চলতি বছর কোরবানির মৌসুমে রাজধানী ঢাকার মধ্যে লবণযুক্ত চামড়ার সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৩৫০ টাকা। আর ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টাকা। চামড়ার আকার বড় হলে দাম আরও বেশি পাওয়া যাবে।

তবে কোরবানির পরপর সাধারণত লবণ ছাড়া কাঁচা চামড়া বিক্রি হয়। এ ধরনের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় না। ক্রেতা–বিক্রেতারা দর–কষাকষির মাধ্যমে দাম চূড়ান্ত করেন।

প্রতিবছরই কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করা নিয়ে অনেকে বিড়ম্বনায় পড়েন। প্রায়ই অভিযোগ আসে, চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যায় না। পানির দামে চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে। অতীতে কখনো কখনো উপযুক্ত দাম না পেয়ে চামড়া ফেলে দেওয়া বা পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটেছে।

চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, কিছু নিয়ম অনুসরণ করলে চামড়ার সম্ভাব্য ক্ষতি এড়িয়ে উপযুক্ত দামে তা বিক্রি করা যায়। আসুন জেনে নিই কোন পদ্ধতি অনুসরণ করলে ভালো দামে চামড়া বিক্রি করা যাবে।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা প্রায় ১ কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু।

অন্যদিকে চলতি বছর ৮০ থেকে ৮৫ লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছেন ট্যানারির মালিকেরা। সারা বছর যে পরিমাণে চামড়া সংগ্রহ করা হয়, তার ৫০–৬০ শতাংশই সংগ্রহ করা হয় এই মৌসুমে। ফলে চামড়া বেচাকেনার এই বড় মৌসুমে সম্ভাব্য লোকসান এড়াতে আসুন জেনে নিই, কী কী কাজ করলে চামড়ার ভালো দাম পাওয়া যেতে পারে।

চামড়া ছাড়ানোর সময় থেকেই সতর্ক থাকা

ভালোভাবে চামড়া সংরক্ষণের জন্য প্রথম ধাপ হলো পশুর গা থেকে ঠিকভাবে চামড়া ছাড়ানো। ফলে এ সময় সতর্ক থাকতে হবে। পশুর মাংস ছাড়ানোর সময় যত্নসহকারে চামড়া কাটতে হবে। অসতর্কভাবে চামড়া কেটে গেলে কিংবা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওই চামড়ার মূল্যমান কমে যায়। চামড়া ছাড়ানোর পর সর্বোচ্চ ৮–১০ ঘণ্টার মধ্যে তাতে লবণ যুক্ত করার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। তা না হলে চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। যিনি কোরবানি দেন বা প্রাথমিকভাবে চামড়া সংগ্রহকারীরা চামড়াতে লবণ যুক্ত করতে পারেন। এতে কয়েক দিন চামড়া সংগ্রহে রাখা ও ভালো দর–কষাকষির সুযোগ পাওয়া যাবে। তবে ঝামেলার কারণে ব্যক্তিপর্যায়ের অনেকেই এ পথে যেতে চান না। চামড়া কাঁচা অবস্থাতেই বিক্রি করে দেন।

চামড়ায় লবণ যুক্ত করা কোনো কঠিন কাজ নয়। এ ক্ষেত্রে কিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। প্রথমত, কোরবানির পরে যত দ্রুত সম্ভব চামড়ায় লবণ দেওয়া ভালো। পশুর গা থেকে চামড়া ছাড়ানোর সময় মাঝেমধ্যে কিছু মাংস চামড়ার গায়ে আটকে থাকে। লবণ দেওয়ার আগে অবশ্যই এই বাড়তি মাংস ছাড়িয়ে নিতে হবে। তাতে চামড়া কোনোভাবেই নষ্ট হবে না। ছায়াযুক্ত কোনো স্থানে যেমন গাছতলা, গ্যারেজ বা প্যান্ডেল টাঙিয়ে লবণ যুক্ত করতে হবে। চামড়ার জন্য বৃষ্টি বা অতিরিক্ত গরম—কোনোটাই ভালো নয়।

