১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ করাই এবার বড় চ্যালেঞ্জ
Published: 7th, June 2025 GMT
বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও পশু কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করে দেয়নি রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। ফলে নগরবাসী যে যার পছন্দমতো স্থানে পশু কোরবানি করছেন। বাড়ির আঙিনায়, অলিগলি বা প্রধান সড়কেও চলছে পশু কোরবানি। ফলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণ নিয়ে চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে পারে দুই সিটি করপোরেশন। যদিও উভয় সিটি করপোরেশনই বলছে, বর্জ্য অপসারণের জন্য তারা প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রেখেছে।
শনিবার দুপুরের পরই শুরু হবে বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রম। আগামীকাল রোববারের মধ্যেই রাজধানী সম্পূর্ণ কোরবানির বর্জ্যমুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন বলছে, এবার রাজধানীতে সাত লাখের মতো পশু কোরবানি হতে পারে। এতে ৫০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হবে। অতীতে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পশু বর্জ্য অপসারণের মোটামুটি সন্তোষজনক দৃষ্টান্ত দেখাতে পেরেছে দুই সিটি করপোরেরশন। তখন বর্জ্য অপসারণের কার্যক্রমগুলো কঠোরভাবে তদারকি করতেন কাউন্সিলররা। এমনকি মেয়ররাও মাঠে থাকতেন। এবার মেয়র ও কাউন্সিলরশূন্য উভয় সিটি করপোরেশন। বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র পদে বসানোকে কেন্দ্র করে গত ১৪ মে থেকে বন্ধ ছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) যাবতীয় কার্যক্রম। ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ পরিচ্ছন্নতা বিভাগের কর্মচারীরাও সেই আন্দোলনে শামিল হয়েছিলেন। কাজেই তারা কতটা আন্তরিকভাবে পরিচ্ছন্নতার কার্যক্রমে সক্রিয় থাকবেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এমনিতেই অবকাঠামো এ ভৌগোলিক কারণে ডিএসসিসি এলাকার বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম একটা বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া দীর্ঘদিন নগর ভবন অচল থাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমেও ভাটা পড়েছিল। রাজধানীতে প্রচুর বর্জ্য এমনিতেই জমা হয়ে আছে। তার ওপর কোরবানির বর্জ্য যুক্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় ডিএসসিসির প্রশাসক মোঃ শাহজাহান মিয়ার ১২ ঘণ্টার মধ্যে পশুর বর্জ্য অপসারণের অঙ্গীকার কতটা আলোর মুখ দেখে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে নগরবাসীর।
অন্যদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে (ডিএনসিসি) মোহাম্মদ এজাজ প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই অতিমাত্রায় সক্রিয় ছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠার পর তার কার্যক্রমে ধীরগতি পরিলক্ষিত হতে শুরু করে। গণঅধিকার পরিষদ নামের একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ডিএনসিসি নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে মোহাম্মদ এজাজের পদত্যাগ দাবি করে। এ ঘটনায় প্রায় টানা এক সপ্তাহ নগরভবনেই যাননি মোহাম্মদ এজাজ।
এছাড়া তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর একক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে কর্মকর্তা–কর্মচারীদের সঙ্গে তার বড় একটি দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে ডিএনসিসির কার্যক্রমেও অনেকটা স্থবিরতা নেমে আসে। তার ওপর সবচেয়ে বড় বিষয় হলো বিগত ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের সময় বিক্ষোভকারীরা ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় দুই শতাধিক যানবাহনে আগুন লাগিয়ে ভস্মীভূত করে। সেই ঘাটতি এখনও পূরণ করতে পারেনি দুই সিটি করপোরেশন। এ অবস্থায় বিদ্যমান যান-যন্ত্রপাতি দিয়ে এই বিপুল পরিমাণ পশুর বর্জ্য অপসারণ মোহাম্মদ এজাজের ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দৃঢ় ঘোষণা কতটা সফলতা বয়ে আনবে তা নিয়েও সংশয় আছে।
