নিজেদের আর্থিক ও তহবিল পরিচালনার নীতিমালা তৈরি করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটির নেতারা বলছেন, তাঁরা বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আর্থিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিষয়টি নিশ্চিত করতে চান। ওয়েবসাইটে গিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অথবা সরাসরি রসিদ সংগ্রহ করে এনসিপিকে আর্থিক অনুদান দেওয়া যাবে। দলের কাউকে ব্যক্তিগতভাবে টাকা না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে এনসিপি।

এনসিপির আর্থিক নীতিমালা ঘোষণা ও ক্রাউড ফান্ডিং কার্যক্রম বিষয়ে জানাতে আজ বুধবার সন্ধ্যায় সংবাদ সম্মেলনে দলটির পক্ষ থেকে এ কথা বলা হয়। রাজধানীর বাংলামোটরে এনসিপির অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়। সেখানে দলের আর্থিক ও তহবিল পরিচালনা নীতিমালার সারাংশ উপস্থাপন করেন এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব ও কোষাধ্যক্ষ এস এম সাইফ মোস্তাফিজ। তিনি বলেন, কোনো কালো টাকা, অজানা উৎস, বিদেশি সরকার বা অপরাধসংশ্লিষ্ট অর্থ একেবারেই নিষিদ্ধ।

পরে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এনসিপির আহ্বায়ক মো.

নাহিদ ইসলাম, সদস্যসচিব আখতার হোসেন ও দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন ও আরিফুল ইসলাম আদীব, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা ও নাহিদা সারোয়ার নিভা, উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম প্রমুখ।

জুলাই আন্দোলন ক্রাউড ফান্ডিং বা গণচাঁদা থেকে পরিচালিত হয়েছিল উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, এনসিপি তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনাকে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থাপনার ওপর দাঁড় করাতে চাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এটাকে এখন ডিজিটাল একটা ফরম্যাটে নিয়ে আসার চেষ্টা করছি। ট্র্যাডিশনাল গণচাঁদা অব্যাহত থাকবে আর ডিজিটাল সিস্টেমে আমরা দেশ ও দেশের বাইরে থেকে একটা ফান্ডিং পাব।’

যাঁরা এনসিপিকে সাঁহায্য করতে চান, তাঁদের কেউ যেন ব্যক্তিগতভাবে কাউকে টাকা না দেন, সেই আহ্বানও জানান নাহিদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের ফাইন্যান্স টিম ও অ্যাকাউন্ট নম্বরের বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান বা কারও কাছে এনসিপি বা আমাদের ছাত্রদের নাম কেউ যদি ব্যবহার করেন, সেটিও আমাদের দপ্তরে, শৃঙ্খলা কমিটিকে জানালে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব। কারণ, অনেক জায়গায় আমাদের নাম ব্যবহার করে অনেক ধরনের অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আবার একই সঙ্গে আমরা মিডিয়া ট্রায়ালেরও শিকার হয়েছি।’

নাহিদ বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পেশিশক্তির ব্যবহার, চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি সবকিছুর মূলে অর্থ। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো তাদের আর্থিক বিষয় প্রকাশ করে না। দলগুলোয় আর্থিক স্বচ্ছতার বিষয়টি নিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে এটার জন্য কঠোর হতে হবে।

আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা হবে

সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেন, ওয়েবসাইটে (https://donate.ncpbd.org) গিয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে এনসিপির কেন্দ্রীয় তহবিলে দলের শুভাকাঙ্ক্ষী, সদস্য ও সাধারণ মানুষ অনুদান দিতে পারবেন। একই সঙ্গে সরাসরি এনসিপির কার্যালয়ে রসিদ সংগ্রহ করার মধ্য দিয়ে অনুদান দেওয়া যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে আখতার বলেন, এনসিপির সদস্যরা এককালীন ন্যূনতম পাঁচ হাজার টাকা ও তদূর্ধ্ব পরিমাণ টাকা দলকে দিয়েছেন। এই এককালীন চাঁদা, সদস্যদের মাসিক চাঁদা, সদস্য ফরম বিক্রি থেকে পাওয়া অর্থ, শুভাকাঙ্ক্ষীদের অনুদানের মধ্য দিয়ে দলের বর্তমান অস্থায়ী কার্যালয়ের ভাড়াসহ অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘যখন আমরা নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধনের জন্য যাব, তখন আমাদের পূর্ণাঙ্গ অডিট সেখানে প্রকাশ করব। একই সঙ্গে আমাদের আর্থিক নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট সময়ে অনুমোদিত অডিট ফার্মের মধ্য দিয়ে আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে। আমাদের ওয়েবসাইটেও সেটা পাওয়া যাবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, তিন মাস, ছয় মাস ও বার্ষিক ভিত্তিতে দলের আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষা করা হবে। তাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

কোষাধ্যক্ষ এস এম সাইফ মোস্তাফিজ লিখিত বক্তব্যে বলেন, দলের আর্থিক ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতার জন্য প্রতিটি অনুদানে স্বয়ংক্রিয় রসিদ, অনলাইন এন্ট্রি ও ইউনিক আইডি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাঁচ হাজার টাকার বেশি দানের ক্ষেত্রে দাতার পরিচয় গোপন রাখা হবে। তবে দলীয়ভাবে সেটা সংরক্ষণ করা হবে। প্রয়োজন হলে সেটা প্রকাশ করা হবে।

