মাংস চুরির অভিযোগে নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতন, চুল কর্তন
Published: 10th, June 2025 GMT
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে এক নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাতে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। তার বাড়িতে ভাঙচুর এবং গরু, ছাগল ও স্বর্ণালংকার লুটের অভিযোগ করেছেন তিনি।
রাতেই ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে নারীকে দ্বিতীয় দফায় তুলে নিয়ে নির্যাতনের সময় তাকে লাঞ্ছিত করে উল্লাস ও ভিডিও করতে দেখা যায় স্থানীয় লোকজনকে। ভুক্তভোগী নারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত সোমবার বিকেলে প্রতিবেশীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে। সে সময় প্রতিবেশীর স্ত্রী তাকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাংস কেড়ে নেন। এক পর্যায়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান স্বামী।
ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন রাত ৮টার দিকে তাদের বাড়িতে ভাঙচুর করে তাকে তুলে ফের প্রতিবেশীর বাড়ি নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দেন। রাত ১০টার দিকে স্বজন ও এলাকাবাসী নিয়ে সালিশ বসান স্থানীয় ইউপি সদস্য। এ সময় মারধরের শিকার নারীর দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তিনি। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে ডাকতে গেলে তার স্ত্রী মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে বেঁধে রাখেন। কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দেন। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করেন।
স্থানীয় দুই নারী চুল কেটে দিয়েছেন অভিযোগ করে ভুক্তভোগী বলেন, ‘বাড়িতে ভাঙচুর এবং গরু, ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে আমার স্বামী পালিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’
ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় শতাধিক বাসিন্দা নারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন। আনন্দ-উল্লাস করছেন। কেউ কেউ এসব দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছেন।
গ্রামে সরেজমিন দেখা যায়, বাড়িতে পড়ে আছে দড়ি ও কাটা চুলের অংশ। নারীর ঘরের দরজায় তালা লাগানো। ভেতরে আসবাব ভাঙচুর করা। গোয়ালে গরু-ছাগল নেই।
এ সময় প্রতিবেশী ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন আলী দাবি করেন, তার ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়ে নারী। তার ভাষ্য, ‘তিনি এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছেন। সেই রাগে লোকজন ধরে মারধর করে চুল কেটেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত না।’
তার স্ত্রী বলেন, ‘আমি দড়ি দিয়ে বেঁধে একটা চড় মারিছি। কিন্তু কারা চুল কেটেছে, জানি না।’
মারধরে অভিযুক্ত কাশেম বলেন, ‘বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে নারী। ক্ষতিপূরণ হিসেবে সালিশে তার গরু, ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব বিষয়ে মেম্বারের (ইউপি সদস্য) সঙ্গে কথা বলুন।’
গরু ও ছাগল নেওয়ার কথা অস্বীকার করে ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, ‘আমি শুধু নারীকে স্বজনের হাতে তুলে দিয়েছি। আর কি ঘটেছে, তা জানি না। আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।’
ঘটনা যাই হোক, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নয় মন্তব্য করে কুমারখালী থানার ওসি মো.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
যুদ্ধবিরতি নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রতিনিধি
যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার জন্য জার্মানিতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রতিনিধি দল। সোমবার এই বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ এবং জামাতা জ্যারেড কুশনার ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয়দের সাথে আলোচনার জন্য জার্মানি সফর করছেন।
মার্কিন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ইউক্রেন ও রাশিয়ার সাথে আলোচনার নেতৃত্বদানকারী উইটকফকে পাঠানোর সিদ্ধান্তটি একটি সংকেত বলে মনে হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, ওয়াশিংটন অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখছে। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানিয়েছিল, ট্রাম্প যদি মনে করেন যে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে তবেই কেবল একজন কর্মকর্তাকে আলোচনায় পাঠাবেন।
বৈঠক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে জার্মান সরকারের একটি সূত্র বলেছেন, “ইউক্রেনে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা সপ্তাহান্তে বার্লিনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের পররাষ্ট্রনীতি উপদেষ্টাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।”
সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর মের্জ বার্লিনে জেলেনস্কি এবং ইউরোপীয় নেতাদের একটি শীর্ষ সম্মেলনের আতিথেয়তা করছেন, যা ইউরোপ জুড়ে মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেনীয় নেতার প্রতি সমর্থনের ধারাবাহিক প্রকাশ্য প্রদর্শনের সর্বশেষ ঘটনা। কারণ প্রাথমিকভাবে মস্কোর প্রধান দাবিগুলিকে সমর্থন করে এমন একটি শান্তি পরিকল্পনায় স্বাক্ষর করার জন্য কিয়েভ ওয়াশিংটনের চাপের মুখে রয়েছে।
ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি গত কয়েক সপ্তাহ ধরে মার্কিন প্রস্তাবগুলোকে পরিমার্জন করার জন্য কাজ করছে। আগের প্রস্তাবে কিয়েভকে আরো ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার, ন্যাটোতে যোগদানের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ত্যাগ করার এবং তার সশস্ত্র বাহিনীর সীমাবদ্ধতা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
ঢাকা/শাহেদ