কোরবানির গরুর লবণযুক্ত চামড়ার প্রতি বর্গফুটের দাম গতবারের চেয়ে এবার ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬০-৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে সেই দরে চামড়া বিক্রি হচ্ছে না। শনিবার ঈদুল আজহার দিনে গত বছরের কাছাকাছি দরে গরুর চামড়া বিক্রি হয়েছে। আর ছাগলের চামড়া কেনায় কোনো আগ্রহ দেখাননি ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর মোহাম্মদপুর, সায়েন্স ল্যাব ও লালবাগের পোস্তায় শনিবার লবণ ছাড়া বড় ও মাঝারি গরুর কাঁচা চামড়া ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আকারে ছোট ও মান কিছুটা খারাপ এমন চামড়া ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ঢাকার বাইরে দাম ছিল আরও কম। এতে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অনেকে লোকসানের মুখে পড়েন। দাম না পেয়ে চামড়া ফেলে দেওয়া ও মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।

চামড়ার আড়তদার ও ট্যানারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রথম দিকে গতবারের চেয়ে কিছুটা বেশি দামে চামড়া কেনাবেচা হলেও পরে দাম পড়ে যায়। অন্যদিকে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দাম তো বাড়েনি, উল্টো অধিকাংশ ক্ষেত্রে গতবারের চেয়েও কম মিলেছে।

ঈদের পরদিন রোববার সন্ধ্যায় পোস্তা পরিদর্শন করে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই বিক্রি হচ্ছে কোরবানির পশুর চামড়া। আমরা যে চামড়ার দাম নির্ধারণ করেছিলাম, সেটি ছিল লবণসহ দাম। ৭০০-৮০০ টাকা, যেটা বিক্রি হচ্ছে সেটি লবণ ছাড়া। বহু বছর ধরে যে দামে বিক্রি হতো, এই দাম তার থেকে বেশি।’

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা চামড়ার দাম পাচ্ছেন না—এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সত্য, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অসত্য। অসত্য এ জন্য, কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী যাঁদের চামড়া সংরক্ষণের ব্যাপারে কোনো অভিজ্ঞতা নেই, তাঁরা চামড়া নিয়ে আধা পচা করে ফেলছে।’

গত ২৬ মে কোরবানি পশুর লবণযুক্ত চামড়ার দর নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ঢাকায় গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয় ৬০-৬৫ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫৫-৬০ টাকা। ঢাকার বাইরের গরুর প্রতি বর্গফুট চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৫৫-৬০ টাকা, যা গত বছর ছিল ৫০-৫৫ টাকা। এ ছাড়া খাসির লবণযুক্ত চামড়া প্রতি বর্গফুট ২২-২৭ টাকা এবং বকরির চামড়া ২০-২২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

ঢাকায় চামড়ার কেনাবেচা

ঈদের দিন দুপুরের পর থেকে রাজধানীসহ আশপাশের এলাকা থেকে পোস্তায় কাঁচা চামড়া আসতে শুরু করে। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি মাদ্রাসা ও এতিমখানার প্রতিনিধিরা ট্রাক, ভ্যান ও রিকশায় করে কাঁচা চামড়া নিয়ে আসেন। আড়তদারেরা সেই চামড়া দরদাম করে কেনেন। কেনার পর আড়তে সেই চামড়ায় লবণ দিয়ে সংরক্ষণের কাজটি করেন শ্রমিকেরা।

চামড়া কেনায় তদারকি করছিলেন সুমন অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী মো.

