো দল অলআউট হয়ে যায় ১০৫ রানে। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৩৫ রান করেন রাহুল চোপড়া, যার ইনিংসে ছিল ১টি চার ও ১টি ছক্কা। ধ্রুব পারাশার যোগ করেন ২০, মুহাম্মদ ওয়াসিম ১৪ এবং আলিশান শারাফু করেন ১২ রান।

পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে শাহীনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দুটি করে উইকেট নেন হারিস রউফ ও আবরার আহমেদ।

এর আগে ব্যাট হাতে পাকিস্তানও ভুগেছে। চারজন ছাড়া কেউ দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। ফখর জামান খেলেন ৩৬ বলে ৫০ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস, যেখানে ছিল ২টি চার ও ৩টি ছক্কা। শাহীন আফ্রিদির অপরাজিত ২৯ রান ছাড়া অধিনায়ক সালমান আলি আগা ২০ এবং মোহাম্মদ হারিস যোগ করেন ১৮ রান।

আমিরাতের হয়ে দুর্দান্ত বোলিং করেন জুনায়েদ সিদ্দিকী। তিনি ৪ ওভারে মাত্র ১৮ রান দিয়ে তুলে নেন ৪টি উইকেট। সিমরানজিত সিংয়ের বোলিং ফিগারও কম চমকপ্রদ নয়, ৪ ওভারে ২৬ রান খরচ করে শিকার করেন ৩ উইকেট।

এই জয়ে পাকিস্তান-ভারত দ্বৈরথের আরেকটি অধ্যায় লেখার সুযোগ তৈরি হলো। শুধু তাই নয়, ভাগ্য যদি সহায় হয়, তবে দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ফাইনাল লড়াইও দেখা যেতে পারে এবারের এশিয়া কাপে।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