মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহা। ইসলামে যে পাঁচটি অবশ্যপালনীয় বিধান আছে, তার অন্যতম হজ। প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমানের জন্য হজ পালন করা ফরজ। এই হজের অনুষঙ্গ হিসেবেই কোরবানি দেওয়া হয়। প্রতিবছরের মতো এবারও লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলমান সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা নগরীর আরাফাত ময়দানে সমবেত হয়ে পবিত্র হজ পালন করবেন। বাংলাদেশ থেকে এবারও লক্ষাধিক মানুষ পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরবে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছেন।

ত্যাগের মধ্যেও যে আনন্দ আছে, সেটাই ঈদুল আজহার শিক্ষা। আল্লাহ তাআলা হজরত ইব্রাহিম (আ.

)-কে তাঁর প্রিয় বস্তু কোরবানি করার নির্দেশ দেন। এরপর হজরত ইব্রাহিম তাঁর প্রিয় পুত্র ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি দেওয়ার জন্য নিয়ে যান। এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহর প্রতি সর্বোচ্চ আনুগত্য প্রদর্শন করেন। এ সময় আল্লাহর নির্দেশে তিনি পুত্র ইসমাইলের বদলে সেখানে একটি দুম্বা কোরবানি দেন।

যাঁরা হজ পালন করছেন, শুধু তাঁরাই নন, এ ঘটনার অনুসরণে সারা বিশ্বের প্রত্যেক সামর্থ্যবান মুসলমান কোরবানি দিয়ে থাকেন। যাঁদের কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই, কোরবানির মাংসের ওপর তাঁদেরও হক আছে। এ কারণে ধনী মুসলমানরা পশু কোরবানি করে এর নির্দিষ্ট অংশ গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেন। এ মাংস বিতরণে কোনো দরিদ্র মানুষ যাতে বাদ না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখা উচিত।

সৌদি আরবসহ অনেক দেশে সুরক্ষিত নির্দিষ্ট স্থানের বাইরে কোরবানি দেওয়া যায় না। আমাদের দেশে এখনো সেই রীতি চালু করা যায়নি। এরপরও কোরবানির পশুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্যে যাতে পরিবেশ নষ্ট না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকতে হবে; এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারের অধীন প্রতিষ্ঠানগুলো কাজ করে থাকে; তাদের সহযোগিতা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। ঈদের সময় যে পশু কোরবানি হয়, তার বর্জ্য দ্রুত ধুয়েমুছে ফেলতে হবে। চামড়াও বেশি সময় ফেলে রাখা যাবে না। 

কোরবানির অর্থনৈতিক দিকটিও গুরুত্বপূর্ণ। কোরবানির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিও চাঙা হয়। দিনটি সামনে রেখেই কৃষক ও খামারিরা সারা বছর পশু পালন করেন, যাতে ভালো দাম পেতে পারেন। কয়েক বছর ধরে দেশে গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদির উৎপাদন বেড়েছে। ফলে এখন আর কোরবানির চাহিদা মেটাতে বিদেশি পশুর ওপর নির্ভর করতে হয় না। কোরবানির পশুর চামড়া দেশের চামড়াশিল্পের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। অতএব কোরবানির চামড়া সংরক্ষণের ওপরও আমাদের জোর দিতে হবে। অনেক ধর্মপ্রাণ মুসলমান কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রির অর্থ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করেন। চামড়ার দাম বেশি হলে মাদ্রাসাছাত্র ও এতিমখানার বাসিন্দারা উপকৃত হয়।

এবার যখন পবিত্র হজ পালিত হতে যাচ্ছে, তখন গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বর্বরোচিত গণহত্যা চালাচ্ছে। এমনকি দুর্ভিক্ষপীড়িত গাজায় যঁারা ত্রাণসামগ্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন, ইসরায়েলি বাহিনী তঁাদেরও গুলি করে হত্যা করেছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে সেখানে ৫৪ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যঁাদের বড় অংশ নারী ও শিশু। আমরা নিপীড়িত ও অসহায় ফিলিস্তিনি ভাইবোনদের প্রতি সহমর্মিতা ও সংহতি জানাই। এই যুদ্ধ অচিরেরই বন্ধ হোক, সেটিই আমরা কামনা করি।

ঈদুল আজহার মূল কথা হলো ত্যাগ। পশু কোরবানির মাধ্যমে মানুষের ভেতরে যে লোভ–লালসা আছে, তাকেও ত্যাগ করতে হবে। আদায় করতে হবে নিঃস্ব ও দরিদ্রদের হক।

আমাদের পাঠক, লেখক, গ্রাহক, হকার, বিজ্ঞাপনদাতা ও শুভানুধ্যায়ী—সবাইকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঈদ ল আজহ ক রব ন র ম সলম ন হজ প ল আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার শপথ ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা যোদ্ধাদের

বিজয়ের মাস ঢাকায় এক হলেন একাত্তরে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর যোদ্ধারা; তাঁরা শপথ নিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার।

আজ শনিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গেরিলা যোদ্ধাদের এই মিলনমেলায় এই বাহিনীর জীবিত সদস্যদের পাশাপাশি শহীদ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। দিনভর এই আয়োজন করে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়ন বিশেষ গেরিলা বাহিনী সমন্বয় কমিটি।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে আলাদা গেরিলা বাহিনী গঠন করে অংশ নিয়েছিলেন ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের সদস্যরা। কয়েক হাজার গেরিলা যোদ্ধার এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বেতিয়ারার যুদ্ধে এই বাহিনীর সদস্যদের আত্মদান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে আলোচিত ঘটনা।

স্বাধীনতার পর এই গেরিলা বাহিনীর সদস্যরা মোহাম্মদ ফরহাদের নেতৃত্বে অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন। দেড় যুগ আগে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মুক্তিযোদ্ধাদের যে তালিকা করেছিল, তাতে এই বাহিনীর সদস্যদের রাখা হয়নি। পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের গেরিলা বাহিনীর সদস্যদের মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

শহীদ মিনারে মিলনমেলার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। তিনি এই গেরিলা বাহিনীর সদস্য ছিলেন, স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত প্রথম ডাকসু নির্বাচনে ভিপি হয়েছিলেন তিনি।

ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আজ শনিবার একাত্তরে ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর মিলনমেলায় সিপিবির সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

সম্পর্কিত নিবন্ধ