যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ম্যাথু মিলার বলেছেন, ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে—এ নিয়ে তাঁর মনে কোনো সন্দেহ নেই।

স্কাই নিউজের এক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক এই মুখপাত্র। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার ‘ট্রাম্প ১০০’ শীর্ষক পডকাস্ট সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়। সাক্ষাৎকারে বাইডেন প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ, টানাপোড়েন ও নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কথা বলেন মিলার।

২০২৩ সাল থেকে বাইডেনের মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র হিসেবে মিলার দায়িত্ব পালন করেন। নিয়মিত ব্রিফিংয়ে তাঁর কাজ ছিল ইউক্রেন থেকে শুরু করে গাজাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্ত ব্যাখ্যা করা ও প্রশাসনের অবস্থান তুলে ধরা।

আরও পড়ুন৯ সন্তানের পর এবার স্বামীকেও হারালেন গাজার সেই চিকিৎসক২০ ঘণ্টা আগে

গাজায় গণহত্যার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে মিলার বলেন, ‘আমি মনে করি না এটা গণহত্যা। কিন্তু ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে—এ বিষয়ে আমার কোনো সন্দেহ নেই।’

সরকারে থাকাকালে কেন এ কথা বলেননি—এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সাবেক এই মুখপাত্র বলেন, ‘যখন আপনি মঞ্চে (সরকারি মুখপাত্র হিসেবে) থাকেন, তখন আপনি ব্যক্তিগত মতামত প্রকাশ করেন না। আপনি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সিদ্ধান্ত তুলে ধরেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্র সরকার এই সিদ্ধান্তে আসেনি যে তারা (ইসরায়েল) যুদ্ধাপরাধ করেছে। এখনো সে সিদ্ধান্তে আসেনি।’

নিজের বক্তব্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মিলার বলেন, যুদ্ধাপরাধ নিয়ে দুটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। একটি হলো যদি কোনো রাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে যুদ্ধাপরাধের নীতি অনুসরণ করে; কিংবা এমনভাবে বেপরোয়া আচরণ করে, যা যুদ্ধাপরাধকে সহায়তা ও প্ররোচনা দেয়। তখন প্রশ্ন ওঠে, রাষ্ট্র নিজেই কি যুদ্ধাপরাধ করছে?

আরও পড়ুনরাফায় ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলের হামলায় নিহত ৩০০১ জুন ২০২৫

সাবেক বাইডেন প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ এই কর্মকর্তা বলেন, তিনি মনে করেন, কিছু নির্দিষ্ট ঘটনায় যুদ্ধাপরাধ হয়েছে। ইসরায়েলি সেনা ও ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সদস্যরা এই যুদ্ধাপরাধ করেছেন।

গাজানীতি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মিলার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্ক নিয়ে প্রশাসনের ভেতরে ‘ছোট-বড়’ মতবিরোধ ছিল।

মিলার বলেন, নীতি কীভাবে পরিচালনা করা হবে, তা নিয়ে শুরু থেকেই মতবিরোধ ছিল। কিছু ছিল বড় ধরনের মতবিরোধ, কিছু ছোট।

তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন গাজা ও ইউক্রেননীতির বিষয়ে বাইডেনের ওপর বিরক্ত ছিলেন—এমন গুজব নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মিলার সেই টানাপোড়েনেরও ইঙ্গিত দেন।

আরও পড়ুনপ্রতি ২০ মিনিটে গাজায় একটি শিশু নিহত বা আহত হচ্ছে: জাতিসংঘ৩১ মে ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম র ক ন পরর ষ ট র য ক তর ষ ট র ম ল র বল ন ইসর য় ল মতব র ধ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।

এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।

সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’

অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি‌ বরাবর অভিযোগ করেন।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