শরীফ। তিনি জানান, প্রতি পিস গরুর চামড়া ৬৫০-৮০০ টাকায় কিনছেন। তাঁর ভাষ্য, একেকটি চামড়া প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ পড়ে যাবে ৩৫০-৪০০ টাকা। বাজার মন্দা, সে জন্য গতবারের চেয়ে কিছুটা কমে কিনছেন।

সাধারণত বড় আকারের গরুর চামড়া ৩১-৪০ বর্গফুট, মাঝারি আকারের গরুর চামড়া ২১-৩০ এবং ছোট আকারের গরুর চামড়া ১৬-২০ বর্গফুটের হয়। নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, ঢাকায় মাঝারি আকারের গরুর ২৫ বর্গফুটের একটি লবণযুক্ত চামড়ার দাম হওয়ার কথা ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬২৫ টাকা। লবণ ও চামড়ার পেছনে প্রতি চামড়ায় খরচ ৩০০-৩৫০ টাকা।

জানতে চাইলে পুরান ঢাকার পোস্তা এলাকায় কাঁচা চামড়ার আড়তদারদের সংগঠন বিএইচএসএমএর সভাপতি মঞ্জুরুল হাসান বলেন, সরকার নির্ধারিত দরে ট্যানারিগুলো আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া কিনবে। তবে তারা চামড়া কেনার সময় ২০-৩০ শতাংশ বাদ দেয়। আবার ২০ বর্গফুটের নিচে চামড়া কেনে না তারা। ফলে সব মিলিয়ে চামড়া কিনতে হয় আড়তদারদের।

ঢাকার বাইরে দাম কম

চট্টগ্রামে দাম না পেয়ে নগরের বিভিন্ন রাস্তায় কোরবানির চামড়া ফেলে চলে যান কয়েক শ মৌসুমি ব্যবসায়ী। মাটিতে পুঁতে ফেলার ঘটনাও ঘটে। রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত ১০ টন চামড়া অপসারণ করেন সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।

দাম না পাওয়ায় আড়তদারদের ওপর দায় চাপিয়েছেন মৌসুমি বিক্রেতারা। তাঁরা বলেন, আড়তদার ও বড় চামড়া ব্যবসায়ীরা যোগসাজশে দাম ধসিয়ে দিয়েছেন। এ কারণে পথে বসেছেন শতাধিক ছোট ব্যবসায়ী।

জানতে চাইলে বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মাহবুবুল আলম বলেন, অনেকেই বেশি দামে বিক্রি করতে চাওয়ায় ক্রেতা পাননি। আবার অনেকে দেরিতে চামড়া এনেছেন। এর মধ্যে চামড়া পচে যাওয়ায় কেউ কেনেননি। তবে তাঁরা শুরুতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় চামড়া কিনেছেন। আবার ২০০ টাকায়ও কিনেছেন।

চামড়ার দাম বাড়বে কীভাবে

রাজধানীর হাজারীবাগ থেকে চামড়াশিল্পকে দূষণমুক্ত পরিকল্পিত শিল্পনগরে স্থানান্তরের জন্য ২০০৩ সালে একটি প্রকল্প নেয় সরকার। ২১ বছরেও এই চামড়াশিল্প নগরকে পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়নি। সাভারের হেমায়েতপুরের ২০০ একর জমিতে গড়ে ওঠা এই চামড়াশিল্প নগরের সিইটিপি (কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগার) পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় পাশের ধলেশ্বরী নদী দূষণের শিকার হচ্ছে।

চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরের দূষণ বন্ধ না হওয়ায় ইউরোপ-আমেরিকার বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড ও ক্রেতাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি বাংলাদেশি চামড়া কিনছে না। ফলে বাংলাদেশি চামড়ার বড় ক্রেতা বর্তমানে চীন। তারা চামড়ার মূল্য কম দেয়।

জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র‍্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ইউসুফ বলেন, কোরবানির ঈদে একসঙ্গে প্রচুর চামড়া সরবরাহ হয়। যথাযথভাবে চামড়া সংরক্ষণ না করার কারণে মূল্য পান না অধিকাংশ ব্যবসায়ী। অন্যদিকে চামড়াশিল্পকে এখনো দূষণমুক্ত করা যায়নি। হেমায়েতপুরের চামড়াশিল্প নগরকে পরিবেশবান্ধব করা গেলে বছরে ১০-১২ বিলিয়ন ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করা সম্ভব। সেটি হলে কোরবানির চামড়ার দাম এমনিতেই বেড়ে যেত।

[প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন প্রথম আলোর নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম]

