‘ওস্তাদ, টান দিয়েন না, বাইজা গেছে’—চোখের সামনে অটোরিকশাচালককে চাপা পড়তে দেখে বাস থামানোর জন্য এই আকুতি জানান বাসের চালকের সহকারী। কিন্তু তাঁর আকুতি উপেক্ষা করে চালক বাস সামনে এগিয়ে নিয়ে গেলে মুহূর্তেই পিষ্ট হয়ে মারা যান অটোরিকশাচালক শিপন হোসেন। ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন বাসটি আটক করলেও চালক কৌশলে পালিয়ে যান।

নিহত অটোরিকশাচালকের নাম শিপন হোসেন (৩৪)। তিনি রাজধানীর জুরাইন এলাকায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।

আজ শনিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাঙ্গাগামী একটি বাসের চাপায় ঘটনাস্থলে ওই অটোরিকশাচালকের মৃত্যু হয়।

দুর্ঘটনাকবলিত অটোরিকশার যাত্রী রাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন বলেন, ‘আমাদের অটোরিকশাটি হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকার সার্ভিস লেন দিয়ে যাচ্ছিল। পথিমধ্যে ওই সড়কে বাসটি যাওয়ার চেষ্টা করলে অটোরিকশার চাকার সঙ্গে আটকে যায়। এ সময় অটোরিকশাচালক আকুতি করে বাসটি থামাতে বলে। কিন্তু বাসচালক (২৪) অটোরিকশাচালকের আকুতি উপেক্ষা করে বাস টান দেওয়ায় অটোরিকশাটি দুই ভাগ হয়ে যায়। এ সময় অটোরিকশাচালক বাসে উঠে চালককে বাস থামাতে বলেন। তাতেও কাজ হয়নি। একপর্যায়ে বাস থেকে নামার সময় অটোরিকশাচালক সার্ভিস লেনের বিভাজকের ওপর পা রাখলে শরীরের ভারসাম্য হারিয়ে বাসের পেছনের দিকের চাকার নিচে পড়ে যান। এ সময় বাসটি অটোরিকশাচালকের পা ও বুকের ওপর দিয়ে চলে যায়।’

অটোরিকশার যাত্রী রাজ হোসেন আরও বলেন, ‘বাসচালক যদি শুরুতেই বাসটি থামিয়ে একটু পেছনে যেতেন, তাহলে আর এ দুর্ঘটনা ঘটত না। সে ধৈর্যহীন হয়ে বাসটি টান দেওয়ায় এমন মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটল।’

প্রত্যক্ষদর্শী ও হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকার বাসিন্দা মো.

সাব্বির বলেন, ‘অটোরিকশাচালককে বাসের চাকায় চাপা পড়তে দেখে আমরা বাসটিকে থামানোর জন্য বলি। বাসের সহকারীও বলছিলেন “ওস্তাদ, টান দিয়েন না, টান দিয়েন না, বাইজা গেছে।” এরপরও ওই চালক থামেননি। একপর্যায়ে সে ওই অটোরিকশাচালকের শরীরের ওপর দিয়ে চলে যায়। এলাকাবাসী অটোরিকশাচালককে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।’

ঘটনাস্থলে থাকা মোটরসাইকেল চালক শাহীন আলম বলেন, ‘আমি মুন্সিগঞ্জের উদ্দেশে যাচ্ছিলাম। পথিমধ্যে হিজলতলা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় দেখতে পাই, বাসের পেছনের চাকার দিকে এক ব্যক্তি চাপা পড়েছে। এ সময় বাসচালকের সহকারী, কয়েকজন যাত্রী, আমি ও অন্যান্য প্রত্যক্ষদর্শী বাসটি থামাতে বলি। তবে চালক কারও কথা না শুনে বাসটি টান দেন। এ সময় আমিসহ আরও এক বাইকচালক বাসটিকে ধাওয়া করি। একপর্যায়ে নাজিরেরবাগ ঝিলমিল এলাকায় উড়ালসড়কের ওপর বাসটির সামনে মোটরসাইকেল রেখে পথরোধ করি। এ সময় বাসের চালক ও সহকারী বাস থেকে নেমে দৌড়ে কৌশলে পালিয়ে যান।’

জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক পীযূষ রায়। তিনি বলেন, বাসটি আটক করা হয়েছে। বাসের চালক ও সহকারী কৌশলে পালিয়ে গেছেন। তাঁদের আটকের চেষ্টা চলছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: এল ক য় এ সময় র ওপর সহক র চ লকক

এছাড়াও পড়ুন:

মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর পোশাক নিয়ে কটূক্তি ও হেনস্তার ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার তিন দিন পর হেনস্তাকারীকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। গ্রেপ্তার নাজিম উদ্দিন (৪৫) ওই বাসের কন্ডাক্টর ও চালকের সহকারী বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের বছিলা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, একটি বাসে এক তরুণী তাঁর পোশাক নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদ করছেন। বাসে ওঠার পর সামনের আসনে বসা ওই ব্যক্তি তাঁর পোশাক নিয়ে অশোভন মন্তব্য করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে তরুণী প্রতিবাদ জানাতে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রশ্ন করেন, ‘আমার পোশাক নিয়ে আপনার সমস্যা কী?’ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে ওই ব্যক্তি উঠে দাঁড়িয়ে তরুণীকে চড় মারেন। মুহূর্তেই তরুণী জুতা খুলে পাল্টা আঘাত করেন। ভিডিওতে আরও দেখা যায়, ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে দুজনই বাসের সামনের দিকে পড়ে যান। তরুণী নিজেকে সামলে নিয়ে আবারও প্রতিরোধ করেন।

ঘটনার ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর নানামুখী প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অনেকেই তরুণীর সাহসী অবস্থানের প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে কেউ কেউ ঘটনাটিতে উভয় পক্ষের আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

নাজিম উদ্দিনকে আটক করার সঙ্গে যুক্ত র‍্যাব-৪–এর মেজর আবরার ফয়সাল সাদী প্রথম আলোকে বলেন, তরুণীকে কটূক্তি ও হেনস্তা করার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর হেনস্তকারী ব্যক্তিকে আটক করতে র‍্যাব-৪–এর একটি দল অভিযান শুরু করে। গতকাল সন্ধ্যায় নাজিম উদ্দিনকে শনাক্ত করে আটক করা হয়। পরে তাঁকে মোহাম্মদপুর থানায় সোপর্দ করা হয়।

যোগাযোগ করা হলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিক প্রথম আলোকে বলেন, হেনস্তার শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শ্লীলতাহানির অভিযোগ এনে আজ শুক্রবার সকালে নাজিম উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নাজিম উদ্দিন ধানমন্ডি ১৫ থকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় চলাচলরত রমজান পরিবহনের কন্ডাক্টর। ভাড়া নিয়ে কথা–কাটাকাটির জের ধরে তাঁদের দুজনের মধ্যে মারামারি হয়। ছাত্রীটি মোহাম্মদপুরের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন।

আজ সন্ধ্যায় পাঠানো র‍্যাব-৪–এর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি রমজান পরিবহনের একটি বাস ধানমন্ডি ১৫ থেকে মোহাম্মদপুরের বছিলায় যাচ্ছিল। বাসটি বছিলার মেট্রো হাউজিংয়ের সামনে পৌঁছালে চালকের সহকারী মো. নিজাম উদ্দিন বাসটির যাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর দিকে তাকিয়ে তাঁর পোশাক নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন। এতে ওই তরুণী প্রতিবাদ করায় নাজিম উদ্দিন তাঁর সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন এবং তাঁকে চড় মারেন। একপর্যায়ে তরুণীও আত্মরক্ষার্থে নিজের পায়ের জুতা খুলে অভিযুক্ত নাজিম উদ্দিনকে আঘাত করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দুই শিশুর ঝগড়ায় জড়ালেন বড়রা, বড় ভাইয়ের হাতে খুন ছোট ভাই
  • রাজশাহীতে ‘প্রেমিকার’ সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে মারধরের শিকার কিশোরের মৃত্যু
  • মোহাম্মদপুরে বাসে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীকে হেনস্তার ভিডিও ভাইরাল, হেনস্তাকারী গ্রেপ্তার