মোদি বোঝালেন, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকতে তিনি নারাজ
Published: 5th, June 2025 GMT
ভারতের নরেন্দ্র মোদির সরকার বুঝিয়ে দিল, পেহেলগামকাণ্ড বা অপারেশন সিঁদুর নিয়ে আলোচনার জন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকার কোনো আগ্রহ তাদের নেই। গতকাল বুধবার সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেন। ২১ জুলাই শুরু হয়ে সেই অধিবেশন চলবে আগামী ১২ আগস্ট পর্যন্ত।
এত দিন ধরে বিরোধীরা বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানাচ্ছিলেন। বিভিন্ন দল নিজেদের মতো সেই দাবি তুলেছে। দুই দিন আগে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের পক্ষেও ১৬টি দল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এ বিষয়ে চিঠি দেয়। কিন্তু তা নিয়ে কোনো মন্তব্য না করে সরকার বর্ষাকালীন অধিবেশনের তারিখ জানিয়ে দিল। স্পষ্টতই এর মধ্য দিয়ে সরকার বোঝাতে চেয়েছে, বিশেষ অধিবেশন ডাকার কোনো বাসনা তাদের নেই।
সংসদীয় ভারতের ইতিহাসে এত দিন আগে অধিবেশনের দিনক্ষণ জানানোর নজির নেই। সরকার এ ঘোষণা করল ৪৭ দিন আগে।
দুই বা তিন দিনের জন্য সংসদের উভয় কক্ষের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে সদস্যরা শুধু পেহেলগামকাণ্ড ও অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ পেতেন। পূর্ণ অধিবেশনে সেই সুযোগ ততটা থাকে না।
শুধু বিশেষ অধিবেশনই নয়, প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার দাবিও সরকার মানেনি। পেহেলগামকাণ্ডের পর দুবার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকা হয়। দুই বৈঠকের একটিতেও প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন না। প্রথমবার বৈঠক ডেকেও তিনি চলে যান বিহার। দ্বিতীয়বার দিল্লিতে থাকা সত্ত্বেও তিনি বৈঠকে অনুপস্থিত থাকেন। তাঁকে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ বিরোধী নেতাদের তিনি দেননি।
অথচ এ দুই ঘটনা নিয়ে বহু প্রশ্ন বিরোধীদের মধ্যে রয়েছে। কাদের ব্যর্থতায় পেহেলগামকাণ্ড ঘটল, আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। আততায়ীরা কেন এখনো অধরা, সে প্রশ্নের জবাব মেলেনি। অপারেশন সিঁদুরে ভারতের ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান এখনো প্রকাশ করা হয়নি। যুদ্ধবিরতি ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভূমিকা নিয়ে এখনো কোনো স্বচ্ছতা নেই। সরকারের দাবি অনুযায়ী ভারতের আক্রমণে পাকিস্তান দিশাহারা হয়ে গিয়েছিল। তা হলে সুবিধাজনক অবস্থানে থেকেও ভারত কেন আচমকা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সায় দিল—এমন বহু প্রশ্ন তোলার সুযোগ পেতে বিরোধী নেতারা বিশেষ অধিবেশন ডাকার দাবি জানিয়েছিলেন। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছিলেন, বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহানের সাক্ষাৎকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হলে সেসব প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ পাওয়া যাবে। খাড়গে বলেছিলেন, সব দল সংকটের সময় সরকারের পাশে থেকেছে। কিন্তু তার সুযোগ নিয়ে মোদি সরকার দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে।
বর্ষাকালীন অধিবেশনের দিন ঘোষণার পর কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক্সে লেখেন, বিরোধীদের দাবি থেকে পালানোর জন্যই এত আগেভাগে সংসদের পরবর্তী অধিবেশনের তারিখ জানানো হলো। অধিবেশন শুরুর যে ঘোষণা সাধারণত কিছুদিন আগে করা হয়, এবার তা করা হলো ৪৭ দিন আগে। যেসব প্রশ্নের জবাব প্রধানমন্ত্রী এখনো দেননি, ছয় সপ্তাহ পর সংসদের অধিবেশনে সেগুলোর জবাব তাঁকে দিতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র জন দ ন আগ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি: সালাহউদ্দিন
প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের ঘোষণায় জাতির প্রত্যাশা পূরণ হয়নি উল্লেখ করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, এমন সময়ে নির্বাচনের সময় ঘোষণা করা হয়েছে, যে সময়ে পাবলিক পরীক্ষা থাকে, আবহাওয়া ঠিক থাকে না। এ ছাড়া ফেব্রয়ারির মাঝামাঝি রমজান মাস শুরু হবে। এপ্রিলের প্রথমার্ধে যদি নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হয়, তাহলে ৪৫ দিন যে সময়সীমা লাগে, তপশিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচন পর্যন্ত; সেটা রমজানের মধ্যেই প্রচার-প্রচারণা করতে হবে। এটা একটা অযৌক্তিক ধারণা।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, সার্বিক বিবেচনায় প্রধান উপদেষ্টা খুব বেশি দেরি করতে চাইলে ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন হতে পারত। সেটি হয়তো সবার কাছে গ্রহণযোগ্য বলে মনে হতো।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার পর বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হবে। একই সঙ্গে আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে যারা শরিক ছিলেন, সমমনা রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত প্রতিক্রিয়া জানাব।
প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সালাহউদ্দিন আহমদ সমকালকে বলেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতির উদ্দেশে দেওয়া দীর্ঘ ভাষণে অনেক কিছু উল্লেখ করেছেন। সরকারের কৃতিত্ব, কর্মকাণ্ড এবং ভবিষ্যতে কী করতে চান ইত্যাদি। এর ফাঁকে একপর্যায়ে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করেছেন। আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের যেকোনো দিন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তিনি বলেন, ৫০টির বেশি রাজনৈতিক দল ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টা তা আমলে নেননি। বিএনপি যৌক্তিকভাবে ডিসেম্বরের ভেতরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব সময় বিভিন্ন যুক্তি ও কারণ উপস্থাপন করেছে। অথচ, প্রধান উপদেষ্টা সে বিষয়টি আমলে না নিয়ে দেশের ৯০ ভাগ রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের মতো করে তারিখ ঘোষণা করেছে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, আবহাওয়া, পাবলিক পরীক্ষা, রমজান বাদ দিলেও একটি সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এক মাসের মধ্যে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করতে পারে না। আর আমাদের অনেক বেশি প্রতিশ্রুতি আছে। সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে বলে সালাহউদ্দিন আহমদ মনে করেন না।