খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে (খুবি) যখন দুপুরের ক্লান্তি ধীরে ধীরে ভর করে, তখন একটিই জায়গা প্রাণ ফিরে পায়; সেটা ক্যাফেটেরিয়া। এটি শুধু খাওয়াদাওয়ার জায়গা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এটি। এখানে ভাব বিনিময়, আবেগ প্রকাশ আর নতুন বন্ধুত্বের সূচনা হয় প্রতিদিন।

শীতের জড়তা বা আগুনঝরা সূর্যের তাপ হোক কিংবা বৃষ্টির নরম পরশ, খুবির ক্যাফেটেরিয়ায় আড্ডা কিন্তু থেমে থাকে না কখনো। দুপুর হতে না হতেই দেখা যায় শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট দলে ভিড় করছে পরিচিত বেঞ্চগুলোতে। হাতে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপ, মুখে হাসির রেখা আর মনে নানা ভাবনা।

কেউ আলোচনা করছে ক্যাম্পাস বা দেশের চলমান ঘটনা নিয়ে, কেউ ভাবছে সাহিত্য কিংবা সিনেমা নিয়ে, কেউ আবার ক্লাসে শেখা বিষয়গুলো বাস্তব জীবনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছে।

আরো পড়ুন:

নোবিপ্রবির মেডিকেল সেন্টারে যন্ত্র আছে, সেবা নেই

হলের নাম নয়, মানে পরিবর্তন চান সিকৃবি শিক্ষার্থীরা

এই আড্ডাগুলোতে শুধু সময়ই কাটে না, তৈরি হয় নতুন নতুন ভাবনা, শুরু হয় সৃজনশীল কাজের পরিকল্পনা। সাংস্কৃতিক সংগঠন, নাট্যদল, বিতর্ক ক্লাব সবকিছুর প্রাথমিক প্রস্তুতিই হয় এখান থেকেই। কেউ কবিতা আবৃত্তির অনুশীলন করে, কেউ নাটকের স্ক্রিপ্ট নিয়ে পর্যালোচনা ব্যস্ত, কেউবা বিতর্কের প্রস্তাবনা তৈরি করে এক কাপ চায়েই।

মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রুহিন রুমি বলেন, “ক্যাফেটেরিয়ায় কাটানো সময়গুলো চায়ের ধোঁয়ার সঙ্গে স্মৃতিতে জমে থাকে। ক্লাব বা প্রজেক্টের পরিকল্পনাও আমরা এখানে বসেই করি।”

নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের কাছে ক্যাফেটেরিয়া মানে শুধু খাওয়ার জায়গা নয়, এটি হয়ে ওঠে মানসিক শান্তি খোঁজার ঠাঁই। এখানে অপরিচিত মুখগুলোও ধীরে ধীরে হয়ে ওঠে আপন। তৈরি হয় বন্ধুত্ব, ভাগাভাগি হয় ভাবনা আর স্বপ্ন।

এই আড্ডাগুলো শুধু দুপুরেই সীমাবদ্ধ থাকে না। ক্লাস শেষের পর বিকেল, সন্ধ্যা এমনকি রাত পর্যন্তও ক্যাফেটেরিয়ার নির্দিষ্ট কিছু টেবিলে আলোচনা, গান, কবিতা, রিহার্সাল বা পরিকল্পনা চলতেই থাকে। সন্ধ্যার পর যখন পুরো ক্যাম্পাস ধীরে ধীরে নিস্তব্ধ হয়ে আসে, তখনো ক্যাফেটেরিয়ায় চিন্তার আলো জ্বলে। আলাপচারিতা এগোয় গল্প থেকে দার্শনিক ভাবনায় বা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে সামাজিক বিশ্লেষণে।

তবে শিক্ষার্থীদের মতে, জায়গার স্বল্পতা, অতিরিক্ত ভিড় কিংবা কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ না পাওয়ার মতো কিছু সীমাবদ্ধতা মাঝেমধ্যে এ প্রাণবন্ত পরিবেশে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তবুও শিক্ষার্থীরা ফিরে আসে ভালোবাসার এই জায়গায়। কারণ এখানেই তারা খুঁজে পায় তাদের চিন্তার পরিসর, সম্পর্কের উষ্ণতা আর সৃজনশীলতার অনুপ্রেরণা।

