ঈদযাত্রায় স্বস্তি ফেরাতে হার্ডলাইনে সরকার
Published: 3rd, June 2025 GMT
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা সামনে রেখে দেশের লাখো মানুষের স্বজনের কাছে ফেরার যাত্রা স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ করতে সরকার নিয়েছে একাধিক সমন্বিত উদ্যোগ। যানজট, অতিরিক্ত ভাড়া, ফিটনেসবিহীন যান চলাচল, অবৈধ পশুর হাট দীর্ঘদিনের এসব সমস্যা মোকাবিলায় এবার পরিকল্পনা যেমন বিস্তৃত, তেমনি নজরদারিও হচ্ছে জোরদার।
ছয় দিন বন্ধ থাকবে পণ্যবাহী যান
ঈদের চাপ সামাল দিতে ৪, ৫, ৬ জুন এবং ১২, ১৩, ১৪ জুন এই ছয় দিন প্রধান মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে গরুবাহী ও জরুরি পণ্য পরিবহনের যানবাহন এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।
রেলপথ ও সড়ক পরিবহনবিষয়ক উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘‘জনগণ যেন নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরতে পারে, সেই লক্ষ্যেই এসব ব্যবস্থা। বিআরটিএ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও মোবাইল কোর্ট মাঠে থাকবে কার্যকর তদারকিতে।’’
১৫৫টি যানজটপ্রবণ পয়েন্টে বাড়তি নজরদারি
বিভিন্ন মহাসড়কে যানজট এড়াতে চিহ্নিত করা হয়েছে ১৫৫টি যানজটপ্রবণ এলাকা। এর মধ্যে
ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ৪৮টি, ঢাকা-উত্তরবঙ্গ মহাসড়কে ৫২টি, ঢাকা-পাটুরিয়া-আরিচা রুটে ৮টি, ঢাকা-ময়মনসিংহে ৬টি, ঢাকা-সিলেটে ৪১টি।
প্রধান স্পটগুলোর মধ্যে রয়েছে : কাঁচপুর, চন্দ্রা মোড়, বাইপাইল, হাটিকুমরুল, যমুনা সেতু, শায়েস্তাগঞ্জ ও পায়রা সেতু।
হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘‘যানজটপ্রবণ এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত ফোর্স মোতায়েন থাকবে। ট্রাফিক ম্যানেজমেন্টে প্রযুক্তি ব্যবহার ও সমন্বিত টিম মাঠে কাজ করবে। গরুবাহী ট্রাক যেন নির্দিষ্ট জায়গায় পার্ক হয়, সেটিও নিশ্চিত করা হবে।’’
বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি (ট্রাফিক) মো.
মোবাইল কোর্ট ও ভাড়া নিয়ন্ত্রণে কঠোরতা
ঢাকার গাবতলী, মহাখালী, সায়েদাবাদ ও ফুলবাড়িয়া টার্মিনালসহ দেশের প্রধান বাসস্ট্যান্ডগুলোতে মোবাইল কোর্ট মোতায়েন থাকবে। অতিরিক্ত ভাড়া, চাঁদাবাজি ও রুট পারমিট ছাড়া চলাচল করা যানবাহনের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টিটিপাড়া আন্ডারপাস খুলছে ঈদের আগেই
রাজধানীর যানজট নিরসনে একটি বড় অগ্রগতি হচ্ছে টিটিপাড়া আন্ডারপাসের উদ্বোধন। ঈদের আগেই এটি খুলে দেওয়া হবে। গত ৩০মে’র পর শহরের সব খোঁড়াখুঁড়ির কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
কোরবানির হাটে শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণ
মহাসড়কের পাশ ঘেঁষে গড়ে ওঠা অস্থায়ী পশুর হাট যানজটের অন্যতম উৎস। এবারের ঈদে মহাসড়ক লাগোয়া ২১৭টি অস্থায়ী পশুর হাট বসবে, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি চট্টগ্রামে ৩০টি।
প্রশাসনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে হাট প্রবেশপথ যেন মূল সড়কের বিপরীতে থাকে এবং গরুবাহী ট্রাকগুলো যেন বাম পাশে নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়ায়। স্থানীয় পুলিশ ও সিটি করপোরেশন টিমকে এসব নিয়ম বাস্তবায়নে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে।
টোল আদায়ে ইটিসি
পদ্মা, যমুনা, কর্ণফুলী, মেঘনা ও গোমতীসহ দেশের প্রধান সেতুগুলোতে ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) বুথ চালু থাকবে ২৪ ঘণ্টা। এতে টোল আদায়ে সময় সাশ্রয় হবে এবং সেতুর মুখে যানজট কমবে বলে আশা করছে সড়ক বিভাগ।
মহাসড়কে তিন চাকার যানকে নিষিদ্ধ
ঈদযাত্রায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মহাসড়কে ইজিবাইক, নসিমন, করিমনসহ তিন চাকার যান চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একই সঙ্গে রাস্তার পাশে গড়ে ওঠা অস্থায়ী দোকান ও হাট দ্রুত সরিয়ে নিতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে বলা হয়েছে।
