ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় বাড়ি ফেরার পথে ছাত্রদলের এক নেতাকে কুপিয়ে জখম করা হয়েছে। গতকাল সোমবার রাতে উপজেলার দুধনই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন রাস্তায় দেশি অস্ত্র নিয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। পরে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

আহত জালাল উদ্দিন উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া ইউনিয়নের কাশিনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা ও উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক।

স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী ও কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ধোবাউড়া ডাকবাংলো চত্বরে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহর ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান শেষে বাড়ি ফিরছিলেন জালাল উদ্দিন। রাত ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পথ রোধ করে জালালের ওপর দেশি অস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। পরে তাঁর চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে যান। সেখানে আহত অবস্থায় উদ্ধারের পর তাঁকে ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তাঁরা। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য জালালকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাঁর মাথা ও হাতে গভীর ক্ষত দেখা গেছে।

ধোবাউড়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সদস্যসচিব মামুন হাসান দাবি করেন, মূলত পূর্ববিরোধের জেরে হামলার ঘটনাটি ঘটেছে। মাস দুয়েক আগে একটি বিষয় নিয়ে রাউতি গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ও তাঁদের লোকজন মামুন হাসানের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। গতকাল রাতে দেলোয়ার তাঁর লোকজন নিয়ে এ হামলা করেন।

এদিকে জালাল উদ্দিনের ওপর হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ। ঘটনার পরপর ফেসবুকে স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, ‘ধোবাউড়া উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জালাল উদ্দিনের ওপর নৃশংস হামলাকারীর বিচার হবেই হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান, দ্রুত হামলাকারীদের আটক করুন, সে যেই হোক না কেন।’

এ ঘটনার পরপর অভিযুক্ত দেলোয়ার ও তাঁর লোকজন এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন বলে জানান ধোবাউড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন সরকার। তিনি বলেন, ‘আমরা আজ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত লিখিত অভিযোগ পাইনি। তবে প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছি, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আগের বিরোধ নিয়ে এ হামলার ঘটনা। ঘটনার সঙ্গে দেলোয়ার হোসেনসহ যাদের নাম এসেছে, তাদের বাড়িতে পুলিশ গতকাল রাতেই অভিযানে যায়। কিন্তু ঘটনা ঘটিয়েই জড়িতরা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত রদল র র ল কজন গতক ল উপজ ল র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

ময়মনসিংহের সড়ক-মহাসড়কে সাড়ে তিন বছরে ৭৭২ জনের মৃত্যু—এই ভয়াবহ পরিসংখ্যান কেবল সংখ্যা নয়, বরং প্রতিদিনের রূঢ় বাস্তবতা। প্রতিটি প্রাণহানি একটি পরিবারকে শোকে নিমজ্জিত করেছে, অনিশ্চয়তায় ঠেলে দিয়েছে। একই সময়ে গুরুতর আহত ও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন প্রায় এক হাজার মানুষ। এই পরিস্থিতি আমাদের সড়কব্যবস্থার নৈরাজ্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ দুরবস্থা তুলে ধরে।

বিআরটিএর তথ্য বলছে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ময়মনসিংহ-হালুয়াঘাট আঞ্চলিক সড়ক দুর্ঘটনার ‘হটস্পট’। বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং, আঁকাবাঁকা সড়ক এবং থ্রি-হুইলারের অবাধ চলাচল—সব মিলিয়ে এই সড়কগুলোকে মৃত্যুকূপে পরিণত করেছে। চার লেনের মহাসড়ক হলেও উল্টো পথে গাড়ি চলা, গতিসীমা অমান্য করা এবং হাইওয়েতে ধীরগতির থ্রি-হুইলার চলাচল পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক করছে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করে সতর্কবার্তা ও গতিসীমা নির্ধারণ করেছে, কিন্তু চালকদের অনিয়ম ও বেপরোয়া গতির কারণে তা কোনো কাজে আসছে না। অনেক চালক মনে করেন, ভালো রাস্তা মানেই বেশি গতি। এই মানসিকতা ভাঙতে কঠোর নজরদারি ও শাস্তির বিকল্প নেই।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই মৃত্যুর মিছিল থামাতে প্রশাসনের ভূমিকা কোথায়? সড়কে নিয়ম ভাঙা, বেপরোয়া গতি, ওভারটেকিং রোধে কেন কঠোর নজরদারি ও শাস্তি নেই? জাতীয় মহাসড়কে থ্রি–হুইলার নিষিদ্ধ থাকলেও বিকল্প পরিবহন না থাকায় এবং দুর্বল নজরদারির কারণে সেগুলো নির্বিঘ্নে চলছে।

ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় প্রশাসন দুর্ঘটনার পর উদ্ধারকাজে সক্রিয় হলেও প্রতিরোধমূলক উদ্যোগের ঘাটতি প্রকট। শুধু দুর্ঘটনার পর উদ্ধার নয়, দুর্ঘটনা প্রতিরোধই হতে হবে মূল লক্ষ্য। এ জন্য বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করে হাইওয়ে পুলিশের উপস্থিতি ও নজরদারি বাড়ানো এবং দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিড ক্যামেরা বসানো জরুরি।

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক উপেক্ষিত হচ্ছে—জনসচেতনতা ও চালকের প্রশিক্ষণ। অধিকাংশ দুর্ঘটনা চালকদের অসতর্কতা, অভ্যাসগত আইন ভাঙা এবং প্রতিযোগিতামূলক গতির কারণে ঘটছে। যাত্রীদেরও সচেতন হতে হবে, যাতে তাঁরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে চালকদের বাধ্য না করেন। পাশাপাশি থ্রি-হুইলারের বিকল্প হিসেবে নির্ভরযোগ্য লোকাল পরিবহনব্যবস্থা চালু না করলে এসব দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।

বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনাগুলোকে নিছক দুর্ঘটনা বলা যায় না; এগুলো একধরনের ‘কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড’। দায়িত্বশীলদের গাফিলতি ও অবহেলার কারণে আর কোনো প্রাণ যেন সড়কে না ঝরে—এখনই সেই দাবি তুলতে হবে এবং কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করতে হবে। ময়মনসিংহের সড়কগুলোতে বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশকে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জমিজমার বিরোধে থানায় সালিসে গিয়ে ‘রাজনৈতিক মামলায়’ গ্রেপ্তার যুবক
  • ওসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ছেলের মুক্তি চেয়ে কাঁদলেন মা
  • ২৪ ঘণ্টায় ঢাকায় ২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি, আজও বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস
  • এনসিপির নাম ব্যবহার করে চাঁদাবাজি হচ্ছে: হাসনাত
  • প্রাইভেট কারে ঘুরে ফাঁদ পেতে চুরি করতেন অটোরিকশা, আটক ৪
  • বিকেলে এনপিপির পদযাত্রা-সমাবেশ, প্রস্তুত ময়মনসিংহ
  • বেপরোয়া গতির যানবাহনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন
  • অশোভন আচরণ, শিষ্টাচারবহির্ভূত বিরুদ্ধাচরণ কাম্য নয়: সৈয়দ এমরান সালেহ
  • তারাকান্দা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চকচকে ভবনে সেবা চলে খুঁড়িয়ে
  • গাজীপুরে ১০ দফা দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ, কাঁদানে গ্যাসের শেলে ছত্রভঙ্গ শ্রমিকেরা