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতব র র চ য় ব যবস য় র ক রব ন র আড়তদ র র লবণ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বিসিএলে বিদেশি দল, এনসিএলে বিদেশি ক্রিকেটার

দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন আজকের নয়। জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ যে মানের হয়, যেভাবে আয়োজন হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে হরহামেশা। অতীতে সমালোচনার পর কিছুটা মান বেড়েছে। কিন্তু তারপরও ‘আপ টু মার্ক’ হয়নি।

বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে দিব‌্যি পারফর্ম করা ক্রিকেটাররা যখন জাতীয় দলে এসে ধুকতে থাকেন তখন তারতম‌্য প্রকটভাবে ফুটে উঠে। এজন‌্য ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটারকে নিয়ে আসতে চায় বিসিবি। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে যুক্ত করতে চায় বিদেশি দল।

বিসিবির পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম‌্যান আকরাম খান রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

তিন সপ্তাহের জন্য আসছেন উড, মনোবিদ স্কট

সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার বেলায়েত হোসেন মারা গেছেন

বিসিএল শুরু থেকে ছিল ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রতিযোগিতা। ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন, প্রাইম ব‌্যাংক সাউথ জোন, ইসলামী ব‌্যাংক ইষ্ট জোন ও বিসিবি নর্থ জোন নামে চারটি দল শুরুর কয়েক বছর বিসিএলে অংশ নিয়েছে। পেশাদারিত্বের ঘাটতি, পরিকল্পনার অভাব এবং বাণিজ‌্যিকভাবে লাভবান না হওয়ায় তিনটি ফ্রাঞ্চাইজি ধীরে ধীরে সরে যায়। পরবর্তীতে বিসিবি চারটি দলই নিজস্ব খরচে পরিচালনা করে বিসিএল চালু রাখে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীতার অভাব বোঝা যায়।

এজন‌্য বিসিবি সামনের আসরে বিদেশ থেকে একটি দল নিয়ে আসতে চায়। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। বিসিএল যেই সময়ে আয়োজন করতে চাচ্ছে সেই সময়ে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে ব‌্যস্ত থাকবেন। আফগানিস্তানকে চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছে। বিসিবির পুরো খরচেই অতিথি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। বাকি তিনটি দল গঠন করবে বিসিবি।

আকরাম খান বলেছেন, ‘‘আমরা প্রথমবারের মতো বিসিএলে একটি বিদেশি দলকে পেতে যাচ্ছি। হয়তো তারা এ দল হিসেবে আসবে। নয়তো অন‌্য কোনো নামে। এক মাস এই টুর্নামেন্ট চলবে। ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’’

এদিকে জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটার অন্তর্ভূক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তারা যুক্ত হবেন, কিভাবে আসবেন, পারিশ্রমিক কত হতে পারে সেসব নিয়ে এখনও কোনো উপায় খুঁজতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে ভালোমানের বিদেশি খোঁজার প্রক্রিয়া চলছে।

তাদের পারিশ্রমিক চূড়ান্ত করা, পুরো আসরে অ‌্যাভেইলেভেল থাকবেন কিনা সেসব নিয়েও কাজ হচ্ছে। এজন‌্য আগেভাগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না আকরাম।

আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দুই স্তরে জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আট দলে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার রাখার ইচ্ছা বিসিবির। অতীতে বিদেশি ক্রিকেটার জাতীয় ক্রিকেট লিগে অংশ নিয়েছে। ইমরান ফরহাদ, আমির ওয়াসিমরা খেলেছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথম শ্রেণির এই টুর্মামেন্টে।

মূলত প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং মান বাড়াতে এই উদ‌্যোগ নিতে যাচ্ছে আয়োজকরা। যদিও একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম প্লেয়িং কন্ডিশনে সব সময়ই ছিল, ছিল সর্বশেষ মৌসুমেও। বিভাগীয় দলগুলো আগ্রহ না থাকায় বিসিবিও জোর দেয়নি। তবে এবার বিসিবি বিদেশি ক্রিকেটারকে যুক্ত করবে। পাশাপাশি তাদের পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টিও দেখভাল করবে।

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