যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য আলোচনা এবার লন্ডনে
Published: 8th, June 2025 GMT
বাণিজ্য বিরোধ নিরসনের লক্ষ্যে এবার লন্ডনে আলোচনায় বসছেন বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ—যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। আগামীকাল সোমবার অনুষ্ঠেয় এই বাণিজ্য আলোচনা নিয়ে বিশ্বজুড়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে। খবর রয়টার্সের
এ সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনায় অংশ নেবেন ট্রেজারি সেক্রেটারি তথা অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট, কমার্স সেক্রেটারি বা বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক এবং ট্রেড রিপ্রেজেনটেটিভ জেমিসন গ্রিয়ার। ‘বৈঠকটি খুব ভালো হবে’ বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন ট্রাম্প।
এদিকে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করবেন ভাইস-প্রিমিয়ার বা উপপ্রধানমন্ত্রী হে লিফেং। তিনি আজ ৮ জুন রোববার থেকে ১৩ জুন শুক্রবার পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে অবস্থান করবেন। তাঁর সফরকালে চীন-যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক পরামর্শ ব্যবস্থার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং টেলিফোনে কথা বলেন। দুই নেতা পরস্পরের দেশে সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর আগে উভয় পক্ষের শীর্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যকার আলোচনা চালিয়ে যাওয়ায় জোর দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সি চিন পিং।
গত ১২ মে জেনেভায় আলোচনার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন ৯০ দিনের একটি প্রাথমিক চুক্তিতে পৌঁছায়। এতে উভয় দেশ একে অপরের ওপর আরোপিত শুল্ক শিথিল করতে সম্মত হয়। এই ঘোষণার পর বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে স্বস্তি ফিরে আসে। যদিও দুই দেশের মধ্যে জটিল ইস্যুগুলো এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
ট্রাম্প বারবার বিভিন্ন বাণিজ্য অংশীদারের ওপর শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তবে শেষ মুহূর্তে কিছু পদক্ষেপ আবার প্রত্যাহারও করেছেন। তাঁর এই অনিয়মিত, কখনো কখনো সিদ্ধান্ত বদলানোর কৌশলে বিশ্বনেতারা বিভ্রান্ত হয়েছেন এবং ব্যবসায়িক খাতের শীর্ষ নির্বাহীরাও আতঙ্কে রয়েছেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, চীন বিরল খনিজ রপ্তানিকে কৌশলগত চাপের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছে। এসব খনিজ চীন থেকে রপ্তানি বন্ধ হলে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধাক্কা খেতে পারে। যার ফলে ট্রাম্পের ওপর রাজনৈতিক চাপ বাড়তে পারে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনকে তাদের শীর্ষ ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, চীনই একমাত্র দেশ, যেটি অর্থনৈতিক ও সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম।
গত ২ এপ্রিল ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক আরোপের মূল নিশানা ছিল চীন। দেশটির পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন তিনি। জবাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক ঘোষণা করে চীন। পরে অবশ্য উভয় পক্ষই সাময়িকভাবে উত্তেজনা কমাতে রাজি হয়। এর আগে আগামী ৯ জুলাই পর্যন্ত অন্যান্য দেশের ওপর ব্যাপক হারে আরোপিত শুল্ক স্থগিত করে ওয়াশিংটন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।