পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন ডিএসসিসি প্রশাসক জনাব মো. শাহজাহান মিয়া।

বৃহস্পতিবার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

প্রশাসক বলেন, ‘ঈদের দিন সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে জামাত আয়োজন অনুপযুক্ত হলে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে সকাল ৮টায় প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, নামাজ আদায়কারী মুসল্লিদের জন্য গ্রহণ করা হয়েছে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও সেবা ব্যবস্থা, যেমন- প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লির জন্য বিশাল আয়োজনে ঈদ জামাতের আয়োজন, ভিআইপি ব্লকে একসঙ্গে ২৫০ জনের নামাজের ব্যবস্থা, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিতে পুলিশ, র‌্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন, অজু, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানির সুব্যবস্থা, মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রাখা, পৃথক প্রবেশ ও প্রস্থান গেট, নারী মুসল্লির জন্য পৃথক ব্লকে নামাজের ব্যবস্থা ও পৃথক প্রবেশপথ। 

তিনি আরও বলেন, নগরবাসীর কোরবানির পশু কেনাবেচার সুবিধার্থে ৮ জায়গায় অস্থায়ী হাট স্থাপন করা হয়েছে। এসব হাটে থাকবে: পরিচ্ছন্নতা কর্মী, পুলিশ ও এটিএম বুথ, পশু স্বাস্থ্য সেবার জন্য চিকিৎসক ও মেডিকেল টিম। হাট শেষ হওয়ার পরপরই নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পন্ন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। 

প্রশাসক বলেন, কোরবানির পশুর বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের লক্ষ্যে ডিএসসিসির প্রায় ১০ হাজার পরিচ্ছন্নতা কর্মী, ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ২০০টি মিনি ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আমরা এবার ৩০ হাজার মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণের প্রস্তুতি রেখেছি। দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৭৫টি ওয়ার্ডে ১ লাথ ৪০ হাজার বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ, ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার ও ২২২ গ্যালন স্যাভলন বিতরণ করা হয়েছে। ইদের জামাত, কোরবানি হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্যে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা- কর্মচারীর ইদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কোরবানির হাট ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য নগর ভবনের জরুরি পরিচালন কেন্দ্রে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। 

তিনি জানান, নগরবাসীকে অনুরোধ জানানো হয়েছে নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দিতে এবং বর্জ্য যত্রতত্র না ফেলে সহযোগিতা করতে।

ব্রিফিংয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.

মো. জিল্লুর রহমানসহ সকল বিভাগীয় প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ত য় ঈদগ হ প রস ত ত ড এসস স ব যবস থ বর জ য ক রব ন র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রভাবশালীদের কবজায় অস্থায়ী পশুর হাট 

ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনেই গড়ে উঠেছে অস্থায়ী পশুর হাট। প্রশাসনিক স্থবিরতা, রাজনৈতিক দখল, ইজারা প্রক্রিয়ায় অনিয়মের কারণে বসেছে এসব হাট। এতে বাড়ছে জনদুর্ভোগ, তৈরি হচ্ছে নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা সংকট।

জানা গেছে, দুই সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ১৯টি অস্থায়ী হাটের অধিকাংশই এবার ইজারা পেয়েছেন বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠনের ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীরা। 

ঢাকা উত্তরের ৯টির মধ্যে ৮টি কোরবানির হাট বিএনপির হাতে: ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী ১২টি কোরবানির হাটের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯টির ইজারা চূড়ান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৮টিই বিএনপি নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে। স্থায়ী গাবতলী হাটও ঈদসহ এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়েছে। 

খিলক্ষেতের মস্তুল চেকপোস্ট সংলগ্ন হাটটি পেয়েছে 'সুরমি ইন্টারপ্রাইজ' নামের একটি প্রতিষ্ঠান, যার পেছনের হাল ধরেছেন মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আকতার হোসাইন।

তেজগাঁওয়ের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সংলগ্ন হাট পরিচালনা করছেন ‘জায়ান এন্টারপ্রাইজ’ এর মনিরুজ্জামান, যিনি যুবদলের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা ইউনিটের সদস্যসচিব।

