কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে বামপন্থি দলগুলো
Published: 12th, June 2025 GMT
করিডোর এবং চট্টগ্রাম বন্দর ইস্যুতে কঠোর আন্দোলনে যাচ্ছে বামপন্থি দল ও জোটগুলো। এরই অংশ হিসেবে ২৭ ও ২৮ জুন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোডমার্চ করবে তারা।
রাখাইনে মানবিক করিডোর ও চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে অন্তর্বর্তী সরকার সরে
না এলে পর্যায়ক্রমে ঘেরাও, অবরোধ ও হরতালের পরিকল্পনা রয়েছে বামপন্থিদের। পাশাপাশি ইপিজেডে সমরাস্ত্রের যন্ত্রাংশ তৈরির উদ্যোগ ও স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিলের জন্য আগেই দাবি এবং রাজপথে পৃথক বিক্ষোভ করেছে তারা।
সরকার উদ্যোগ না নেওয়ায় বামপন্থি দলগুলোর অন্যতম প্রধান বাম গণতান্ত্রিক জোট সমন্বিতভাবে বৃহৎ পরিসরে আন্দোলন গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। পরে তারা বামপন্থিদের অন্য দুই জোট– ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সঙ্গে আলোচনা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটে ছয় এবং ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের শরিক হিসেবে আরও চারটি দল সক্রিয়। এ ছাড়া উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ জাসদ, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলনসহ বিভিন্ন দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে। ১৩ জুন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি, সাম্রাজ্যবাদবিরোধী দল ও সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা শেষে বৃহৎ আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করবে।
বামপন্থি নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর লিজ ও রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটি দেওয়া হলে সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেওয়া হবে। যদিও সব মহলের বিরোধিতার মুখে করিডোর বিষয়ে সরকার সুর পাল্টেছে। তারা পুরো বিষয়কে রাখাইনে ‘ত্রাণ চ্যানেল বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল মাত্র’ দাবি করেছে। সর্বশেষ ঈদুল আজহার আগের রাতে জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড.
রোডমার্চ সফল করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে বাম দলগুলো। কেন্দ্রীয় নেতারা মঙ্গলবার চট্টগ্রাম এবং গতকাল বুধবার ফেনী ও কুমিল্লা সফর করেছেন। সফরে ওই অঞ্চলের বাম গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল বিভিন্ন দল ও সংগঠনের নেতা এবং ব্যক্তির সঙ্গে সভা ও মতবিনিময় করেন।
বাম নেতারা বলছেন, ২৭ ও ২৮ জুনের ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চ হবে সর্বস্তরের দেশপ্রেমিক জনগণের রোডমার্চ। এ সময় জেলা-উপজেলায় একই দাবিতে সংহতি সমাবেশ ও পদযাত্রা হবে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স সমকালকে বলেন, ‘দেশের নীতিনির্ধারণী বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার নেই অন্তর্বর্তী সরকারের। কথাটি সরকারকে মনে রাখতে হবে। চট্টগ্রাম বন্দর লিজ এবং মানবিক করিডোরের নামে সাম্রাজ্যবাদীদের সঙ্গে আঁতাত এবং অন্যান্য আঞ্চলিক শক্তির সঙ্গে সংঘাতে জড়ানোর চক্রান্ত দেশবাসীকে নিয়ে রুখে দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রোডমার্চের ঘোষণা দিয়েছি। সরকার দেশের স্বার্থবিরোধী এ পথ থেকে সরে না এলে দেশবাসীকে নিয়ে প্রয়োজনে ঘেরাও, অবরোধ ও হরতাল দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘সরকার মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থরক্ষায় দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থবিরোধী নানা পরিকল্পনা নিচ্ছে। বিশেষত চট্টগ্রাম বন্দর লিজ প্রদান ও করিডোর দেওয়ার মতো আত্মঘাতী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে কঠোর গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর ড র ব ম গণত ন ত র ক ব মপন থ কর ড র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনায় বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া প্রশ্নে রুল
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির চলমান প্রক্রিয়া কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি হাবিবুল গনি ও বিচারপতি শেখ তাহসিন আলীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বুধবার এ রুল দেন। একই সঙ্গে যেকোনো অপারেটরকে এনসিটি পরিচালনার দায়িত্ব (নিযুক্ত) দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট আইন ও নীতি অনুসারে ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক পাবলিক বিডিং (দরপত্র আহ্বান) নিশ্চিত করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।
আরও পড়ুননতুন ব্যবস্থাপনায় নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনা শুরু০৭ জুলাই ২০২৫নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশি প্রতিষ্ঠানের হাতে ছেড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়ার বৈধতা নিয়ে বাংলাদেশ যুব অর্থনীতিবিদ ফোরামের পক্ষে সংগঠনটির সভাপতি মির্জা ওয়ালিদ হোসাইন রিটটি করেন। রিটে নৌসচিব, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিবাদী করা হয়।
‘নিউমুরিং টার্মিনালে সবই আছে, তবু কেন বিদেশির হাতে যাচ্ছে’ শিরোনামে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম আলোয় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। এ প্রতিবেদনসহ এ বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে এনসিটি পরিচালনায় ন্যায্য ও প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করার নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়।
আগের ধারাবাহিকতায় ৯ জুলাই রিটের ওপর শুনানি শেষ হয়। সেদিন আদালত ২৩ জুলাই আদেশের জন্য দিন রাখেন। ধার্য তারিখে আদালত আদেশের জন্য ৩০ জুলাই দিন রাখেন। এ অনুসারে আজ বিষয়টি আদেশের জন্য আদালতের কার্যতালিকার ৭ নম্বর ক্রমিকে ওঠে।
আজ মধ্যাহ্নবিরতির পর আদালত আদেশ দেন। আদালত বলেন, শুধু রুল দেওয়া হলো।
আদেশের সময় রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আহসানুল করিম এবং আইনজীবী কায়সার কামাল ও আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মহাদ্দেস-উল-ইসলাম।
পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার নতুন দায়িত্ব নিয়েছে নৌবাহিনীর প্রতিষ্ঠান চিটাগং ড্রাইডক লিমিটেড। টার্মিনালটি পরিচালনার জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬ জুলাই দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে এ দায়িত্ব নেয় জাহাজ মেরামতের এ প্রতিষ্ঠান। প্রথমবারের মতো বন্দরে টার্মিনাল পরিচালনায় যুক্ত হলো চিটাগং ড্রাইডক।
চট্টগ্রাম বন্দরের বৃহৎ এই টার্মিনাল নির্মিত হয় ২০০৭ সালে। টার্মিনালটি নির্মাণ ও যন্ত্রপাতি সংযোজনে বন্দর কর্তৃপক্ষ ধাপে ধাপে মোট ২ হাজার ৭১২ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের সিংহভাগ এই টার্মিনাল দিয়ে পরিবহন হয়।