জাতীয় বাজেট বাস্তবায়নে অন্যতম বাধা দুর্নীতি
Published: 4th, June 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার অর্থবিষয়ক বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, দুর্নীতি বাংলাদেশকে গিলে ফেলছে। এমন কোনো খাত নেই, যেখানে দুর্নীতি নেই। ফলে বাজেট দেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে পড়ে।
মঙ্গলবার রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশ (অ্যামচেম) আয়োজিত বাজেট পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ।
আনিসুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকারের ঋণ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। ঋণ ছাড়া সরকার চলতে পারে না। ঋণ করা খারাপ না, বরং সরকারের ঋণ জনগণের জন্য সঞ্চয়ের মতো। তবে ঋণের টাকা যথাযথভাবে ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যস্ফীতি নিয়ে তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি খারাপ কিছু না। ইন্দোনেশিয়ায় যখন প্রবৃদ্ধি হয়েছিল, তখন তাদের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ১১ থেকে ১৩ শতাংশ। এটি আসলে রাজনৈতিক ইস্যু; রাজনৈতিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে। সুদহার বাড়িয়ে এটি কোথাও নিয়ন্ত্রণ করা যায়নি। বরং সুদের হার বাড়ালে ছোট-বড় সবাই আক্রান্ত হয়। মূল্যস্ফীতি কমাতে এ অস্ত্র খুব বেশি কাজ করে না।
সংস্কারের বিষয়ে আনিসুজ্জামান বলেন, ‘সংস্কার খুব কঠিন বিষয়। এর সঙ্গে অনেক তিক্ত রাজনীতি মিশ্রিত রয়েছে। আবার সংস্কারে নির্দিষ্ট কোনো টেক্সট বুক নাই। তাহলে কোন গতিতে যাব, সেটিও নির্দিষ্ট করা নাই। আবার দ্রুত করতে গেলে কলাপস হতে পারে।’
সেমিনারের মূল বক্তব্য পাঠ করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ। তিনি প্রস্তাবিত বাজেটের বেশ কয়েকটি লক্ষ্যকে ‘অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ বলে মন্তব্য করেন। বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ চাহিদা ঘাটতি, জ্বালানি সীমাবদ্ধতা এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগকে জিডিপির ২৪ দশমিক ৩ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রাকে ‘অতি উচ্চাকাঙ্ক্ষী’ মনে করেন তিনি। তবে বিনিয়োগের এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আমদানি, বৈদেশিক মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বড় ধরনের উন্নতি প্রয়োজন বলে মতামত দেন মাশরুর রিয়াজ। সেই সঙ্গে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রাকে ‘অসম্ভব’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। মাশরুর রিয়াজ বলেন, বাজেটে বাণিজ্য, আর্থিক সক্ষমতা এবং জনসেবা সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি স্পষ্ট সংস্কার রোডম্যাপের অভাব রয়েছে।
বিশ্বের ৩৯টি স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে শিক্ষা ব্যয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তৃতীয়-নিম্নতম স্থানে রয়েছে বলে জানান বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, সরকার সামাজিক অবকাঠামোর চেয়ে ভৌত অবকাঠামোকে অগ্রাধিকার দিয়ে চলেছে। প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে অপ্রতুল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ সময় তিনি দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির ওপর জোর দেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এক বছরে এযাবৎকালে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় চার লাখ কোটি টাকা। ফলে আগামী এক বছরে ৫ লাখ ৬০ হাজার কোটি রাজস্ব আদায় অসম্ভব।
আমেরিকান চেম্বার অব কমার্স ইন বাংলাদেশের সভাপতি সৈয়দ এরশাদ আহমেদ প্রস্তাবিত বাজেটে বেশ কয়েকটি ইতিবাচক পদক্ষেপ রয়েছে বলে মনে করেন। যার মধ্যে রয়েছে প্রণোদনা, কর নিয়ন্ত্রণ ও ব্যাংকিং খাতে কাঠামোগত সংস্কার।
শিল্পোন্নয়নে সংস্থা গঠন এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য ওয়ান-স্টপ পরিষেবার উন্নতিকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, শিল্প খাতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জোরদার করতে হবে। এ ছাড়া বিদ্যমান শুল্ক পদ্ধতির অদক্ষতা, নীতিমালার দুর্বল বাস্তবায়ন এবং দুর্বল অবকাঠামোর উন্নয়নেও জোর দেন তিনি।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রস ত ব ত ব জ ট র জন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
দাসত্বের সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে এসেছি: শিক্ষা উপদেষ্টা
শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, “বিগত ফ্যাসিস্ট রেজিম যে দাসত্বের সংস্কৃতি চালু করেছিল আমরা সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছি। আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে দেশ গড়ার কাজে নিয়োজিত থাকতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দলীয় লেজুরবৃত্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।”
বুধবার (৩০ জুলাই) সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (সিকৃবি) ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের লেভেল-১, সেমিস্টার-১ এ ভর্তিকৃত নবীণ শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “জুলাই ২৪ গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমরা জাতি হিসেবে পুনর্জন্ম লাভ করেছি। গত ১৭ বছর আমরা আমাদের নাগরিকত্ব সপে দিয়েছিলাম একটি ফ্যাসিবাদ সরকারের কাছে। যারা পার্শ্ববর্তী দেশের সঙ্গে দাসত্বের চুক্তি করেছিল। আমরা কখনো ভাবিনি এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব হবে।”
আরো পড়ুন:
কৃষি উপদেষ্টা-চীনা রাষ্ট্রদূত সাক্ষাৎ
আইএমও কাউন্সিল নির্বাচনে জিবুতির সমর্থন চাইল বাংলাদেশ
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “খুন, আয়নাঘর, বিচারহীনতার মধ্য দিয়ে চলছিল এই বাংলাদেশ। এর থেকে পরিত্রাণ তোমরাই দিয়েছো। ছাত্র-জনতার এই অর্জনকে ম্লান হতে দেওয়া যাবে না।”
“নতুন বাংলাদেশে তোমরা নিজেদেরকে আপন স্বকীয়তায় উপস্থাপন করবে, রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবে তা তোমরা নির্ধারন করবে। তোমাদের ধৈর্যশীল ও রুচিশীলতার পাশাপাশি উন্নত মনের বিবেকবান ও সুন্দর মনের মানুষের পরিচয় দিতে হবে”, যোগ করেন তিনি।
উপদেষ্টা বলেন, “পেশিশক্তির ব্যবহার রোধ করতে হবে। সহনশীলতা ও সহমর্মিতার সংস্কৃতি চালু করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে সহশিক্ষার কার্যক্রমে গুরুত্বারোপের পাশাপাশি সমাজে পিছিয়ে পরাদের এগিয়ে নিতে সহায়তা করতে হবে।”
ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, “নবীন শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা কার্যক্রমে নিজেদের সম্পৃক্ত করে মেলে ধরবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের গ্লোবাল নলেজ বাড়ানোর জন্য বিশ্ব আঙ্গিকে লাইব্রেরিকে উপযুক্ত করতে হবে, যা গবেষণার কাজকে আরো ত্বরান্বিত করবে।”
ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ সামিউল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিকৃবির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আলিমুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. এ.টি.এম. মাহবুব-ই-ইলাহী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন- ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মো. নজরুল ইসলাম, প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কাওছার হোসেন, প্রক্টর প্রফেসর ড. জসিম উদ্দিন আহাম্মদ, রেজিস্ট্রার (অ.দা) প্রফেসর ড. মো. আসাদ-উদ-দৌলা।
ঢাকা/নূর/মাসুদ