মিরপুর ইস্টার্ন হাউজিং হাট পেয়েছেন রতন মিয়া। তিনি বলেন, “বিএনপির কিছু সিনিয়র ভাইয়ের সহায়তা পেয়েছি, তবে নিয়ম মেনেই ইজারা নিয়েছি।”

তবে নিয়ম মানা হয়েছে কিনা, সে প্রশ্ন উঠছে দিয়াবাড়ি হাটকে ঘিরে। অভিযোগ উঠেছে, সর্বোচ্চ দরদাতা হয়েও একজন দরপত্রদাতা কার্যাদেশ পাননি শুধু মূল পে-অর্ডার দাখিল না করায়। দ্বিতীয় দরদাতা দাবি করেছেন, রাজনৈতিক চাপের কারণেই তাকেও কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি।

দক্ষিণেও দৃশ্যপট এক: ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯টি হাটের মধ্যে আটটিই এবার গেছে বিএনপি ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ীদের হাতে। যেখানে গত কয়েক বছর ধরে আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠরা নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন, এবার সেই নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি বদলে গেছে।

সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, শাহজাহানপুরের মৈত্রী সংঘ মাঠ, আমুলিয়া, পোস্তগোলা, দনিয়া ক্লাব, রহমতগঞ্জ মাঠসহ অন্তত ছয়টি হাটের ইজারাদাররা বিএনপির সাবেক নেতা বা তাদের ঘনিষ্ঠ।

সবচেয়ে আলোচিত নারিন্দার ‘সাদেক হোসেন খোকা মাঠ’ ও ধোলাইখাল ট্রাক টার্মিনালের যৌথ হাট। সরকারি দর ছিল ৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা, কিন্তু এটি মাত্র ২ কোটি ২৫ লাখ টাকায় পেয়েছেন সৈয়দ মাসুদ রেজা, যিনি সাবেক মেয়র খোকার পরিবারের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত।

আর ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবসংলগ্ন হাটটি ৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মূল্যের হলেও তা মাত্র ১ কোটি ২০ লাখ টাকায় নিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতা ইসমাইল হোসেন।

প্রশাসনিক অচলাবস্থা:  ডিএসসিসির নগর ভবনে ইজারা ও অর্থ বিভাগ কার্যত অচল। অনেক বিভাগে তালা ঝুলছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হাজির হচ্ছেন না।

ডিএসসিসির প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, “নিয়োগ ও বেতন সংক্রান্ত জটিলতার কারণে অনেকে অফিসে আসছেন না। ফলে কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছে।”

এই বিলম্বের সুযোগেই গড়ে উঠছে বেআইনি হাট। কলাবাগান, কামরাঙ্গীরচর, বনশ্রী, শ্যামপুর, বাংলামোটর, মেরাদিয়া—নগরজুড়ে বিভিন্ন স্থানে অনুমোদনহীন হাট বসেছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “অবৈধ হাট চিহ্নিত করা হয়েছে। তবে তালিকা না থাকায় উচ্ছেদে অভিযান চালানো যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন তালিকা দিলে পুলিশ অভিযান চালাবে।”

জনদুর্ভোগ ও নিরাপত্তাহীনতা: নগরবিদরা বলছেন, হাট ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাবে নগরবাসীকে ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম বলেন, “এসব হাটে রাজনৈতিক দখলের কারণে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, পশু চুরি ও যানজট বেড়ে যায়। এতে নগরবাসী নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। উত্তরণের একমাত্র পথ হলো স্বচ্ছ ইজারা প্রক্রিয়া ও কার্যকর সমন্বয়।”

সেগুনবাগিচার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, “আগে আওয়ামী লীগের লোকেরা নিয়ন্ত্রণ করত, এখন বিএনপিরা করছে। কিন্তু দুর্ভোগ তো আমাদেরই পোহাতে হয়। রাস্তাঘাট বন্ধ, মলমূত্রে দুর্গন্ধ, চাঁদাবাজি—এসব আমাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে।”

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাজধানীর কোনো ঈদ জামাত নিরাপত্তার বাইরে থাকবে না: ডিএমপি কমিশনার
  • জাতীয় ইদগাহে ঈদ জামাতের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন: ডিএসসিসি প্রশাসক
  • প্রভাবশালীদের কবজায় অস্থায়ী পশুর হাট