এখানে সময়ের কোনো বাঁধন নেই। কেউ ক্লান্ত মন নিয়ে আসে, কেউ বিভ্রান্ত, কেউবা নিঃশব্দে একটু শান্তি খোঁজে। আর এখান থেকেই কেউ ফিরে যায় নতুন কবিতার খোঁজে, কেউ যুক্তির রসদ নিয়ে, কেউবা জীবনের মানে খুঁজে নেওয়ার সাহস নিয়ে।

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী খালিদ আহমেদ বলেন, “আগে ভাবতাম এটা শুধু খাওয়ার জায়গা। এখন বুঝি, এটা চিন্তা আর শেখার জায়গাও। এখান থেকেই শিখছি কিভাবে আলোচনা করতে হয়, অন্যের মতকে সম্মান জানাতে হয়, আর দলবদ্ধভাবে কাজ করতে হয়।”

তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী হাবিবুল্লাহ সাকিব বলেন, “আমরা প্রতিদিন ক্লাস শেষে এখানে জড়ো হই। কেউ গান গায়, কেউ কবিতা পড়ে। আড্ডা শুধু আনন্দ নয়, অনেক সময় আমরা সমাজের নানা বিষয় নিয়েও আলোচনা করি।”

খুবির ক্যাফেটেরিয়া তাই কেবল একটি জায়গা নয়—এটি একটি অনুভবের নাম, যেখানে তৈরি হয় স্মৃতির পাতাগুলো, গড়ে ওঠে ভাবনার আলো আর রঙিন ছাত্রজীবনের জীবন্ত ক্যানভাস।

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ বন র

এছাড়াও পড়ুন:

শনি গ্রহের একাধিক চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইডের সন্ধান

জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে শনি গ্রহের আটটি মাঝারি আকারের চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইড শনাক্ত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার বিজ্ঞানীরা। বর্তমানে মিমাস, এনসেলাডাস, ডায়োন, টেথিস, রিয়া, হাইপেরিয়ন, লাপেটাস ও ফিবি নামের চাঁদগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্যের পরিবর্তনের তথ্য টেলিস্কোপের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি চাঁদগুলোর ওপরে নিয়মিত নজরও রাখছেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, ডায়োন ও রিয়া চাঁদে থাকা কার্বন ডাই–অক্সাইড শনির প্রধান বলয়ের বরফের অনুরূপ। ফিবি চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইড জৈব পদার্থের বিকিরণের মাধ্যমে উৎপন্ন হয়ে থাকে। লাপেটাস ও হাইপেরিয়নের অন্ধকার অঞ্চলে কার্বন ডাই–অক্সাইড দেখা যায়। বরফযুক্ত এসব চাঁদে কার্বন ডাই–অক্সাইডের অবস্থা সম্পর্কে আরও জানতে আগ্রহী বিজ্ঞানীরা।

ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির বিজ্ঞানী মাইকেল ব্রাউন ও তাঁর সহকর্মীরা এক গবেষণাপত্রে লিখেছেন, কঠিন কার্বন ডাই–অক্সাইড সৌরজগতের প্রান্তসীমার বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায়। যদিও সেই অবস্থানে কার্বন ডাই–অক্সাইড স্থিতিশীল নয়। আমরা শনির উপগ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইডের অবস্থান জানার মাধ্যমে ভিন্ন পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করছি। বিভিন্ন গ্রহে কার্বন ডাই–অক্সাইড কীভাবে আটকে আছে, তা জানার সুযোগ আছে এখানে।

বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, শনির চাঁদে আটকে থাকা কার্বন ডাই–অক্সাইড থেকে আদর্শ ল্যাবের মতো তথ্য পাওয়া যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, শনি গ্রহের বিভিন্ন চাঁদে কমপক্ষে দুটি পৃথক উৎস থেকে কার্বন ডাই–অক্সাইড তৈরি হয়েছে।

সূত্র: এনডিটিভি

সম্পর্কিত নিবন্ধ