জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে মার্কিন ভেটো
Published: 5th, June 2025 GMT
গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও প্রায় ১০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই বুধবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে (ইউএনএসসি) এক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্রস্তাবটিতে গাজায় অবিলম্বে, নিঃশর্ত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছিল। খবর আলজাজিরার।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের ১৪টি দেশ প্রস্তাবের পক্ষে ভোট দিলেও একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র তাতে বিরোধিতা করে ভেটো দেয়। প্রস্তাবে গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তির কথাও উল্লেখ ছিল। তবে যুক্তরাষ্ট্র দাবি করে, যুদ্ধবিরতির সঙ্গে এই মুক্তির বিষয়টি সরাসরি সংযুক্ত না হওয়ায় প্রস্তাবটি ‘অগ্রহণযোগ্য’।
ভোটাভুটির আগে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া পরিষদে বলেন, এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে যুক্তরাষ্ট্র এবং এটা ‘অবাক হওয়ার মতো কিছু নয়’। তিনি বলেন, ‘এই সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে যে, ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে- যার মধ্যে হামাসকে পরাজিত করা এবং তারা যেন আর কখনো ইসরায়েলকে হুমকি দিতে না পারে, তা নিশ্চিত করাও অন্তর্ভুক্ত।’
চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেন, ইসরায়েল ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের প্রতিটি সীমা অতিক্রম করেছে’ এবং জাতিসংঘের প্রস্তাব লঙ্ঘন করছে। তিনি অভিযোগ করেন, ‘একটি দেশের সুরক্ষা থাকার কারণেই এইসব লঙ্ঘন থামানো যাচ্ছে না বা জবাবদিহির আওতায় আনা যাচ্ছে না ইসরায়েলকে।’
আল জাজিরার জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক বিশ্লেষক মারওয়ান বিশারা বলেন, এই ভেটোর মাধ্যমে ‘যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি একঘরে হয়ে গেছে।’ তিনি বলেন, ‘একটি বৈশ্বিক স্রোত তৈরি হচ্ছে, যা ইসরায়েল ও গাজায় তার কার্যক্রমের বিরুদ্ধে। শুধু যুক্তরাষ্ট্রই এখনো ইসরায়েলকে রক্ষা করতে গিয়ে এই প্রবাহ আটকে রাখার চেষ্টা করছে। এটি আত্মরক্ষা নয়, বরং গাজায় দখল ও অবরোধকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টাই করছে ইসরায়েল।’
বিশ্বজুড়ে যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও তা প্রত্যাখ্যান করে আসছে ইসরায়েল। তারা বলছে, হামাস গাজায় ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। এরই মধ্যে ইসরায়েলি হামলায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছেন এবং অবরোধের কারণে গাজায় মানবিক সংকট চরমে পৌঁছেছে।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার কমপক্ষে ৯৫ জন নিহত এবং ৪৪০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। আল জাজিরা জানিয়েছে, মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহসহ বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি হামলা তীব্রতর হয়েছে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় পরিচালিত বিতর্কিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ) এর ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশপাশের রাস্তায় যাওয়ার ব্যাপারে ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনিদের সতর্ক করে দিয়েছে। এসব অঞ্চলকে ‘যুদ্ধক্ষেত্র’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং বুধবার একদিনের জন্য পুরো ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ ছিল।
মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া এই বিতরণ কার্যক্রমে ইতোমধ্যেই শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং শত শত মানুষ আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার ভোরে ত্রাণ নেওয়ার জন্য জড়ো হওয়া মানুষের ওপর গুলি চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষদের দিকে গুলিবর্ষণের দৃশ্য বিশ্বজুড়ে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। গুলি চালানোর বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তারা দাবি করেছে ‘সন্দেহভাজন’ কেউ নির্ধারিত পথ থেকে সরে গিয়েছিল।
জিএইচএফের বিতরণ প্রক্রিয়া নিয়ে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, তারা মানবিক নীতিমালা মানছে না। বিতরণের কাজে বেসরকারি মার্কিন নিরাপত্তা ও লজিস্টিক কর্মীদের ব্যবহার করে ত্রাণকে সামরিকীকরণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের।
‘সীমান্ত খুলে দিন’- জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা বিষয়ক প্রধান টম ফ্লেচার নিরাপত্তা পরিষদের ভোটের আগে আবারও ত্রাণকর্মীদের প্রবেশাধিকার চেয়ে বলেছেন, ‘সকল সীমান্ত খুলে দিন। সবদিক থেকে ব্যাপকভাবে জীবনরক্ষাকারী ত্রাণ ঢুকতে দিন। কী পরিমাণ ত্রাণ আসবে এবং কী আসবে এ সীমাবদ্ধতা তুলে দিন। আমাদের গাড়িবহর যেন অনুমোদনের অপেক্ষায় আটকে না থাকে।’
জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরেই গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ এবং নিরাপত্তাহীনতাকেই ত্রাণ কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার কারণ হিসেবে দায়ী করে আসছে। ইসরায়েল দাবি করে, হামাস ত্রাণ লুট করছে। যদিও এই অভিযোগ হামাস প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বিশ্ব খাদ্য সংস্থাও বলেছে, এর পক্ষে কোনো প্রমাণ নেই।
জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের মুখপাত্র জেমস এল্ডার, যিনি বর্তমানে গাজায় অবস্থান করছেন, সেখানে মাত্র একদিনেই যে ভয়াবহতা দেখেছেন তা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি কিশোর ছেলেদের কাঁদতে দেখছি, যারা তাদের হাড়গোড় দেখাচ্ছে। শিশুরা খাবারের জন্য আকুতি জানাচ্ছে।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা ইস্যুতে ১৪টি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে, যার মধ্যে চারটি গৃহীত হয়েছে। বুধবারের প্রস্তাব ছিল ২০২৪ সালের নভেম্বরের পর প্রথম উত্থাপিত প্রথম প্রস্তাব।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র প রস ত ব ইসর য় ল ব তরণ
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক