শিশুশ্রম নিয়ে আইন আছে। কিন্তু গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষায় আইন নেই। অথচ দেশে প্রতিনিয়ত ৪০ শতাংশ শিশু, আর রাজধানীতে প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু নানা ধরনের সহিংসতার শিকার হয়। তারা মারধরসহ নানা নিপীড়ন সহ্য করছে। তাই সুনির্দিষ্ট আইন ও এর যথাযথ প্রয়োগ এসব শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে বলে মনে করেন শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।

তারা মনে করেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) আলোকে সরকার চলতি বছরের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে অঙ্গীকারবদ্ধ। সরকারের এ প্রতিশ্রুতি ও ঘোষণা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজন যুগোপযোগী আইন প্রণয়ন এবং তার সফল বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের নতুন রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতায় আইন কমিশনের জন্য এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবেও বিবেচিত হবে বলে মনে করছেন তারা।

এ অবস্থায় বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালন করা হবে বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। তবে ঈদুল আজহার ছুটির কারণে আগামী ১৯ জুন সরকারিভাবে দিবসটি উদযাপন করা হবে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে– ‘স্বপ্নের ডানায় ভর করি, শিশুশ্রমের শৃঙ্খল ছিঁড়ি; এগিয়ে চলি দৃপ্ত পায়ে, আশার আগুন বুকে জ্বালি।’

বাংলাদেশের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশই শিশু। এসব শিশুর একটি বড় অংশ শ্রমজীবী। তাদের মধ্যে অনেকে গৃহকাজে নিয়োজিত। শ্রমজীবী শিশুদের প্রকৃত সংখ্যার হালনাগাদ কোনো তথ্য নেই। কারণ, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জাতীয় শিশুশ্রম জরিপে গৃহকর্মী শিশুর তথ্য অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে ২০০৭ সালে আইএলও-ইউনিসেফ পরিচালিত একটি জরিপ সূত্রে জানা যায়, তখন বাংলাদেশে গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় চার লাখ ২০ হাজার। দেশের সামগ্রিক সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার বিবেচনায় ২০২৫ সালে এসে সংখ্যাটি বেড়েছে বলে মনে করছেন শিশু সুরক্ষা নিয়ে কাজ করা সংস্থার প্রতিনিধিরা।

শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শরফুদ্দিন খান জানান, বাংলাদেশের বিদ্যমান কোনো আইনে গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার ও সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়নি। এ জন্য তারা আইনি সুরক্ষা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত। শ্রম আইন, ২০০৬ অনুসারে গৃহকর্মীদের অধিকারের বিষয়টি স্পষ্টতই শ্রম আইনের বিধিবিধান বহির্ভূত। শ্রম আইনের ১ (৪) ধারায় স্পষ্ট বলা হয়েছে, এ আইন গৃহকর্মীদের বেলায় প্রযোজ্য হবে না। শিশু আইন, ২০১৩ অনুযায়ী শিশু আইনের বিধিবিধানগুলো মূলত সেসব শিশুদের সুরক্ষার জন্য কাজ করে, যেসব শিশু কোনো অপরাধের কারণে আইনের সংস্পর্শে বা বিচার ব্যবস্থার সংস্পর্শে আসে।

তিনি জানান, শিশু আইনের ৪৪ নম্বর ধারাতে কারখানায় কর্মরত শিশু শ্রমিকের অধিকার বিষয়ে বলা হয়েছে। এ ধারা অনুসারে, কোনে ব্যক্তি যদি কোনো শিশুকে কারখানায় বিপজ্জনক কাজ করান এবং অর্থনৈতিকভাবে বা অন্য কোনোভাবে শোষণ করেন, তবে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সুতরাং এ আইনেও গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুর অধিকার সুরক্ষিত হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০- এর বিধিবিধান নারী-শিশুর ওপর নির্যাতন দমনে প্রণীত। এ আইনের বিভিন্ন ধারায় হত্যা, নারী ও শিশু পাচার, পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা, নারী ও শিশু অপহরণ, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। অনেক গৃহকর্মীর ক্ষেত্রে এগুলো প্রযোজ্য হলেও বিশেষ কোনো দৃষ্টি দেওয়া হয়নি। 

