প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেনকে মুঠোফোনে রাজধানীর সবুজবাগের ভাইগদিয়া এলাকার একটি বাসায় ডেকে নিয়ে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে ছয় টুকরা করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পরে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে কাছের একটি ঝোপের ভেতরে পুঁতে রাখা হয়। এ ঘটনায় আজহার আলী নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে পুলিশ ভাইগদিয়া এলাকার ঝোপের ভেতর থেকে বালু খুঁড়ে জাকিরের (৫৫) মরদেহ উদ্ধার করে।

প্লাস্টিক ব্যবসায়ী জাকির হোসেন সপরিবার সবুজবাগ থানার ভাইগদিয়া এলাকায় থাকতেন। গত ৪ জুন জাকির হোসেন নিখোঁজ হন। এরপর স্বজনেরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। পরদিন জাকির নিখোঁজ রয়েছেন বলে তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম সবুজবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর মধ্যে জাকিরের খোঁজ না পাওয়ায় তিনি ১০ জুন আজহার আলীসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে সবুজবাগ থানায় একটি অপহরণের মামলা করেন। মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পান সবুজবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো.

সামছুল আমিন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সামছুল আমিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, এলাকার ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টেলিভিশন ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকাণ্ডে জড়িত আজহার আলীকে শনাক্ত করা হয়। আজ আজহারের অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যায় জড়িত অভিযোগে আজ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হলেন শুক্কুর আলী, রাজীব ও স্বপন। তাঁরা পেশায় রংমিস্ত্রি।

পুলিশ কর্মকর্তা সামছুল আলম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের সঙ্গে জাকিরের বন্ধুত্ব ছিল। হত্যাকাণ্ডের দুই-তিন দিন আগে জাকিরের সঙ্গে কথা–কাটাকাটি হয়েছিল। এরপর আজহার আলী, রাজীব ও স্বপনকে নিয়ে জাকিরকে হত্যার পরিকল্পনা করেন শুক্কুর আলী। ৪ জুন দিবাগত রাতে আজহার মুঠোফোনে জাকিরকে ভাইগদিয়ায় তাঁর বাসায় ডেকে নেন। ওই বাসায় আজহার একা থাকতেন। পরে চারজন মিলে ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের শরীর ছয় টুকরা করে হত্যা করেন। পরে লাশ বস্তায় ঢুকিয়ে মাটিতে পুঁতে গুম করা হয়।

আজ লাশের ছয় টুকরা উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন এসআই সামছুল আমিন। এতে উল্লেখ করা হয়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে জাকিরের দুই হাত, দুই পা, মাথা ও গলা শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করা ডান হাতটি পাওয়া যায়নি।

সবুজবাগের নন্দীপাড়া থেকে চার-পাঁচ কিলোমিটার পূর্ব দিকে সরু রাস্তা ধরে গেলেই ভাইগদিয়া। ভাইগদিয়া জামে মসজিদের ১০০ গজ দূরে একটি সাঁকো পার হলেই জাকিরদের বাড়ি। আজ দুপুরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে স্বজনদের ভিড়। সেখানে বসে জাকির হোসেনের ছোট ভাই আলী হোসেন কিছুক্ষণ পরপর চিৎকার করে কাঁদছেন। উঠানের পাশে চার কক্ষের একটি টিনশেড ঘর। জাকির সপরিবারে এই ঘরে থাকতেন। ঘরের ভেতরে বসে কান্না করছেন তাঁর স্ত্রী ও দুই মেয়ে। কিছুক্ষণ পরপর মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী রেখা বেগম। তাঁকে শুশ্রূষা করছেন স্বজনেরা।

সবুজবাগের নন্দীপাড়ায় রায়হান এন্টারপ্রাইজ নামে জাকিরের একটি প্লাস্টিক বোতলের কারখানা রয়েছে। তাঁর দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। পাঁচ ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে চতুর্থ ছিলেন জাকির।

জাকিরের ছোট ভাই আলী হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ভাইগদিয়ায় বসতবাড়ির পাশে তাঁদের ৬৩ বিঘা জমি ছিল। এর মধ্যে অনেক জমি তাঁর চাচাতো ভাই মেহের আলী ও ফারুকেরা বিভিন্নভাবে দখল করে নিয়েছেন। বাকি জমিজমা নিয়ে তাঁদের মধ্যে মামলা-মোকদ্দমা চলছে। ২০০৪ সালে জমির দখল নিতে গিয়ে তাঁর পায়ে গুলি করেছিলেন তাঁর চাচাতো ভাইয়েরা। ওই ঘটনায় সবুজবাগ থানায় তাঁদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছিল।

আরেক ভাই মাসুদ হোসেন বলেন, জমিজমা নিয়ে হওয়া মামলা পরিচালনা করতেন তাঁর ভাই জাকির। ঘটনার দিন তাঁর ভাইয়ের কাছে আড়াই লাখ টাকা ছিল। এ ছাড়া দোকানের পণ্য বিক্রিরও বেশ কিছু টাকা ছিল তাঁর সঙ্গে।

আলী হোসেন ও মাসুদ হোসেন অভিযোগ করেন, জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাঁর চাচাতো ভাইয়েরা লোক ভাড়া করে তাঁর ভাইকে হত্যা করিয়েছে। তাঁর ভাইয়ের সঙ্গে থাকা টাকা পাওয়া যায়নি।

