কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মাংস চুরির অভিযোগে এক নারীকে গাছে বেঁধে নির্যাতনের পর মাথার চুল কেটে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার রাতে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। তার বাড়িতে ভাঙচুর এবং গরু, ছাগল ও স্বর্ণালংকার লুটের অভিযোগ করেছেন তিনি।

রাতেই ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এতে নারীকে দ্বিতীয় দফায় তুলে নিয়ে নির্যাতনের সময় তাকে লাঞ্ছিত করে উল্লাস ও ভিডিও করতে দেখা যায় স্থানীয় লোকজনকে। ভুক্তভোগী নারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গত সোমবার বিকেলে প্রতিবেশীর ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে ভুক্তভোগী নারীর বিরুদ্ধে। সে সময় প্রতিবেশীর স্ত্রী তাকে ধরে বাড়ির উঠানে পেয়ারা গাছের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করে মাংস কেড়ে নেন। এক পর্যায়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যান স্বামী। 

ঘটনার পর স্থানীয় লোকজন রাত ৮টার দিকে তাদের বাড়িতে ভাঙচুর করে তাকে তুলে ফের প্রতিবেশীর বাড়ি নিয়ে আসেন। সেখানে তাকে মারধর করে মাথার চুল কেটে দেন। রাত ১০টার দিকে স্বজন ও এলাকাবাসী নিয়ে সালিশ বসান স্থানীয় ইউপি সদস্য। এ সময় মারধরের শিকার নারীর দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালংকারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, মহিলা ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন তিনি। তার শরীরের একাধিক স্থানে আঘাতের চিহ্ন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে ডাকতে গেলে তার স্ত্রী মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে বেঁধে রাখেন। কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দেন। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছে বেঁধে মারধর করেন।

স্থানীয় দুই নারী চুল কেটে দিয়েছেন অভিযোগ করে ভুক্তভোগী বলেন, ‘বাড়িতে ভাঙচুর এবং গরু, ছাগল, স্বর্ণালংকারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। ভয়ে আমার স্বামী পালিয়েছে। আমি এর সঠিক বিচার চাই।’

ঘটনার পর ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় শতাধিক বাসিন্দা নারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ মাথার কাপড় সরিয়ে দিচ্ছেন। আনন্দ-উল্লাস করছেন। কেউ কেউ এসব দৃশ্য মোবাইল ফোনে ভিডিও ধারণ করছেন। 

গ্রামে সরেজমিন দেখা যায়, বাড়িতে পড়ে আছে দড়ি ও কাটা চুলের অংশ। নারীর ঘরের দরজায় তালা লাগানো। ভেতরে আসবাব ভাঙচুর করা। গোয়ালে গরু-ছাগল নেই।

এ সময় প্রতিবেশী ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন আলী দাবি করেন, তার ঘর থেকে ৪১ হাজার টাকা ও মাংস চুরি করে হাতেনাতে ধরা পড়ে নারী। তার ভাষ্য, ‘তিনি এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছেন। সেই রাগে লোকজন ধরে মারধর করে চুল কেটেছে। আমরা এর সঙ্গে জড়িত না।’ 

তার স্ত্রী বলেন, ‘আমি দড়ি দিয়ে বেঁধে একটা চড় মারিছি। কিন্তু কারা চুল কেটেছে, জানি না।’

মারধরে অভিযুক্ত কাশেম বলেন, ‘বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছে নারী। ক্ষতিপূরণ হিসেবে সালিশে তার গরু, ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এসব বিষয়ে মেম্বারের (ইউপি সদস্য) সঙ্গে কথা বলুন।’ 

গরু ও ছাগল নেওয়ার কথা অস্বীকার করে ইউপি সদস্য শাহ আলম বলেন, ‘আমি শুধু নারীকে স্বজনের হাতে তুলে দিয়েছি। আর কি ঘটেছে, তা জানি না। আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।’

ঘটনা যাই হোক, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নয় মন্তব্য করে কুমারখালী থানার ওসি মো.

সোলাইমান শেখ বলেন, খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে গিয়ে ভুক্তভোগী ও তার স্বজনকে পায়নি পুলিশ। এ ঘটনায় এখনও লিখিত অভিযোগ দেয়নি কেউ। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

২৩৭ জনের তালিকায় নেই রুমিন ফারহানা

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ২৩৭টি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এ তালিকায় নেই দলটির আলোচিত নেত্রী রুমিন ফারহানা। 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল, আশুগঞ্জ এবং বিজয়নগর আংশিক) আসনে বিএনপির প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল রুমিন ফারহানার। তবে এই আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইলের ৭ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেলেন যারা 

কক্সবাজার-১ আসনে ধানের শীষের কাণ্ডারী সালাহউদ্দিন

সোমবার (৩ নভেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্ভব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এর আগে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে দলীয় প্রার্থীদের প্রাথমিক নামের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়।

রুমিন ফারহানা একাদশ জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তিনি দলের সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘‘দীর্ঘ ১৬ বছর পর আগামী ফেব্রুয়ারিতে আমরা গণতান্ত্রিক নির্বাচন পেতে যাচ্ছি। সেই নির্বাচনে ২৩৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকা দেওয়া হচ্ছে। আর যেসব আসনে যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গীদের প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করবে, সেটি বিএনপি সমন্বয় করে নেবে।’’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘দিনাজপুর-৩, বগুড়া-৭ ও ফেনী-১ থেকে আগামী নির্বাচনে অংশ নেবেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আর দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লড়বেন বগুড়া-৬ আসন থেকে।’’

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘‘এটা প্রাথমিক তালিকা। আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটি মনে করলে যে কোনো সংশোধনী আসতে পারে।’’
 

ঢাকা/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