শরফুদ্দিন খান জানান, শুধু গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি, ২০১৫-তে ১৪ বছরের নিচে কোনো শিশুকে গৃহকর্মে নিয়োগ করা যাবে না উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে ১২ বছর বয়সী শিশুদেরও গৃহকাজে নিয়োগ দেওয়া যাবে, যদি কাজটি তার জন্য ক্ষতিকারক না হয়, অথবা এর ফলে তার শিক্ষা গ্রহণকে বাধাগ্রস্ত না করে। 

এডুকো বাংলাদেশের ম্যানেজার চাইল্ড লেবার ইলিমিনেশন আফজাল কবির খান সমকালকে বলেন, গৃহকর্মী শিশুদের সুরক্ষায় বাংলাদেশে আসলে কোনো আইন নেই। শুধু গৃহকর্মী সুরক্ষা ও কল্যাণ নীতি ২০১৫ রয়েছে। কিন্তু সেই নীতিমালার অনুকরণেও কোনো আইন নেই। এতদিনেও নীতিমালা অনুযায়ী গৃহকর্মী শিশুদের সুরক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ শ দ র স রক ষ স রক ষ য় গ হকর ম আইন ন ই র জন য গ হক জ আইন র

এছাড়াও পড়ুন:

শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত

নাবি মুম্বাই। নয়া মুম্বাই। নতুন সেই মুম্বাইয়ে কাল নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পেল মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত।

দীপ্তি শর্মার করা ৪৬তম ওভারের তৃতীয় বলে নাদিন ডি ক্লার্কের তোলা ক্যাচটি এক্সট্রা কাভারে ভারত অধিনায়ক হারমানপ্রীত কৌরের হাতে জমা হতেই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের আনন্দে মাতল পুরো ভারত। দক্ষিণ আফ্রিকা ২৪৬ রানে অলআউট, ভারত ৫২ রানে জয়ী।

ভারতের জয়ের উৎসব অবশ্য শুরু হয়ে গিয়েছিল পাঁচ ওভার আগেই। লরা ভলভার্টকে ফিরিয়ে পথের কাঁটা উপড়ে ফেলেই উদ্‌যাপন শুরু করেছিল ভারতীয়রা। অসাধারণ এক সেঞ্চুরি করে দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক চোখ রাঙাছিলেন ভারতের উৎসব ভন্ডুল করার। কিন্তু সেঞ্চুরি করার পরপরই ক্যাচ তুললেন ভলভার্ট। আর সেই ক্যাচ নিতে গিয়ে আমানজোত কৌর ভারতের প্রায় শত কোটি মানুষের হৃৎস্পন্দন প্রায় থামিয়ে দিয়েছিলেন। একবার নয়, দুবার নয়, তৃতীয়বারের চেষ্টাতেই ক্যাচ নিতে পারেন আমানজোত। এবারও বোলার সেই অফ স্পিনার দীপ্তি শর্মা।

৯৮ বলে ১০১ রান করে ভলভার্ট যখন ফিরলেন দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর ৪১.১ ওভারে ২২০/৭। এরপর শুধু আনুষ্ঠানিকতাই ছেড়েছে ভারত। দীপ্তি আরও ২টি উইকেট নিয়ে পেয়ে গেছেন ৫ উইকেট। আর ভারত হয়ে গেছে চ্যাম্পিয়ন। এর আগে ব্যাট হাতেও ৫৮ বলে ৫৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেছেন দীপ্তি।

ব্যাট হাতে ৮৭ রান করা শেফালি বর্মা বল হাতে নিয়েছেন ২ উইকেট

সম্পর্কিত নিবন্ধ