অন্যবার কোরবানির পশুবর্জ্য সংরক্ষণ ও পরিবেশ রক্ষায় কাউন্সিলরদের মাধ্যমে প্রতিটি হোল্ডিংয়ে পলিব্যাগ ও ব্লিসিং পাউডার বিতরণ করা হতো। নির্দিষ্ট স্থানের পরিবর্তে যারা বাসাবাড়িতে পশু কোরবানি করতেন, তারা সেই ব্যাগে পশুর বর্জ্য ঢুকিয়ে নির্দিষ্ট স্থানে রাখতেন। সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা সেগুলো সংগ্রহ করে এসটিএস (সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন) ও সেখান থেকে মাতুয়াইল বা আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে নিয়ে যেতেন ডাম্প ট্রাকে করে। এবার সে কাজেও ঘাটতি আছে।
যদিও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পলিব্যাগ বিতরণের দাবি করা হয়েছে। কিন্তু সেই পলিব্যাগ সাধারণ নগরবাসীর কাছে খুব একটা পৌঁছেছে বলে খবর পাওয়া যায়নি। কাজেই যারা অসচেতন নগরবাসী তাদের দেওয়া কোরবানির পশুবর্জ্যর স্থান হবে বাড়ির আশপাশের ড্রেন, নালা বা খাল। এতেও পরিবেশটা কতটা পরিচ্ছন্ন থাকবে তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে।
তবে আশার কথা হলো, এবার প্রথমবারের মতো ঈদে ১০ দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এ কারণে রাজধানী এখন ব্যাপক মাত্রায় ফাঁকা। জনগণের ঘনত্বও কমে এসেছে। কিন্তু যারা নগরে রয়ে গেছেন, তারা তো এই বর্জ্যদূষণের কবল থেকে রেহাই পাবেন কী করে?
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ঈদ ল আজহ ক রব ন ক রব ন র র বর জ য ড এসস স নগরব স
এছাড়াও পড়ুন:
১৭ হাজার রেজিস্ট্রেশন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ৪৫ হাজার মিশুক
এখন পুরো শহর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারি চালিত মিশুক। যেন মানুষের চাইতে এ শহরে মিশুকের সংখ্যা বেশি। রেজিস্ট্রেশনের দোহাই দিয়ে তারা রীতিমত রাজত্ব করে চলেছে এ শহরে। যেখানে বাড়তি যানবাহনের চাপে নগরবাসী কোণঠাসা, সেখানে এ হাজার হাজার মিশুক মানুষকে আরও পাগল করে তুলছে।
এখন প্রশ্ন হলো, কোথা থেকে আসলো এত মিশুক? নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন কি এত হাজার হাজার মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে?
এক জরিপে দেখা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে মাত্র ১৭ হাজার ৩শ ৪২টি মিশুককে রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়েছে। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মিশুক চলছে কমপক্ষে ৪৫ হাজারেরও বেশি। এবং তারা সবাই বলছে তাদের মিশুক রেজিস্ট্রেশন করা। তাহলে তারা এত মিশুকের রেজিস্ট্রেশন পেল কোথা থেকে?
অনুসন্ধানে জানাগেছে, একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন দিয়ে প্রায় ১০টিরও বেশি মিশুক চলছে এ শহরে। কিছু অসাধু মিশুক মালিকরা সিটি কর্পোরেশনের চোঁখ ফাঁকি দিয়ে একটি মিশুকের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার নকল করে আরও দশটি মিশুকের পিছনে সাঁটিয়ে পুরো দমে ব্যবসা করে যাচ্ছে।
শুধুমাত্র নাম্বার ভিন্ন ছাড়া রেজিস্ট্রেশন কার্ডগুলো দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় বুঝার উপায় নেই যে, কোনটা আসল আর কোনটা নকল। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে ওই চক্রটি লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ওই চক্রটির কারণে হাজার হাজার মিশুকের চাপে শহরে সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ যানজট, আর এ যানজটের কারণে ভোগান্তির শিকার হচ্ছে নগরবাসী।
শুধু তাই নয়, ওই মালিক চক্রটির কারণে প্রকৃত মিশুক মালিকরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তারা এ বিষয়ে একাধীকবার সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগীতা কামনা করেও ব্যর্থ হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গণমাধ্যকর্মীদের।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, সিটি কর্পোরেশনের চরম গাফলতির কারণেই শহরের আজ এ অবস্থা। তাদের নিয়মিত অভিযান থাকলে কোনভাবেই এ শহরে রেজিস্ট্রেশনবিহিন কোন মিশুকই চলতে পারবে না। তারা কি এ শহর দিয়ে চলাচল করে না? নাকি বিমানে চলে?