এনসিপির এই নেতা বলেন, ওয়েবসাইটের ড্যাশবোর্ডে সবাই লাইভ দেখতে পারবেন যে মোট কত টাকা অনুদান হচ্ছে এবং কোন জেলা থেকে কত টাকা আসছে। তিনি বলেন, এনসিপি ১০০ টাকা মূল্যের সদস্য ফরম বিক্রি করছে। ৭০ হাজার ফরম ইতিমধ্যে সারা দেশে চলে গেছে, আরও ৫০ হাজার ঈদুল আজহায় যাচ্ছে। এখান থেকে তাঁরা প্রায় দুই কোটি টাকা পাবেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদস যসচ ব দ র আর থ ক এনস প র ব যবস থ পর চ ল অন দ ন আম দ র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্বকাপে টিকিট পেল ১০ দেশ , বাকিরা আসবে কিভাবে

প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফুটবলে অংশ নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছে এশিয়ার দুটি দেশ জর্ডান আর উজবেকিস্তান। সেই সঙ্গে এগারোতম বারের মতো বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। এ নিয়ে এশিয়া থেকে মোট পাঁচটি দেশ আগামী বছরের বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে। 

আগামী বছর ১১ জুন থেকে ১৯ জুলাই যুক্তরাস্ট্র, কানাডা আর মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত হবে ফিফা বিশ্বকাপ। যেখানে প্রথমবারের মতো সর্বাধিক ৪৮ দল অংশগ্রহন করবে। যার মধ্যে এখনও পর্যন্ত ১০ টি দেশ তাদের বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করেছে। স্বাগতিক হিসাবে যুক্তরাস্ট্র, কানাডা আর মেক্সিকো এমনিতেই অংশগ্রহন করবে। বাকিদের মধ্যে জাপান, নিউজিল্যান্ড, ইরান, আর্জেন্টিনা, উজবেকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া ও জর্ডান যোগ্যতা অর্জন করেছে। এখন বাকি ৩৭ দলের ভাগ্য নির্ধারন। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক বিশ্বের কোন অঞ্চল থেকে কোন দেশ যেতে পারে আগামী বিশ্বকাপে।

লাতিন অঞ্চল: দক্ষিন আমেরিকার এই অঞ্চলের বাছাই পর্বের শীর্ষ ছয়টি দল বিশ্বকাপে যাবে। যেখান থেকে এরই মধ্যে আর্জেন্টিনা তাদের জায়গা নিশ্চিত করেছে। তালিকার সাত নম্বরে থাকা দলটি প্লে অফ খেলে শেষ একটি সুযোগ পাবে। এই মুহুর্তে লাতিন অঞ্চলের বাছাই পর্বের পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষ রয়েছে আর্জেন্টিনা, তারপর ইকুয়েডর, প্যারাগুয়ে, ব্রাজিল, উরুগুয়ে আর কলম্বিয়া। সাত নম্বর দল হিসাবে আছে ভেনিজুয়েলা। আঠারোটি ম্যাচের মধ্যে দল গুলোর আর তিনটি করে ম্যাচ বাকি।

এশিয়া অঞ্চল: এশিয়া থেকে বাছাই পর্ব খেলে আটটি দল বিশ্বকাপের টিকিট পাবে। বাকি একটি দল প্লে অফ খেলার সুযোগ পাবে। এরই মধ্যে এশিয়া থেকে বিশ্বকাপের টিকিট পেয়েছে জাপান, ইরান, উজবেকিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং জর্ডান। আর দুটি দল বাকি আছে বিশ্বকাপের যাওয়ার।

আফ্রিকা অঞ্চল: আফ্রিকা থেকে বাছাই পর্ব খেলে মোট নয়টি দল বিশ্বকাপে যাবে। বাকিট একটি দল প্লে অফের সুযোগ পাবে। এখনো পর্যন্ত এখান থেকে কোন দেশের বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত হয়নি। তবে মিশর, কঙ্গো, দক্ষিন আফ্রিকা, কেপ ভারডে, মরোক্কো, আইভরি কোস্ট, আলজেরিয়া, তিউনেশিয়া ও ঘানার নিজেদের গ্রুপে এগিয়ে রয়েছে।

সেন্ট্রাল, উত্তর আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চল: এই অঞ্চল থেকে মোট ছয়টি দেশ অংশগ্রহন করবে। যার মধ্যে স্বাগতিক হিসাবে যুক্তরাস্ট্র, কানাডা আর মেক্সিকো এরই মধ্যে অংশগ্রহন নিশ্চিত। 

ইউরোপ: এই অঞ্চল থেকে বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি ১৬ টি দেশ অংশগ্রহন করবে। যার মধ্যে বারোটি গ্রুপের শীর্ষ দলগুলো সুযোগ পাবে বিশ্বকাপে যাওয়ার। এখনো পর্যন্ত কোন দলেরই বিশ্বকাপ নিশ্চিত হয়নি। আগামী মার্চ পর্যন্ত চলবে বাছাই পর্ব।

প্রশান্ত মহাসাগরিয় অঞ্চল: দুটি দল যাবে এই অঞ্চল থেকে। যার একটি নিউজিল্যান্ড এরই মধ্যে টিকিট নিশ্চিত করেছে। বাকি দলটি প্লে অফ খেলে বিশ্বকাপে যাওয়ার সুযোগ পাবে। এই প্লে অফে মোট ছয়টি দল অংশগ্রহন করবে। যেখান থেকে মোট দুটি দলের ভাগ্যে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ মিলবে। এই ছয়টি দল আসবে আফ্রিকা, এশিয়া, দক্ষিন আমেরিকা, উত্তর আমেরিকা ও প্রশান্ত মহাসাগরিয় অঞ্চল থেকে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