‘বাড়িতে নিলে আরও নচ হবে’, হাটেই কম দামে চামড়া বিক্রি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর
Published: 11th, June 2025 GMT
রংপুর থেকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর ঐতিহ্যবাহী চামড়ার হাটে গরুর চামড়া বিক্রি করতে এসেছিলেন সাদিকুল ইসলাম (৪০)। আজ বুধবার সকাল সাতটার দিকে হাটে পৌঁছান তিনি। এরপর ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। কিন্তু কেউ তাঁর চামড়ার দাম বলেননি। কেউ কেউ বললেও তা ছিল পানির দামে। বেলা একটার দিকে বাধ্য হয়ে তিনি ২০ হাজার টাকায় কেনা চামড়া মাত্র ৯ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। ফেরার সময় তিনি বলেন, ‘এগুলে বাড়িত নিয়া গ্যালে আরও বেশি নচ হবি, ম্যালা ট্যাকা ভ্যান ভরা নাগবে। তাই ১১ হাজার ট্যাকা নচ করি বেচনো।’
একই হাটে ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে এসেছিলেন ফুলছড়ির বালাসি গ্রামের সুখলাল রবিদাস (৫৮)। তিনি প্রতিটি ছাগলের চামড়া ২৫০ টাকা দরে মোট সাত হাজার টাকায় কিনেছিলেন। তিনি বলেন, ‘সোকালে হাটোত আচ্চি। পাঁচ হাজার ট্যাকা নচ দিয়া দুই হাজারোত চামড়া বেচনো।’
হাটের এক ক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ছাগলের চামড়া ট্যানারির মালিকেরা কিনেন না। তাই পুকুরে মাছের খাবার জন্য প্রতি কেজি ছাগলের চামড়া ৩০ টাকা হিসাবে কিনলাম।’
সাদিকুল ও সুখলালের মতো অন্তত ২৫ জন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আজ একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা জানান।
৪০ বছর ধরে ঈদুল আজহার পরের বুধবার এই হাট বসছে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার কালীবাড়ী এলাকায় গড়ে ওঠা এই হাট উত্তরবঙ্গের অন্যতম পুরোনো ও ঐতিহ্যবাহী চামড়ার হাট। গাইবান্ধাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এখানে চামড়া বিক্রি করতে আসেন। এবারের হাটে আসার কথা ছিল বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি আসেননি।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা গেছে, হাটে প্রচুর পরিমাণে চামড়া এসেছে। অভ্যন্তরীণ সড়কের পাশে ও শেডের মেঝেতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে সেগুলো। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বিক্রির আশায় অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু ক্রেতা ছিল হাতে গোনা। দু-চারজন চামড়া কিনেছেন নামমাত্র দামে। অনেকেই চামড়া বিক্রি না করে বাড়িতে ফেরত নিয়ে গেছেন। কেউ কেউ হাটেই ফেলে দিয়েছেন।
সাদুল্লাপুর উপজেলার খোদ্দকোমরপুর গ্রামের সাহা মণ্ডল (৬০) বলেন, ‘দাদন ব্যবসায়ীর কাছে চড়া সুদে টাকা নিয়ে গরুর চামড়া কিনেছি। আজ দুই হাজার টাকা লোকসান দিয়ে বিক্রি করলাম।’
সরকার নির্ধারিত দরে চামড়ার দাম না পেয়ে হতাশার কথা জানিয়েছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। আজ বুধবার দুপুরে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর চামড়ার হাটে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ষ দ র ব যবস য় র
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিএলে বিদেশি দল, এনসিএলে বিদেশি ক্রিকেটার
দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের মান নিয়ে প্রশ্ন আজকের নয়। জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ যে মানের হয়, যেভাবে আয়োজন হয় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে হরহামেশা। অতীতে সমালোচনার পর কিছুটা মান বেড়েছে। কিন্তু তারপরও ‘আপ টু মার্ক’ হয়নি।
বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেটে দিব্যি পারফর্ম করা ক্রিকেটাররা যখন জাতীয় দলে এসে ধুকতে থাকেন তখন তারতম্য প্রকটভাবে ফুটে উঠে। এজন্য ঘরোয়া ক্রিকেটের মান বাড়াতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটারকে নিয়ে আসতে চায় বিসিবি। এছাড়া বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে যুক্ত করতে চায় বিদেশি দল।
বিসিবির পরিচালক ও টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আরো পড়ুন:
তিন সপ্তাহের জন্য আসছেন উড, মনোবিদ স্কট
সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার বেলায়েত হোসেন মারা গেছেন
বিসিএল শুরু থেকে ছিল ফ্রাঞ্চাইজিভিত্তিক প্রতিযোগিতা। ওয়ালটন সেন্ট্রাল জোন, প্রাইম ব্যাংক সাউথ জোন, ইসলামী ব্যাংক ইষ্ট জোন ও বিসিবি নর্থ জোন নামে চারটি দল শুরুর কয়েক বছর বিসিএলে অংশ নিয়েছে। পেশাদারিত্বের ঘাটতি, পরিকল্পনার অভাব এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভবান না হওয়ায় তিনটি ফ্রাঞ্চাইজি ধীরে ধীরে সরে যায়। পরবর্তীতে বিসিবি চারটি দলই নিজস্ব খরচে পরিচালনা করে বিসিএল চালু রাখে। কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীতার অভাব বোঝা যায়।
এজন্য বিসিবি সামনের আসরে বিদেশ থেকে একটি দল নিয়ে আসতে চায়। শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগও করেছে। বিসিএল যেই সময়ে আয়োজন করতে চাচ্ছে সেই সময়ে শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। আফগানিস্তানকে চূড়ান্ত করার পথে হাঁটছে। বিসিবির পুরো খরচেই অতিথি দল প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। বাকি তিনটি দল গঠন করবে বিসিবি।
আকরাম খান বলেছেন, ‘‘আমরা প্রথমবারের মতো বিসিএলে একটি বিদেশি দলকে পেতে যাচ্ছি। হয়তো তারা এ দল হিসেবে আসবে। নয়তো অন্য কোনো নামে। এক মাস এই টুর্নামেন্ট চলবে। ফেব্রুয়ারিতে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।’’
এদিকে জাতীয় ক্রিকেট লিগে বিদেশি ক্রিকেটার অন্তর্ভূক্ত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় তারা যুক্ত হবেন, কিভাবে আসবেন, পারিশ্রমিক কত হতে পারে সেসব নিয়ে এখনও কোনো উপায় খুঁজতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। তবে ভালোমানের বিদেশি খোঁজার প্রক্রিয়া চলছে।
তাদের পারিশ্রমিক চূড়ান্ত করা, পুরো আসরে অ্যাভেইলেভেল থাকবেন কিনা সেসব নিয়েও কাজ হচ্ছে। এজন্য আগেভাগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চান না আকরাম।
আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত দুই স্তরে জাতীয় ক্রিকেট লিগের খেলা অনুষ্ঠিত হবে। আট দলে একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার রাখার ইচ্ছা বিসিবির। অতীতে বিদেশি ক্রিকেটার জাতীয় ক্রিকেট লিগে অংশ নিয়েছে। ইমরান ফরহাদ, আমির ওয়াসিমরা খেলেছেন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের প্রথম শ্রেণির এই টুর্মামেন্টে।
মূলত প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং মান বাড়াতে এই উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে আয়োজকরা। যদিও একজন করে বিদেশি ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম প্লেয়িং কন্ডিশনে সব সময়ই ছিল, ছিল সর্বশেষ মৌসুমেও। বিভাগীয় দলগুলো আগ্রহ না থাকায় বিসিবিও জোর দেয়নি। তবে এবার বিসিবি বিদেশি ক্রিকেটারকে যুক্ত করবে। পাশাপাশি তাদের পারিশ্রমিক ও সুযোগ সুবিধার বিষয়টিও দেখভাল করবে।
ঢাকা/ইয়াসিন