প্রতিবেশী শওকত হোসেন বলেন, ‘জাকির হোসেন ভালো মানুষ ছিলেন। সবার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতেন। প্লাস্টিকের বোতলের ব্যবসা করতেন নন্দীপাড়া শেখের বাজারে। কারও সঙ্গে কখনো ঝগড়া–বিবাদ করতে দেখিনি। শুনেছি, জমি নিয়ে তাঁর চাচাতো ভাইদের সঙ্গে মামলা চলছিল। টাকা নেওয়ার জন্যই তাঁকে মেরে ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে।’

আজহার আলীর ভাড়া বাসায় হত্যা করা হয় জাকির হোসেনকে। পাশের ঘরে থাকেন শফিকুল ইসলাম নামের এক ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী। জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ওই দিন রাতে আমি গরুর হাটে ছিলাম। রাত সাড়ে ১১টার দিকে বাসায় ফিরি। বাড়িতে এসে জাকির হোসেনের কণ্ঠ শুনতে পাই। আজহারের ঘরের মধ্যে তিনি আড্ডা দিচ্ছিলেন। পরে আমি গোসল করে আবার গরুর হাটে চলে যাই। পরে শুনি ওনাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

প্রতিবেশীরা জানান, আজহারের ভাড়া বাসায় মদ্যপানের আসর বসত। এ বিষয়ে বাড়ি মালিককে অভিযোগ করা হলে তিনি আজহারকে সতর্ক করলেও আজহার তা শোনেননি।

সবুজবাগ থানায় জাকিরের স্ত্রী রেখা বেগমের করা মামলায় উল্লেখ করা হয়, জাকির হোসেন বাড়ির পাশে আজহারসহ চার-পাঁচজনের সঙ্গে বিভিন্ন সময় আড্ডা দিতেন। ৪ জুন সকালে জাকির বাসা থেকে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা দিয়ে গেলেও আর ফিরে আসেননি। রাত পৌনে ১২টার দিকে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে জাকির বলেন, তিনি আজহারের বাসায় আছেন। তখন তাঁর সঙ্গে আড়াই লাখ টাকা ছিল। পরে অনেক রাতে আবার আজহারের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি।

মামলায় অভিযোগ করা হয়, জাকিরকে অপহরণ করা হয়েছে। এর সঙ্গে আজহার জড়িত থাকতে পারে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সামছুল আমিন বলেন, নিহতের পরিবারের অভিযোগ ও হত্যাকাণ্ডের পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, ব্যবসায়ী জাকিরের কাছে দুই লাখ টাকা ছিল। এই টাকা পেতেই আজহার আলী তাঁকে হত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক কর মকর ত ব যবস য় আজহ র র হ র আল জ ক রক য গ কর তদন ত র একট

এছাড়াও পড়ুন:

সনাহাদির উপরে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে শহরে যুবদলের মিছিল

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি’র মনোনয়নপ্রাপ্ত এরশাদ উল্লাহর উপর সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল ও সদস্য সচিব সাহেদ আহমদের নেতৃত্বে শহরে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল করেছে মহানগর যুবদল।

‎শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) বিকেল তিনটায় শহরের খানপুর হাসপাতাল রোড় থেকে শহরে বিশাল প্রতিবাদ মিছিল বের করে মহানগর যুবদল। মিছিলটি খানপুর থেকে শুরু করে মেট্রোহলের মোড় হয়ে মিশন পাড়া হোসিয়ারি সমিতির সামনে এসে মহানগর বিএনপির মূল মিছিলের সাথে অংশগ্রহণ করেন।

‎এময়ে মহানগর যুবদলের নেতাকর্মীরা ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি ও চট্টগ্রাম-৮ আসনে বিএনপি’র মনোনয়নপ্রাপ্ত এরশাদ উল্লাহর উপরে হত্যাচেষ্টার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং জড়িত দুষ্কৃতিকারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে শ্লোগান দেয়।

‎নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল ও সদস্য সচিব সাহেদ আহমেদের নেতৃত্বে এসময়ে আরও উপস্থিত ছিলেন, মহানগর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরে এলাহী সোহাগ, যুগ্ম আহ্বায়ক রুহুল আমিন, যুগ্ম আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন কমল, যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ অপু, যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, যুগ্ম আহ্বায়ক শাকিল মিয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান খলিল শ্যামল, যুগ্ম আহ্বায়ক সাইফুল আলম সজিব, আহ্বায়ক কমিটির সদস্য রাফি উদ্দিন রিয়াদ, শহিদুল ইসলাম, ওয়াদুদ ভূইয়া সাগর, পারভেজ খান, আরমান হোসেন, কামরুল ইসলাম রনি, মিনহাজ মিঠু, আশিকুর রহমান অনি, জুয়েল রানা, কামরুল হাসান মাসুদ, ফয়েজ উল্লাহ সজল,আলী ইমরান শামীম, তরিকুল ইসলাম, সাইফুল ইসলাম আপন, শাহীন শরীফ, মাগফুর ইসলাম পাপন, জুনায়েদ আলম ঝলক, ফয়সাল আহমেদ, সাইদুর হাসান রিপন, আরিফ খান, কায়সার আহমেদ, এড. শাহিন খান, কাজী নাইসুল ইসলাম সাদ্দাম, আলী হোসেন সৌরভ, বাদশা মিয়া, মাসুদ রানা, মাকসুদুর রহমান শাকিল, রুবেল সরদার, রিয়াজুল আলম ইমন, জুনায়েদ মোল্লা জনি, হাবিবুর রহমান মাসুদ, আঃ কাদির, আশরাফুল হক তান্না, জাহিদুল হাসান শুভ, মাহফুজুর রহমান ফয়সাল প্রমুখ ।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