কর্মসূচি শিথিল করার ঘোষণা দেওয়ার পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মূল ভবনের প্রধান ফটকে এখনো তালা ঝুলছে। এ কারণে সেবা নিতে আসা লোকজন ফিরে যাচ্ছেন। কর্মকর্তারাও অফিসে আসেননি।

আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে গুলিস্তান এলাকায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে শপথ পড়ানোর দাবিতে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরদিন ১৫ মে করপোরেশনের সিংহভাগ কর্মচারীরাও এতে সংহতি জানিয়ে অংশ নেন। ওই দিনই নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়।

বিএনপির নেতা-কর্মী ও কর্মচারীদের কর্মসূচির কারণে ওই দিন থেকে জন্ম ও মৃত্যুনিবন্ধন–সংক্রান্ত কাজ, ওয়ারিশান সনদ, নতুন ট্রেড লাইসেন্স (ব্যবসার অনুমতিপত্র), ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন, কর জমাসহ সব ধরনের সেবা বন্ধ রয়েছে।

গতকাল মঙ্গলবার চলমান কর্মসূচিতে এসে ইশরাক হোসেন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘সামনে ঈদ। জনভোগান্তির কথা সামনে রেখে নগর ভবন অবরোধ বা ঘেরাওয়ের যে কর্মসূচি সেটাকে কিছুটা শিথিল ও বিরতি নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সরকার শপথের মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিলে ছুটির পর আরও কঠোর আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছিলেন ইশরাক।

ইশরাক হোসেনের এমন বক্তব্যের পর ধারণা করা হয়েছিল, ঈদের আগে আজ সরকারি অফিসগুলোর শেষ কর্মদিবসে হয়তো নগর ভবনেও স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে। কিন্তু বাস্তবে এখনো নগর ভবনে তালা ঝুলছে।

মগবাজার এলাকার বাসিন্দা আনোয়ারা বেগম ছেলের জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে দুপুরের দিকে এসেছিল নগর ভবনে। এর আগেও দুই দিন ঘুরে ফিরে গেছেন তিনি। আজও নগর ভবনের ফটকে তালা দেওয়ার কারণে তিনি সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের আন্দোলনের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসা উচিত।

করপোরেশনের অনেক কর্মকর্তাও আজ অফিস করতে নগর ভবনে এসেছিলেন। এমন অন্তত ছয়জন কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। তাঁদের মধ্যে একজন নির্বাহী প্রকৌশলী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল বলা হয়েছিল আজ অফিস খুলবে। কিন্তু সকালে গিয়ে দেখি ফটকে তালা দেওয়া। করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রশাসক আসেননি। পরে চলে এসেছি।’

এ নিয়ে করপোরেশনের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কর্মকর্তা মো.

জিল্লুর রহমানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেছে প্রথম আলো। তাঁর মুঠোফোন নম্বরে কল করলে তিনি ফোন ধরেননি। পরে প্রশ্ন লিখে খুদে বার্তা পাঠালেও কোনো জবাব দেননি তিনি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত নগর ভবন ভবন র ইশর ক

এছাড়াও পড়ুন:

টেকসই অর্থনীতি গড়ে তুলতে প্রধান উপদেষ্টার পাঁচ প্রস্তাব

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জনে আরও কার্যকর অর্থায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “চলুন আমরা এমন একটি মর্যাদা, সমৃদ্ধি ও স্থিতিশীলতার অর্থনীতি গড়ে তুলি, যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।”

এ বিষয়ে তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরে বলেন, এগুলো কার্যকর করলে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য, বৈষম্য ও আর্থিক অস্থিরতার সমস্যা সমাধান সম্ভব হবে। অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, “আমাদের ওপর নির্ভরশীল জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর শোনার জন্য প্রস্তুত হতে হবে। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”

বাসস লিখেছে, প্রধান উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ‘টেকসই, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রথম দ্বিবার্ষিক শীর্ষ সম্মেলন: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যে অর্থায়নের অঙ্গীকার বাস্তবায়ন’ শিরোনামের অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেওয়া তার জন্য গর্বের বিষয়, যেখানে সম্ভাবনা ও দায়িত্ব একসাথে রয়েছে। তিনি বলেন, চতুর্থ আন্তর্জাতিক অর্থায়ন সম্মেলনে নেওয়া অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনের জন্য বছরে চার ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি পূরণ করা চ্যালেঞ্জিং হলেও অপরিহার্য।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, "আমরা আমাদের ওপর নির্ভরশীল মানুষের কণ্ঠস্বর শোনার দায়িত্ব নিচ্ছি। বাংলাদেশে আমরা বিশ্বাস করি, দারিদ্র্য একজনের স্বপ্নের পথে বাধা হতে পারে না।”

তিনি বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ও সম্পদের ন্যায্য প্রবেশাধিকার হলো ন্যায়বিচারের মূল। একজন নারী যখন ব্যবসা শুরু করে, যুবসমাজ যখন সৌর শক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি পায়, বস্তিবাসী শিশু যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যায় এবং পুষ্টি ও স্বাস্থ্যসেবা পায়, তখন পরিবর্তন বাস্তব ও টেকসই হয়।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সেভিলে অঙ্গীকার একটি নতুন কাঠামো প্রদান করে, যা জোরদার করে দেশীয় সম্পদ উত্তোলন, অবৈধ অর্থ প্রবাহ প্রতিরোধ, উন্নয়ন ব্যাংকগুলোর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি নিশ্চিত করে।

তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকারের কথা তুলে ধরেন, যা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্থায়নকে শক্তিশালী করবে:

১. ন্যায্যভাবে দেশীয় সম্পদ উত্তোলনে আন্তর্জাতিক সহায়তার সমর্থন থাকা প্রয়োজন। কর ব্যবস্থা প্রগতিশীল, স্বচ্ছ ও বহুজাতিক করপোরেশনগুলোর ন্যায্য অংশ নিশ্চিত করতে হবে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক কর সহযোগিতা কাঠামোর আলোচনায় এই বৈষম্য দূর করতে হবে।

২. নবীন অর্থায়ন ও সামাজিক ব্যবসা যৌক্তিক অর্থায়ন এবং এমন উদ্যোগ যারা লাভ পুনরায় সমস্যার সমাধানে বিনিয়োগ করে, চাকরি, অন্তর্ভুক্তি ও মর্যাদা নিশ্চিত করে।

৩. বিশ্ব আর্থিক কাঠামো ও ঋণ শাসন সংস্কার; উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আরো শক্তিশালী কণ্ঠস্বর নিশ্চিত করতে হবে। ঋণকে কঠোরতা নয়, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের হাতিয়ারে রূপান্তর করতে হবে।

৪. স্বচ্ছতা, অবৈধ অর্থায়ন প্রতিরোধ ও নাগরিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা; জনগণ, বিশেষ করে যুবসমাজ, জানতে হবে কীভাবে সম্পদ ব্যবহার হচ্ছে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. সবচেয়ে দুর্বলদের জন্য বিনিয়োগের ত্বরান্বিতকরণ; স্থিতিশীল বাসস্থান, জলবায়ু-বান্ধব কৃষি, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা ও প্রকৃতি-ভিত্তিক সমাধান নিশ্চিত করতে হবে।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