তারা যদি এ শহর দিয়েই চলাচল করে থাকে, তাহলে তাদের চোঁখে কি পড়েনা এসব অনিয়ম। তারা কেন এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? নগরবাসীর এত দুর্ভোগ পোহলেও শহরে শৃঙ্খলা ফেরাতে তারা কেন এতটা উদাসীন। যদি তারা না পারে জনসম্মুখে বলুক, ছেড়ে দিক চেয়ার। সরকার অন্যজনকে বসাক। কিন্তু না।
তারা সেটা করবে না। আপনারা কাজও করবেন না আবার চেয়ারও আকড়ে ধরে রাখবেন, এ দু’টো একসাথে চলতে পারে না। হয় কাজ করুন, জনদুর্ভোগ দূর করুন আর নয়তো সব ছেড়ে দিয়ে চলে যান।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন অটোরিকশা মালিক সমিতির সভাপতি রহমান বিশ^াস বলেন, নারায়ণগঞ্জ শহরের যানজট নিরসনের জন্য সিটি কর্পোরেশন আগে যে রিকশার লাইসেন্সগুলো ছিলো, সেগুলোকে কনর্ভাট করে মিশুকের নামে দিয়েছে। কিন্তু পরবির্ততে কিছু দুষ্ট লোক সেই লাইসেন্সগুলোকে রাতারাতি কপি করে ফেলে।
এ কপি করার ফলে শহরে মিশুকের সংখ্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ ক্ষেত্রে যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশন যে মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলো সেটা অনেকাংশে ব্যর্থ হয়ে যায়। কারণ, একই নাম্বারের গাড়ী যদি ৫টা ছয়টা চলে তাহলে কিভাবে যানজট নিরসন হবে। একই নাম্বারের গাড়ী একটিই থাকতে হবে। তাহলে গাড়ীর সংখ্যাও কম থাকবে আবার যানজটও কমে যাবে।
তিনি বলেন, আমরা হাতে নাতে একটি প্রিন্টিং প্রেসে মিশুকের প্লেট জাল করতে দেখে সিটি কর্পোরেশন এবং থানার ওসিকে কল করেছিলাম। আমরা অনেকক্ষন অপেক্ষা করেছিলাম ভাবছিলাম, হয়তো আইনগত কোন পদক্ষেপ নেয়া হবে। কিন্তু আমরা প্রায় তিনঘন্টা অপেক্ষা করার পর যখন দেখলাম তাদের কোন সাড়াশব্দ নাই, তখন এক কথায় নিরাশ হয়ে ফিরে যাই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা যারা প্রকৃত মিশুক মালিক রয়েছি আমরা নিজেরাও এ বিষয়ে খুব চিন্তার মধ্যে থাকি। কারণ, জানিনা ওই দুষ্ট লোকেরা আবার আমাদের গাড়ীর লাইসেন্সের কপি করে ফেলছে কি না! যদি এমন কিছু হয়ে থাকে তাহলে ধরা খেলেতো আমারও সমস্যা হতে পারে।
এমনও হতে পারে কপি করার অপরাধে আমার নিজের লাইসেন্সই বাতিল করে দিতে পারে সিটি কর্পোরেশন। তখন কি তাদেরকে আমি বুঝাতে পারবো যে, আমি এটা করি নি। তাই বলছি, এসব বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
সবশেষ তিনি একটি সুখবর দিয়ে বলেন, সিটি কর্পোরেশন একটা ডিজিটাল প্লেট দেয়ার চিন্তাভাবনা করছে। যদি সেটা করা হয় তাহলে এ প্লেটটা কোনভাবেই কপি করা সম্ভব নয়। এটা রংপুরেও হয়েছে। আর আমরা এটা যাচাই করেও দেখেছি। ওই প্লেটটা হাতে পেলেই আশাকরছি নকল নাম্বার নিয়ে যে মিশুকগুলো চলছে সেটা বন্ধ হয়ে যাবে।