কতটা লবণ লাগবে

রাজধানীর পোস্তার কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ীরা জানান, চামড়ার হিসাব হয় বর্গফুটে। ৩৫ থেকে ৫০ বর্গফুটের চামড়াকে বড় আকারের ধরা হয়। এই আকারের একটি চামড়া সংরক্ষণের জন্য ৮ থেকে ৯ কেজি লবণ প্রয়োজন হয়। আর চামড়ার আকার ৫৫ থেকে ৬০ বর্গফুট হলে লবণ লাগে ১০ কেজির মতো।

অন্যদিকে মাঝারি (২০-২৫ বর্গফুট) আকারের একটি চামড়ার জন্য ৫ থেকে ৬ কেজি লবণ প্রয়োজন হয়। আর ছোট (১৫-১৬ বর্গফুট) আকারের চামড়ার জন্য লবণ লাগে ৩ থেকে ৪ কেজি। এ ছাড়া এক কেজি লবণ দিয়ে দুইয়ের বেশি ভেড়া, ছাগল বা খাসির চামড়া সংরক্ষণ করা যায়। যত নিখুঁতভাবে লবণ লাগানো যাবে, তত ভালো দাম পাওয়া যাবে।

চামড়ায় সাধারণত মোটা দানার লবণ যুক্ত করা হয়। চলতি বছর মোটা দানার লবণের দাম আগের বছরের তুলনায় কম। গত বছর ৭৪ কেজির বড় দানার লবণের প্রতি বস্তার দাম ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকা। এ বছর তা কমে ১ হাজার ৫০ টাকা হয়েছে। তাতে প্রতি কেজির দাম পড়ে ১৮ টাকার আশপাশে।

এই হিসাবে বড় আকারের, তথা ৩৫ থেকে ৫০ বর্গফুটের একেকটি চামড়ার জন্য ৮ থেকে ৯ কেজি বা ১৪৫ থেকে ১৬২ টাকার লবণ প্রয়োজন হবে। লবণ যুক্ত করা হলে অনায়াসে সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া বিক্রি করতে করা যাবে। এ ক্ষেত্রে একটা উদাহরণ দিই। মাঝারি আকারের গরুর চামড়ার আকার অন্তত ২০ বর্গফুট হয়। ঢাকায় এক লাখ টাকা দামের একটি গরুর চামড়া যদি ২০ বর্গফুট হয়, তখন ওই গরুর লবণযুক্ত চামড়ার দাম হবে ১ হাজার ২০০ টাকা। ঢাকার বাইরে হবে এক হাজার টাকা। তবে কাঁচা চামড়া বিক্রি করা হলে আরও কয়েক শ টাকা কম পাওয়া যাবে।

পোস্তার আড়তদারেরা জানান, পরিবহন খরচ, কারিগরের মজুরিসহ প্রতিটি চামড়ায় লবণ যুক্ত করতে তাঁদের ২৯০-৩২০ টাকা লাগে। এই দর হিসাব করে তাঁরা অনুমানের ভিত্তিতে ঈদের সময় কাঁচা চামড়া কিনে থাকেন। পশু কাটার সময় চামড়া ঠিকভাবে ছাড়ানো হলে এবং তা যথাসময়ে লবণ দেওয়া হলে নির্ধারিত দামেই চামড়া বেচাকেনা হবে।

যাঁরা লবণ দিতে পারবেন না

সবার পক্ষে হয়তো চামড়ায় লবণ যুক্ত করা সম্ভব হবে না। তাই তাঁদের উচিত হবে দ্রুততম সময়ে কাঁচা চামড়া বিক্রি করে দেওয়া। রাজধানীতে পোস্তা ছাড়াও সায়েন্স ল্যাব, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ, মিরপুর, গুলশান, বনানী, সাভার, হেমায়েতপুর, আমিনবাজার, জিঞ্জিরা, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গীসহ বিভিন্ন স্থানে কাঁচা চামড়া কেনার জন্য আড়তদারেরা অপেক্ষা করেন। ফলে নিকটস্থ কোনো জায়গায় একটু দরাদরি করে কাঁচা চামড়া বিক্রি করে দেওয়া ভালো। তবে এ ক্ষেত্রেও ভালো দাম পেতে সঠিকভাবে চামড়া ছাড়াতে হবে।

