লাঙ্গলবন্দের স্নান: তীর্থ, ইতিহাস ও সংস্কৃতির মহামিলন
Published: 4th, June 2025 GMT
ঢাকা জেলার সোনারগাঁর নিকটবর্তী লাঙ্গলবন্দ, শতাব্দীজুড়ে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র তীর্থস্থান হিসেবে সুপরিচিত। চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষের অষ্টমী তিথিতে ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করলে জীবনের সব পাপ মোচন হয়—এমন বিশ্বাস লাখো তীর্থযাত্রীকে প্রতিবছর এই নদীর তীরে আহ্বান জানায়। এই অষ্টমী তিথিতে স্নান আয়োজন শুধু ধর্মীয় নয়, এটি একটি ব্যাপক সামাজিক-সাংস্কৃতিক উৎসবে রূপ নেয়, যেখানে ধর্ম, সংস্কৃতি ও মানুষের মিলন ঘটে। বিশেষত অষ্টমী তিথি যখন বুধবার ও পুনর্বসু নক্ষত্রের সঙ্গে মিলে যায়, তখন এই স্নানকে ধরা হয় আরও পুণ্যময়।
শ্রী প্রমথনাথ বসু রচিত ‘স্বামী বিবেকানন্দের জীবন-চরিত’ গ্রন্থে স্বামী বিবেকানন্দের লাঙ্গলবন্দে আগমনের উল্লেখ পাওয়া যায়। এই ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে বুধাষ্টমীর দিনে। এ ছাড়া ‘প্রেমবিলাস’ গ্রন্থে পাওয়া যায়, মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য বিক্রমপুরের নূরপুর থেকে সুবর্ণগ্রাম হয়ে লাঙ্গলবন্দে পৌঁছেছিলেন। এই যাত্রাপথে তাঁর আগমন লাঙ্গলবন্দের তীর্থ মাহাত্ম্যকে আরও গৌরবান্বিত করেছে। রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের ঘনিষ্ঠ শিষ্য বাবুরাম মহারাজ, যিনি পরে স্বামী প্রেমানন্দ নামে পরিচিত হন, তাঁর লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্রস্নানের একটি ঐতিহাসিক বর্ণনা পাওয়া যায় ব্রহ্মচারী অক্ষয়চৈতন্য রচিত ‘প্রেমানন্দ-প্রেমকথা’ গ্রন্থে। এ ঘটনা ঘটে ১৯১২ সালের ৪ এপ্রিল। ওই সময় তিনি লাঙ্গলবন্দে এসে ব্রহ্মপুত্র নদে পবিত্র স্নান করেন এবং তাঁর সঙ্গে ছিলেন বহু ভক্ত।
লাঙ্গলবন্দ উৎসবের সময় ঘাট (১৯০৬).উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ল ঙ গলবন দ
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।