৫ দেশের প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বাউবির এসএসসি প্রোগ্রাম
Published: 12th, June 2025 GMT
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপেন স্কুল পরিচালিত বহিঃবাংলাদেশ (নিশ-২) এসএসসি প্রোগ্রামে ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষে (২০২৫ ব্যাচ) শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত, ইতালি ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে কর্মরত বা বসবাসরত বৈধ বাংলাদেশি প্রবাসী বা অভিবাসী কিংবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আগ্রহী ব্যক্তিদের সেই দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি করা হবে।
ভর্তির যোগ্যতা
মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষায় দুটি শাখায় ভর্তি করা হবে। আবেদনকারীকে অবশ্যই জেএসসি/জেডিসি/অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ও বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে সৌদি আরব/কাতার/কুয়েত/ইতালি/সংযুক্ত আরব আমিরাতের বৈধ অভিবাসী কিংবা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত হতে হবে। ৩১ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালের পরে প্রদত্ত জন্মতারিখের ক্ষেত্রে জেএসসি/জেডিসি বা সমমানের সনদ প্রদান করতে হবে।
ভর্তির বিস্তারিত সময়
ভর্তির জন্য অনলাইনে আবেদনের তারিখ: ২৯ জুন পর্যন্ত।
আবেদন ফি জমা দিতে হবে: ৬১০ টাকা।
ভর্তির জন্য নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ: ১০ জুলাইয়ের মধ্যে।
ভর্তি ফি জমাদান: ১১ জুলাই থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত।
ক্লাস শুরু: ৮ আগস্ট ২০২৫।
শিক্ষাপদ্ধতি
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে দূরশিক্ষণ পদ্ধতিতে পরিচালিত হবে।
রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ
এই প্রোগ্রামের রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ সর্বনিম্ন দুই বছর এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছর। অর্থাৎ দুই বছরের আগে কোনো শিক্ষার্থী এটি শেষ করতে পারবেন না এবং পাঁচটি চূড়ান্ত পরীক্ষার পর কোনো শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যা লাগবে
প্রার্থীর সম্প্রতি তোলা ছবি ও স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি, জেএসসি/জেডিসি/অষ্টম শ্রেণি বা সরকার স্বীকৃত সমমানের পরীক্ষার সনদপত্রের স্ক্যান কপি, জাতীয় পরিচয়পত্র/স্মার্ট কার্ড/অনলাইন জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেটের স্ক্যান কপি, পাসপোর্টের স্ক্যান কপি এবং বসবাসের অনুমতি কার্ডের স্ক্যান কপি। আবেদন ফরমে শিক্ষার্থীর নিজের নাম ও জন্মতারিখ এবং পিতামাতার নাম অবশ্যই জেএসসি/জেডিসি/এনআইডি/পাসপোর্ট অনুযায়ী হুবহু লিখতে হবে। শিক্ষার্থীর অষ্টম শ্রেণির সনদপত্রের সঙ্গে এনআইডি/পাসপোর্টে উল্লিখিত তথ্যের (আবেদনকারীর নাম, পিতামাতার নাম বা জন্মতারিখ) গরমিল দেখা গেলে এনআইডি/পাসপোর্টের তথ্য সঠিক বলে বিবেচনা করা হবে।
যোগাযোগ
১.
২. ডিন, ওপেন স্কুল, বাউবি।
৩. ইন্টারন্যাশনাল একাডেমিক প্রোগ্রাম উইং, বাউবি।
বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ভর ত র পর ক ষ জ এসস
এছাড়াও পড়ুন:
তদন্ত করে ভুয়া নাম বাদ দিন
সরকারি নথিপত্রে যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনার ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্যের ইচ্ছাকৃত অন্তর্ভুক্তি সন্দেহাতীতভাবে ইতিহাস বিকৃতির সবচেয়ে খারাপ ধাপ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারগুলোর প্রায় প্রত্যেকে এই গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকারদের, আর রাজাকারের তালিকায় সুবিদিত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের অন্তর্ভুক্তি দেখা গেছে। কিন্তু হাজারো তরুণের রক্তস্নাত জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে, তা অকল্পনীয় ছিল।
কিন্তু বাস্তবতা দেখিয়েছে, আগের সেই রেশ থামেনি। দেখা যাচ্ছে, সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শহীদদের যে তালিকা করেছে, তাতে এমন অর্ধশতাধিক লোকের নাম এসেছে, যাঁরা জুলাই শহীদ নন।
জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: শুধু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী অথবা আওয়ামী শাসক দলের লোকদের হাতে নিহত ব্যক্তিরাই জুলাই শহীদ বলে গণ্য হবেন। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, সরকারের তৈরি করা জুলাই শহীদদের তালিকায় কমপক্ষে ৫২ জনের নাম আছে, যাঁরা জমিসংক্রান্ত বিরোধ বা অন্য কারণে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন কিংবা নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ছাড়া তালিকায় তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা, একজন ছাত্রলীগ নেতা আছেন। এমনকি তালিকায় এমন একজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যিনি প্রতিবাদীদের ওপর হামলায় যুক্ত ছিলেন।
প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে এককালীন মোট ৩০ লাখ টাকা দেবে সরকার। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরে দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক শহীদ পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। ঢাকায় তাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
জনমানসের যৌক্তিক ধারণা, এই অর্থনৈতিক সুবিধার প্রলোভন তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা, শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং অপকৌশলের সুযোগ তৈরি করেছে। শুধু জালিয়াতি করে শহীদ দেখিয়ে শুধু সহায়তা নেওয়া নয়; সংশ্লিষ্ট নিহতের ঘটনায় মামলা করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার নজিরও মিলেছে।
এই পরিস্থিতি প্রমাণ করছে, তালিকাভুক্তকরণের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থ কাজ করে থাকতে পারে। ঘটনাটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু কর্মকর্তার মিলিত কৌশল এবং সুযোগসন্ধানীদের চক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি সরকার আমলে নিয়েছে, এ জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাতে চাই।
বহু শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সরকার এক মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, শহীদের মর্যাদাকে সরকারি পরিসরে আর্থিক প্রলোভন, সংকীর্ণ রাজনৈতিক সুবিধা বা স্বার্থপর উদ্দেশ্যে বিকৃত করা হলে সেটি ইতিহাস, নৈতিকতা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব লঙ্ঘনের অমার্জনীয় অন্যায় হয়ে ওঠে।
এ অন্যায় থেকে বাঁচতে ও মানুষের আস্থা পুনঃস্থাপনে অবিলম্বে বিতর্কিত সব নামের সব সরকারি সুবিধা অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। স্বাধীন ও অরাজনৈতিক কমিটি গঠন করে প্রতিটি নামের পুনঃ যাচাই নিশ্চিত করা জরুরি। বাদ পড়া শহীদদের নামও তালিকায় যুক্ত করতে হবে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে যাদের গাফিলতি বা দুর্নীতির কারণে এই অনিয়ম হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসে এক অমর মাইলফলক। এর শহীদদের তালিকায় নকল বা অপ্রাসঙ্গিক নাম সংযোজন করা হলে ‘বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা’ সব ‘ধরার ধুলায় হবে হারা’। সরকারকে এ সত্য উপলব্ধি করতে হবে।
আশার কথা হলো, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোনো প্রকার ভুয়া প্রমাণিত হলে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নে মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কথা ও কাজের সম্মিলিত প্রয়াস আমরা দেখব, সেটিই কাম্য।