পরিবহনের দীর্ঘসূত্রতার কারণে কাঁচা চামড়া যাতে নষ্ট না হয়, সে জন্য কিছু সরকারি বিধিনিষেধও রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ঈদের ১০ দিন পর থেকে ঢাকার বাইরে থেকে চামড়া রাজধানী শহরে প্রবেশ করতে পারবে। এর আগে অন্য জেলার পশুর চামড়া নিয়ে ঢাকায় প্রবেশ করা যাবে না।

ট্যানারির মালিকদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ) জানিয়েছে, গত বছর কোরবানি ঈদের প্রথম দুই দিনে সংরক্ষণের অভাবে সারা দেশে প্রায় ৫ লাখ কাঁচা চামড়া নষ্ট হয়েছিল। এর বেশির ভাগই ছিল খাসি-বকরির চামড়া।

চামড়া দেশের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সম্পদ ও রপ্তানি পণ্য। ফলে স্থানীয় পর্যায়ে বেচাকেনার মধ্যেই এটির গুরুত্ব শেষ হয় না; বরং চামড়া প্রক্রিয়াজাতের পরই তা মূল্যবান সম্পদে পরিণত হয়। তাই ভালোভাবে চামড়া সংরক্ষণের ওপর সব সময়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রব ন র প ক রব ন র লবণ ল গ স গ রহ ৫০ ট ক র লবণ লবণ দ র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মায় জেলের জালে ধরা পড়ল ১১ কেজির কাতল

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে পদ্মা নদীতে ধরা পড়েছে ১১ কেজি ওজনের একটি কাতল মাছ। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ভোরের দিকে উপজেলার চালা ইউনিয়নের দিয়াপাড় এলাকার মৎস্য শিকারী রাজ্জাকের জালে মাছটি ধরা পড়ে। 

মাছ ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা জানান, আজ সোমবার ভোরে আন্ধারমানিক আড়তের সুবাশ রাজবংশীর আড়তে মাছটি তোলেন রাজ্জাক। নিলামে মাছটি ১২ হাজার ৬০০ টাকায় কিনে নেন ব্যবসায়ী ইয়েমেল। তিনি মাছটি বলড়া বাজারে নিয়ে যান। সেখানে বলড়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের হাসান আলী ১৪ হাজার ৬০০ টাকায় মাছটি কিনে নেন। 

আরো পড়ুন:

জেলের জালে ২ কেজির ইলিশ, ৬ হাজার টাকায় বিক্রি

আরাকান আর্মির ধাওয়ায় নাফ নদীতে ট্রলার ডুবি

আড়তদার হৃদয় রাজবংশী বলেন, ‍“পদ্মা নদী থেকে সোমবার ভোরে কাতল মাছটি ধরেন রাজ্জাক। আজ সকালে আড়তে নিয়ে আসলে বলড়া বাজারের মাছ ব্যবসায়ী ইয়েমেল মাছটি কিনে নেন।” 

ইয়েমেল বলেন, “আজ সাড়ে ১১ কেজির কাতল মাছটি ১২ হাজার ৬০০ টাকায় কিনে সুলতানপুরের হাসান কাকার কাছে ১৪ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করেছি।”

হরিরামপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নুরুল ইকরাম বলেন, “মানিকগঞ্জের পদ্মা নদীতে মাঝে মাঝে বড় বড় পাঙাশ, আইড়, কাতল, চিতল ও বোয়াল মাছ  ধরা পড়ে। আজ বড় একটি কাতল মাছ ধরা পড়েছে।” 

ঢাকা/চন্দন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পদ্মায় জেলের জালে ধরা পড়ল ১১ কেজির কাতল