খুবির ক্যাফেটেরিয়া: ভাব-আবেগে মেশানো বন্ধুত্বের গল্প
Published: 3rd, June 2025 GMT
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) যখন দুপুরের ক্লান্তি ধীরে ধীরে ভর করে, তখন একটিই জায়গা প্রাণ ফিরে পায়; সেটা ক্যাফেটেরিয়া। এটি শুধু খাওয়াদাওয়ার জায়গা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এটি। এখানে ভাব বিনিময়, আবেগ প্রকাশ আর নতুন বন্ধুত্বের সূচনা হয় প্রতিদিন।
শীতের জড়তা বা আগুনঝরা সূর্যের তাপ হোক কিংবা বৃষ্টির নরম পরশ, খুবির ক্যাফেটেরিয়ায় আড্ডা কিন্তু থেমে থাকে না কখনো। দুপুর হতে না হতেই দেখা যায় শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে ভিড় করছে পরিচিত বেঞ্চগুলোতে। হাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ, মুখে হাসির রেখা আর মনে নানা ভাবনা।
কেউ আলোচনা করছে ক্যাম্পাস বা দেশের চলমান ঘটনা নিয়ে, কেউ ভাবছে সাহিত্য কিংবা সিনেমা নিয়ে, কেউ আবার ক্লাসে শেখা বিষয়গুলো বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছে।
আরো পড়ুন:
নোবিপ্রবির মেডিকেল সেন্টারে যন্ত্র আছে, সেবা নেই
হলের নাম নয়, মানে পরিবর্তন চান সিকৃবি শিক্ষার্থীরা
এই আড্ডাগুলোতে শুধু সময়ই কাটে না, তৈরি হয় নতুন নতুন ভাবনা, শুরু হয় সৃজনশীল কাজের পরিকল্পনা। সাংস্কৃতিক সংগঠন, নাট্যদল, বিতর্ক ক্লাব সবকিছুর প্রাথমিক প্রস্তুতিই হয় এখান থেকেই। কেউ কবিতা আবৃত্তির অনুশীলন করে, কেউ নাটকের স্ক্রিপ্ট নিয়ে পর্যালোচনা ব্যস্ত, কেউবা বিতর্কের প্রস্তাবনা তৈরি করে এক কাপ চায়েই।
মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুহিন রুমি বলেন, “ক্যাফেটেরিয়ায় কাটানো সময়গুলো চায়ের ধোঁয়ার সঙ্গে স্মৃতিতে জমে থাকে। ক্লাব বা প্রজেক্টের পরিকল্পনাও আমরা এখানে বসেই করি।”
নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে ক্যাফেটেরিয়া মানে শুধু খাওয়ার জায়গা নয়, এটি হয়ে ওঠে মানসিক শান্তি খোঁজার ঠাঁই। এখানে অপরিচিত মুখগুলোও ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে আপন। তৈরি হয় বন্ধুত্ব, ভাগাভাগি হয় ভাবনা আর স্বপ্ন।
এই আড্ডাগুলো শুধু দুপুরেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ক্লাস শেষের পর বিকেল, সন্ধ্যা এমনকি রাত পর্যন্তও ক্যাফেটেরিয়ার নির্দিষ্ট কিছু টেবিলে আলোচনা, গান, কবিতা, রিহার্সাল বা পরিকল্পনা চলতেই থাকে। সন্ধ্যার পর যখন পুরো ক্যাম্পাস ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হয়ে আসে, তখনো ক্যাফেটেরিয়ায় চিন্তার আলো জ্বলে। আলাপচারিতা এগোয় গল্প থেকে দার্শনিক ভাবনায় বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে সামাজিক বিশ্লেষণে।
তবে শিক্ষার্থীদের মতে, জায়গার স্বল্পতা, অতিরিক্ত ভিড় কিংবা কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ না পাওয়ার মতো কিছু সীমাবদ্ধতা মাঝেমধ্যে এ প্রাণবন্ত পরিবেশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবুও শিক্ষার্থীরা ফিরে আসে ভালোবাসার এই জায়গায়। কারণ এখানেই তারা খুঁজে পায় তাদের চিন্তার পরিসর, সম্পর্কের উষ্ণতা আর সৃজনশীলতার অনুপ্রেরণা।
এখানে সময়ের কোনো বাঁধন নেই। কেউ ক্লান্ত মন নিয়ে আসে, কেউ বিভ্রান্ত, কেউবা নিঃশব্দে একটু শান্তি খোঁজে। আর এখান থেকেই কেউ ফিরে যায় নতুন কবিতার খোঁজে, কেউ যুক্তির রসদ নিয়ে, কেউবা জীবনের মানে খুঁজে নেওয়ার সাহস নিয়ে।
চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ আহমেদ বলেন, “আগে ভাবতাম এটা শুধু খাওয়ার জায়গা। এখন বুঝি, এটা চিন্তা আর শেখার জায়গাও। এখান থেকেই শিখছি কিভাবে আলোচনা করতে হয়, অন্যের মতকে সম্মান জানাতে হয়, আর দলবদ্ধভাবে কাজ করতে হয়।”
তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ সাকিব বলেন, “আমরা প্রতিদিন ক্লাস শেষে এখানে জড়ো হই। কেউ গান গায়, কেউ কবিতা পড়ে। আড্ডা শুধু আনন্দ নয়, অনেক সময় আমরা সমাজের নানা বিষয় নিয়েও আলোচনা করি।”
খুবির ক্যাফেটেরিয়া তাই কেবল একটি জায়গা নয়—এটি একটি অনুভবের নাম, যেখানে তৈরি হয় স্মৃতির পাতাগুলো, গড়ে ওঠে ভাবনার আলো আর রঙিন ছাত্রজীবনের জীবন্ত ক্যানভাস।
ঢাকা/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
৫ দফা দাবিতে জামায়াতের বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু
আগামী ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ ৫ দফা দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর পূর্বঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটকে এই সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল। দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে।
জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হবে। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
এর আগে গত ১৫ সেপ্টেম্বর জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন আল ফালাহ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৫ দফা দাবিতে তিনদিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে দলটি।
জামায়াতের দাবিগুলো হলো- জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে সংসদের উভয় কক্ষে পিআর পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
একই দাবিতে আগামীকাল ১৯ সেপ্টেম্বর দেশের সব বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ মিছিল এবং ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের সব জেলা বা উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামী।