ঝিনাইদহে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষে আহত আরেকজনের মৃত্যু
Published: 4th, June 2025 GMT
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে বিএনপির দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ইউনুছ আলী (৬২) নামের আরেক আহত কর্মী মারা গেছেন। আজ বুধবার সকালে যশোরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে ওই ঘটনায় দলটির দুই কর্মীর মৃত্যু হলো।
এর আগে গত রোববার (১ জুন) ওই সংঘর্ষে মহব্বত হোসেন নামের বিএনপির আরেক কর্মী নিহত হন। এ ঘটনায় নিহত দুজনই সহোদর। তাঁরা উপজেলার নাকোবাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা।
আরও পড়ুনঝিনাইদহে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ, একজন নিহত০১ জুন ২০২৫কালীগঞ্জ উপজেলার জামাল ইউনিয়ন বিএনপির নেতা-কর্মীরা দীর্ঘদিন দুই ভাগে বিভক্ত। এক পক্ষের নেতৃত্বে আছেন ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও অন্য পক্ষের নেতা ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মাহফুজুর রহমান। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গত ৫ আগস্টের পর ইউনিয়নটির চিহ্নিত আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বিএনপির এই দুপক্ষে ঢুকে পড়েন। তাঁরা দলে ঢুকে একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যক্রম ঘটাতে থাকেন। এর জেরে ১ জুন সকালে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুই ভাই মহব্বত ও ইউনুছ সহ সাতজন আহত হন। ঘটনার দিনই মহব্বতের মৃত্যু হয়।
মহব্বত আলীর মৃত্যুর পর গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এতে ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও কোলা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলামকে।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম হাওলাদার নিহত মহব্বত আলীর বড় ভাই ইউনুছ আলী মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ওই মামলায় আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ কাজ করছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
একাত্তরে প্রথম স্বাধীনতা অর্জনের পরে চব্বিশে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছি
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘১৯৭১ সালে প্রথম স্বাধীনতা অর্জনের পরে আমরা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছি। মানুষের ওপর মানুষের গোলামি খতম করে আল্লাহর গোলামি কায়েম করার জন্য আমাদের আবার তৃতীয়বার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। জাতীয় সংসদে আল্লাহর আইন পাস করতে হবে।’
আজ শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ‘জুলাই ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থান: প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারের আয়োজন করে জামায়াতে ইসলামী। সেখানে দলের নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান সভাপতিত্ব করেন।
মানুষের রচিত কোনো মতবাদ দিয়ে মানুষের মুক্তি আসবে না উল্লেখ করে মুজিবুর রহমান বলেন, ‘এ জন্য এ দেশে আল্লাহর আইন চালু করতে হবে। আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক সব ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মেনে চলতে হবে।’
সেমিনারে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেন, জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল আওয়ামী লীগ। কিন্তু আজকে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনীতি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, হাসিনার আমলে সংঘটিত সব হত্যার বিচার করতে হবে। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সবাইকে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
অনুষ্ঠানে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতার শহীদ ও আহত যাঁরা’ বইয়ের ইংরেজি ও আরবি সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন এবং শহীদদের স্মৃতি-তথ্যসংবলিত ওয়েবসাইটের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। জুলাই অভ্যুত্থানের শহীদ পরিবারের সদস্য, আহত জুলাই যোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতের এই সেমিনারে আরও কয়েকটি দলের নেতারাও বক্তব্য দেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন বলেন, ‘ইসলাম কায়েম করা ছাড়া লুটপাট, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি বন্ধ হবে না। দেশে দুর্নীতিমুক্ত সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচন চালু করতে হবে। তা না হলে ভোট ডাকাতি, কারচুপি, ঘুষ, দুর্নীতি বন্ধ হবে না।’
শহীদদের তালিকা করার জন্য জামায়াতকে ধন্যবাদ জানান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। এ সময় তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের শাসনামলে মুসলমানদের জঙ্গি হিসেবে অভিহিত করে তাঁদের ওপর জুলুম করা হয়েছে। বর্তমানে একটি দলের মহাসচিব বলেছেন, দেশে দক্ষিণপন্থার উদ্ভব হয়েছে। দক্ষিণপন্থার উদ্ভব হলে তাতে তাঁদের সমস্যা কী? দক্ষিণপন্থার ভয় দেখিয়ে আবার জুলুম-নির্যাতন চালানোর ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, দলের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির নূরুল ইসলাম বুলবুল ও মহানগরী উত্তরের আমির সেলিম উদ্দিন, গণ অধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান, দৈনিক সংগ্রামের সম্পাদক আযম মীর শাহীদুল আহসান, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা হাসিনুর রহমান, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এস এম ফরহাদ প্রমুখ এতে বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জামায়াত নেতা এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, শফিকুল ইসলাম মাসুদ ও রেজাউল করিম।