ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে, যদি ইরান ভবিষ্যতে ইসরায়েলি আক্রমণের শিকার হয়, তাহলে দেশের সশস্ত্র বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলের ‘গোপন পারমাণবিক স্থাপনায়’ হামলা চালাবে। 

সম্প্রতি ইসরায়েলের স্পর্শকাতর পারমাণবিক তথ্য পাওয়ার দাবি করে ইরান। এরপরপরই সোমবার (৯ জুন) দেশটির সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল (এসএনএসসি) এক বিবৃতিতে ইসরায়েলকে সতর্ক করে এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে। 

মঙ্গলবার (১০ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে চীনের বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।

আরো পড়ুন:

গাজা অভিমুখী ‘ম্যাডলিন’ আরোহীদের অপহরণ ইসরায়েলি বাহিনীর

ইসরায়েলি হামলায় আরো ১০৮ ফিলিস্তিনি নিহত

ইরানের গোয়েন্দামন্ত্রী ইসমাইল খাতিব রবিবার (৮ জুন) দাবি করেন, ইরান গোয়েন্দা অভিযানের মাধ্যমে ইসরায়েলের গুরুত্বপূর্ণ, স্পর্শকাতর কয়েক হাজার নথি হাতে পেয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে পারমাণবিক অবকাঠামোর তথ্য ও পরিকল্পনার নথি।

ইসরায়েল দীর্ঘদিন থেকেই ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলার হুমকি দিয়ে আসছিল। আর এবার ইরান দাবি করলো, তারা ইসরায়েলের পারমাণবিক অবকাঠামোর নথি হাতে পেয়েছে।

সোমবার (৯ জুন) ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল (এসএনএসসি) জানায়, কয়েক মাসের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ফলে ইরানের সশস্ত্র বাহিনী সম্ভাব্য প্রতিশোধমূলক হামলার জন্য ইসরায়েলি উচ্চ-মূল্যবান লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ইসরায়েল যদি ইরানের স্বার্থের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেয়, তাহলে প্রতিশোধমূলক হামলায় ‘গোপন সামরিক স্থাপনা’ লক্ষ্যবস্তু করবে ইরান। 

ইরানি গোয়েন্দারা ইসরায়েলের নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে গোপন নথির বিশাল ভাণ্ডার নিজেদের দখলে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছে। ইরানি কর্তৃপক্ষের মতে, এই অভিযানটি এক রাতের মধ্যে সম্পন্ন হয়নি। বরং, বহুদিন আগেই নথিগুলো সংগ্রহ করা হলেও সেগুলো নিরাপদে তেহরানে পৌঁছাতে এবং কোনো তথ্য যেন ফাঁস না হয়, সেজন্য এক দীর্ঘ সময় ধরে ছিল সম্পূর্ণ নীরবতা ও সংবাদ ব্ল্যাকআউট।

ইরানের সুপ্রিম ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের মতে, “এটি শত্রু পক্ষের বিভ্রান্তিকর তথ্য মোকাবিলা এবং ইরানের প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করার লক্ষ্যে একটি বৃহত্তর কৌশলগত উদ্যোগের অংশ।” 

কাউন্সিল বলছে, ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোতে হামলার জবাবে তেহরানকে ‘গোপন পারমাণবিক স্থাপনায়’ দ্রুত হামলার সুবিধা দেবে।

ইসরায়েল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী বলে বিশ্বাস করা হয়। যদিও ইসরায়েল কখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এটি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেনি, বরং কৌশলগত অস্পষ্টতার দীর্ঘস্থায়ী নীতি বজায় রেখেছে।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল র ক উন স ল লক ষ য ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ইরান যে তিন কারণে পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না

বিশ্বরাজনীতিতে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি একটি বহুল আলোচিত ও বিতর্কিত ইস্যু। পশ্চিমা শক্তিগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল, বহু বছর ধরে অভিযোগ করে আসছে, ইরান নাকি গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) বা যুক্তরাষ্ট্রের নিজস্ব গোয়েন্দা সংস্থাগুলো আজ পর্যন্ত এমন কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি, যা এ দাবিকে প্রতিষ্ঠিত করে। অন্যদিকে ইরান শুরু থেকেই বলে আসছে যে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত।

প্রশ্ন হলো, যদি ইরান সত্যিই পারমাণবিক অস্ত্র বানাতে চাইত, তাহলে গত দুই দশকে তা তৈরি করেনি কেন? আর যদি তা না-ই চায়, তাহলে উচ্চমাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ চালিয়ে যাচ্ছে কেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে হলে ইরানের ধর্মীয় অবস্থান, কৌশলগত চিন্তা, রাজনৈতিক বাস্তবতা এবং আন্তর্জাতিক রাজনীতির দ্বিচারিতা একত্রে বিশ্লেষণ করতে হবে।

আরও পড়ুনইরান এবার বড় যুদ্ধের জন্য যেভাবে প্রস্তুত হবে০৬ জুলাই ২০২৫ধর্মীয় নিষেধাজ্ঞা ও নৈতিক অবস্থান

২০০৩ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একটি ঐতিহাসিক ফতোয়া জারি করেন। সেখানে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি, মজুত কিংবা ব্যবহার ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।’ এ সিদ্ধান্ত শুধুই ধর্মীয় নয়, বরং একটি নৈতিক অবস্থানও, যেখানে নিরীহ মানুষ হত্যাকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পারমাণবিক বোমা শুধু সামরিক লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করে না, বরং শহর, জনপদ ও লাখ লাখ নিরীহ মানুষের প্রাণ হরণ করে। ইসলামের যুদ্ধনীতিতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

ইরান মনে করে, পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার শুধু মানবতার বিরুদ্ধে নয়, পরিবেশ ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিরুদ্ধে চরম অন্যায়। হিরোশিমা-নাগাসাকির দৃষ্টান্ত এ বিষয়ে যথেষ্ট প্রমাণ দেয়।

কৌশলগত ও সামরিক বাস্তবতা

অনেকের ধারণা, পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেই একটি দেশ নিরাপদ থাকে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। পাকিস্তান ১৯৯৮ সালে পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করলেও ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযানে অংশ নিতে বাধ্য হয়। উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও আন্তর্জাতিকভাবে একঘরে। এমনকি রাশিয়া, যাদের বিশ্বের সর্বোচ্চ পারমাণবিক অস্ত্র মজুত রয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটোর সঙ্গে কৌশলগতভাবে চাপে পড়েছে। ইসরায়েলও অঘোষিত পারমাণবিক অস্ত্রধারী হওয়া সত্ত্বেও ইরানের ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ’-এ বড় ধরনের সামরিক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে।

এ বাস্তবতা ইরানকে বুঝিয়ে দিয়েছে, পারমাণবিক অস্ত্র নয়, কার্যকর প্রতিরোধক্ষমতা ও প্রযুক্তিগত অগ্রগতিই নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। তাই তারা শক্তিশালী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, চালকবিহীন বিমান বা ড্রোন এবং কৌশলগত অস্ত্র নির্মাণে জোর দিয়েছে।

সামরিক মহড়া চলাকালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের অজ্ঞাত স্থান থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ছবিটি প্রকাশ করে ইরান

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরান যে তিন কারণে পারমাণবিক অস্ত্র বানাবে না