সড়ক সংস্কার ও গতি নিয়ন্ত্রণ
গত ৩০ মে জাতীয় ও সিটি সড়কের সংস্কারকাজ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে ‘মোটরযান গতিসীমা নির্দেশিকা ২০২৪’, যা দুর্ঘটনা হ্রাসে কার্যকর ভূমিকা রাখবে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলকার বাসিন্দা আজাদুর রহমান বলেন, ‘‘গত কয়েক বছরে ঈদের সময় রাস্তায় আটকে থেকে নাকাল হয়েছি। তবে এবার প্রস্তুতির পরিধি দেখে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি।’’
তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শুধু পরিকল্পনা নয়, এর কার্যকর বাস্তবায়ন ও সময়োপযোগী সমন্বয়ই এবারের ঈদযাত্রাকে সত্যিকার অর্থে স্বস্তিদায়ক করতে পারে।
ঢাকা/টিপু
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সমন ব য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার আহ্বান জাতিসংঘ মহাসচিবের
সাংবাদিকদের কাজের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশ্বের সব দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের আন্তর্জাতিক দিবস উপলক্ষে তিনি এ আহ্বান জানান। বিশ্বব্যাপী ২ নভেম্বর দিবসটি পালিত হয়।
জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত মহাসচিবের বিবৃতিতে বলা হয়, সত্যের সন্ধানে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীরা ক্রমবর্ধমান বিপদের মুখে পড়ছেন। এর মধ্যে রয়েছে মৌখিক নিপীড়ন, আইনি হুমকি, শারীরিক আক্রমণ, কারাবাস ও নির্যাতন। এমনকি অনেককে জীবনও দিতে হচ্ছে।
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারহীনতা বন্ধের এই আন্তর্জাতিক দিবসে আমরা ন্যায়বিচারের দাবি জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে সাংবাদিক হত্যার প্রায় ১০টি ঘটনার মধ্যে ৯টির বিচারই এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।’
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, ‘বর্তমানে যেকোনো সংঘাতের মধ্যে (ফিলিস্তিনের) গাজা সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে ভয়াবহ জায়গায় পরিণত হয়েছে। আমি আবারও এই ঘটনাগুলোর স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানাচ্ছি।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যেকোনো জায়গায় বিচারহীনতা শুধু ভুক্তভোগী এবং তাঁদের পরিবারের প্রতিই অন্যায় নয়, বরং এটি সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর আক্রমণ, আরও সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার শামিল এবং গণতন্ত্রের প্রতি হুমকি।’ তিনি বলেন, সব সরকারের উচিত প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করা, প্রত্যেক অপরাধীর বিচার করা এবং সাংবাদিকেরা যাতে সর্বত্র স্বাধীনভাবে তাঁদের কাজ করতে পারেন, তা নিশ্চিত করা।’
জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ‘নারী সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে অনলাইনে উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে থাকা হয়রানিমূলক আচরণ অবশ্যই আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। এ ধরনের অপরাধের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাজা হয় না এবং এটি প্রায়শই বাস্তব জীবনে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যাঁরা সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত, তাঁদের জন্য ডিজিটাল দুনিয়াকে নিরাপদ রাখতে হবে।’
আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘যখন সাংবাদিকদের কণ্ঠ রুদ্ধ হয়, তখন আমরা সবাই আমাদের কণ্ঠস্বর হারাই। আসুন, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায়, জবাবদিহি নিশ্চিত করার দাবিতে এবং যাঁরা ক্ষমতার বিপরীতে সত্য তুলে ধরেন, তাঁরা যেন ভয় ছাড়াই তা করতে পারেন তা নিশ্চিত করতে আমরা সম্মিলিত অবস্থান নিই।’