ভিনিসিয়ুসের গোলে বিশ্বকাপে জায়গা করে নিল ব্রাজিল
Published: 11th, June 2025 GMT
ব্রাজিল ১ : ০ প্যারাগুয়ে
বিশ্বকাপের টিকিট, ঘরের মাঠে কোচ কার্লো আনচেলত্তির অভিষেক এবং নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য আজ প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচটি ব্রাজিলের জন্য ছিল মহাগুরুত্বপূর্ণ। আর সেই মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে দারুণ এক জয় পেয়েছে ব্রাজিল। ভিনিসিয়ুস জুনিয়রের গোলে প্যারাগুয়ের বিপক্ষে ব্রাজিলের জয় ১-০ ব্যবধানে।
গোলের এই ব্যবধান অবশ্য ম্যাচের চিত্রকে পুরোপুরি তুলে ধরতে পারছে না। বাস্তবতা হচ্ছে, আগের ম্যাচে ইকুয়েডরের বিপক্ষে নড়বড়ে থাকা ব্রাজিল এই ম্যাচে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। উপহার দিয়েছে গতিময় ও আক্রমণাত্মক ফুটবলও।
ম্যাচে ৭৩ শতাংশ বল দখলে রেখে ব্রাজিল শট নেয় ১১টি, যার ৪টি ছিল লক্ষ্যে। ব্রাজিলের আজকের খেলায় আনচেলত্তির কৌশলের ছাপও ফুটে উঠেছে দারুণভাবে। পাশাপাশি এই জয়ে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে বিশ্বকাপের টিকিটও নিশ্চিত করল ব্রাজিল।
ঘরের মাঠে অভিষেকের একদিন আগে নিজের ৬৬তম জন্মদিন পালন করেন আনচেলত্তি। ম্যাচের আগে উপহার হিসেবে শিষ্যদের কাছ থেকে জয়টাই চেয়েছিলেন তিনি। শিষ্যরাও তাঁকে নিরাশ করেননি। জয়ের পাশাপাশি সাও পাওলোতে আজ প্রত্যয়ী ফুটবলও উপহার দিয়েছেন ভিনিসিয়ুস-রাফিনিয়ারা।
আরও পড়ুনআলমাদার গোলে কলম্বিয়ার বিপক্ষে হার এড়াল ১০ জনের আর্জেন্টিনা ১ ঘণ্টা আগেইকুয়েডরের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ব্রাজিলের পারফরম্যান্স নিয়ে কাটাছেঁড়া হয়েছে অনেক। বিশেষ করে সেই ম্যাচে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের দুর্বলতা ছিল চোখে পড়ার মতো। পুরো ম্যাচে মাত্র ৩টি শট নিতে পেরেছিল আনচেলত্তির দল। ম্যাচের পর আক্রমণে গতি আনার কথা বলেছিলেন ব্রাজিল কোচ নিজেও। সেই লক্ষ্যে একাদশে উল্লেখযোগ্য তিনটি পরিবর্তনের কথাও শোনা গিয়েছিল।
ম্যাচের আগে ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যমগুলো যে তিনটি পরিবর্তনের কথা বলেছিল সেই পরিবর্তন নিয়েই শুরু হয় আজকের ম্যাচটি। গেরসন, এস্তেভাও ও রিচার্লিসনের জায়গায় একাদশে সুযোগ পান গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি, রাফিনিয়া ও মাতেউস কুনিয়া।
দলের খেলাতেও এই পরিবর্তনের ছাপ ছিল স্পষ্ট।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ডেঙ্গুতে জুনের চেয়ে জুলাইয়ে মৃত্যু ও সংক্রমণ দ্বিগুণ
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় এখন প্রায় এমন কোনো এলাকা নেই, যেখানে এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব বা ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর নিচে। এমন অবস্থা চট্টগ্রাম, বরগুনা, কুমিল্লা, কক্সবাজার শহরেরও। এডিস মশার লার্ভা বা শূককীটের ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি হলো ‘ব্রুটো ইনডেক্স (বিআই)’। এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানে সেখানে ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি হবে।
মশা নিয়ে নিয়মিত জরিপ করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার। তাঁর নেতৃত্বে সম্প্রতি গবেষণায় এ চিত্র উঠে এসেছে।
দেশে এডিস মশা যেমন বাড়ছে, তেমনি বাড়ছে এ মশার কামড়ে হওয়া ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, জুন মাসের তুলনায় ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা জুলাইয়ে (৩০ জুলাই পর্যন্ত) দ্বিগুণের বেশি। আর সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ।
সংক্রমণ ও মৃত্যু দুই-ই বেশি
গতকাল পর্যন্ত দেশে ২০ হাজার ৭০২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৮১ জনের। শুধু জুন মাসে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছিল ১৯ জনের। আর চলতি মাসে মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। জুনে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৫ হাজার ৯৫১ জন। আর এ মাসে ইতিমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৪০৬ জন। চলতি মাসের সংক্রমণের এ সংখ্যা আগের ছয় মাসের বেশি। জুন থেকে জুলাই মাসে দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন ১০ হাজার ২৯৬ জন।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যত রোগী আক্রান্ত হয়েছে, এর মধ্যে মাত্র ২১ শতাংশ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার। বাকি ৭৯ শতাংশ রোগীই ঢাকার বাইরের। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮৬ রোগী ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ সময় দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এ মাসের শুরুতে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি হলেও প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ঢাকার হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি বেড়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইমরুল কায়েস চৌধুরী গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘গত বছরের চেয়ে এবার উত্তর সিটিতে রোগী ভর্তি কম। গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৪২ জন রোগী উত্তরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন, আমরা তাঁদের প্রত্যেকের তথ্য নিয়ে দেখেছি, তাঁদের মধ্যে মাত্র ১৮ জন এই সিটির বাসিন্দা। বাকিরা বাইরের।’
মৃত্যু বেশি গতবারের চেয়ে
এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে যে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তার মধ্যে ৪৬ জন মারা গেছেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। অন্যরা দেশের অন্যত্র মারা গেছেন। গত বছর (২০২৪) এ সময় ডেঙ্গুতে মারা গিয়েছিলেন ৫৬ জন।
ডেঙ্গুতে এবারের মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার পেছনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গাফিলতি, স্থানীয় সরকারের সঙ্গে স্বাস্থ্য বিভাগের সমন্বয়হীনতা, পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সরঞ্জামের অভাব এবং ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক প্রচারের অভাবকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ বিভাগের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক হালিমুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব নেই। প্রতিটি হাসপাতালকে পরিচালন বাজেট থেকে ব্যয় করতে বলা হয়েছে। মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ রোগী আসছে অনেক দেরিতে। তখন আর চিকিৎসকের কিছু করার থাকে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুতে রোগী ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ার কারণ সরকারের গতানুগতিক কাজ এবং অব্যবস্থাপনা। মানুষের কাছে ডেঙ্গু শনাক্তের সুযোগ পৌঁছায়নি। নীতিনির্ধারণী স্তরে এ নিয়ে কোনো ভাবনা আছে, এমন একেবারেই মনে হয় না।