Samakal:
2025-07-30@10:23:04 GMT

লোভের মাশুল গুনছেন আমচাষি

Published: 12th, June 2025 GMT

লোভের মাশুল গুনছেন আমচাষি

চারঘাটের রাওথা এলাকার আমচাষি শফিকুল ইসলাম তিন বিঘা বাগান দুই বছরের জন্য লিজ দিয়েছিলেন। শর্ত ছিল হরমোন ব্যবহার করা যাবে না। এর পরও গোপনে হরমোন প্রয়োগ করেছেন ব্যবসায়ী। পর পর দুই বছর প্রচুর মুকুল এলেও এ বছর আম টেকেনি। উল্টো ১৩টি গাছ মরে গেছে। এ বিষয়ে গ্রাম্য আদালতে অভিযোগ করেছেন। 
বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ এলাকার আমচাষি শরিফুল ইসলামও এ বছর গাছে হরমোন ব্যবহার করেছেন। ৩২টি গাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। কিন্তু আম টেকানো যায়নি। মাত্র ১৭ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছেন। অথচ গত বছর মুকুল কম এলেও ৬২ হাজার টাকার আম বিক্রি করেছেন। হরমোনের প্রভাবে এলাকার সব বাগানের একই অবস্থা। 
চারঘাটের ভায়ালক্ষ্মীপুর এলাকার আবু সিনা বলেন, আমের এমন দুরবস্থা এক যুগেও দেখিনি। বাধ্য হয়ে গত সপ্তাহে পাঁচ বিঘা আমের বাগান কেটে ফেলেছি। আর কখনও আম চাষ করব না।
বেশি আম ফলাতে গাছে মাত্রাতিরিক্ত হরমোন প্রয়োগ করছেন রাজশাহীর চারঘাট ও বাঘার অসাধু ব্যবসায়ীরা। না বুঝে অনেক চাষিও ওই হরমোন ব্যবহার করছেন। এতে গাছের জীবনীশক্তি কমেছে। হুমকির মুখে পড়েছে এ অঞ্চলের আম উৎপাদন। হরমোন প্রয়োগের কারণে গত কয়েক বছরের মধ্যে এ বছর গাছে সর্বোচ্চ পরিমাণ মুকুল এলেও অধিকাংশ বাগানেই আম নেই। 
জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্মিং (ZBNF) রাজশাহীর জরিপ বলছে, গত এক বছরে চারঘাটে ৩৭ হেক্টর ও বাঘায় ৩৯ হেক্টর আম বাগান হরমোনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১০০টি করে ৭ হাজার ৬০০টি আম গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। এসব গাছ কেটে জমিতে কেউ পুকুর, অনেকে ফসল আবাদ করেছেন। 
ফল গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের মার্চ মাসে সরকার আম চাষের জন্য নির্ধারিত মাত্রায় হরমোন ব্যবহারের অনুমোদন দেয়। ‘প্যাকলোবুট্রাজল’ নামে এ হরমোন দেশে ‘কালটার’ নামে বাজারজাত করা হয়। প্রতি বর্গমিটারে গাছের গোড়া থেকে এক ফুট দূরে রিং করে চার মিলিলিটার ওষুধ পাঁচ লিটার পানিতে মিশিয়ে দিতে হবে। আধাঘণ্টা পর সেচ দিতে হবে। পর্যাপ্ত খাবার দিতে হবে। আট-নয় বছরের ছোট গাছে ও বেশি বয়সী গাছে হরমোন ব্যবহার করা যাবে না। এ নিয়ম না মানলে দু-তিন বছর পর গাছটি মারা যেতে পারে।
নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় ব্যবহারের কথা বলা হলেও ব্যবসায়ীরা বেশি ফলনের আশায় মাত্রাতিরিক্ত প্রয়োগ করে গাছই মেরে ফেলছেন। কেউ গাছের বাকল কেটে আবার কেউ শিকড় কেটে ইচ্ছেমতো হরমোন প্রয়োগ করছেন। এতে প্রচুর মুকুল ও গুটি এলেও পর্যাপ্ত শক্তি না থাকায় শেষ পর্যন্ত গাছ আম ধরে রাখতে পারছে না। মরে যাচ্ছে গাছ। এ অবস্থায় গাছ লিজ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাগান মালিকরা থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করছেন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে। 
অভিযোগ প্রসঙ্গে বাঘার আড়পাড়া এলাকার আম ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, ১১ লাখ টাকায় ৯ বিঘার বাগান দুই বছরের জন্য লিজ নিয়েছি। প্রতিযোগিতার বাজার। দু-তিন বছরের জন্য বাগান লিজ নিয়ে আসল টাকা তোলাই কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও আমের সাইজ ও রং ভালো চায় ক্রেতারা। এ কারণে হরমোন প্রয়োগ না করলে হয় না। চাষি ও ব্যবসায়ী সবাই কম-বেশি হরমোন ব্যবহার করছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, রাজশাহীর ৯ উপজেলায় ১৯ হাজার ৬০৩ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৬০ হাজার ছয় টন। জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় রয়েছে ১২ হাজার ২১৮ হেক্টর (দুই তৃতীয়াংশ)। গত দুই বছরে চারঘাটে ৬০ ও বাঘায় ৮০ হেক্টরসহ ১৪০ হেক্টর জমির আমবাগান কেটে ফেলেছেন চাষিরা। হরমোন প্রয়োগের ফলে গাছ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাগান কাটার মূল কারণ বলছেন বাগানিরা। এবার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ অসম্ভব হবে বলছেন তারা।
চারঘাটের বাঁকড়া বাজারের আড়তদার আলতাফ হোসেন বলেন, মুকুল ও গুটি দেখে সবাই ভেবেছিল, এ বছর বাম্পার ফলন হবে। বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসায়ীরা বাগানও কিনেছিল। এখন অধিকাংশ গাছে আম নেই। 
কৃষি কর্মকর্তা আল মামুন হাসান বলেন, ছোট ও বেশি বয়সী গাছে খেয়ালখুশিমতো হরমোন প্রয়োগ করছেন কেউ কেউ। গাছের বাকল ও শিকড় কেটেও প্রয়োগ করা হচ্ছে। যে হারে হরমোন প্রয়োগ হচ্ছে, সে হারে খাবার পাচ্ছে না গাছগুলো।  কয়েক বছরের মধ্যে গাছ মারা যাচ্ছে।
ফল গবেষণা কেন্দ্র রাজশাহীর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড.

শফিকুল ইসলাম বলেন, যারা গাছে হরমোন প্রয়োগ করছেন, তাদের কারোরই এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেই। যে কোনো দোকান থেকে কিনে খেয়ালখুশিমতো প্রয়োগ করে গাছের ক্ষতি করছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস য় দ ই বছর ক র আম র আম ব কর ছ ন এল ক র র জন য এ বছর বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

বিহারের ভোটার তালিকা নিয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট: ‘মৃত’ নন জীবিত এমন ১৫ জনকে হাজির করলে ব্যবস্থা

বিহারে খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ চিহ্নিত ১৫ জন জীবিতকে হাজির করাতে পারলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ব্যবস্থা নেবেন। বিহারের ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার বিরুদ্ধে মামলাকারীদের আইনজীবীদের এ আশ্বাস দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি সূর্য কান্ত ও জয়মাল্য বাগচী এ আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নির্বাচন কমিশন (ইসি) সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করছে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া দেওয়া হলে তাঁরা অবশ্যই পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।

আবেদনকারীদের উদ্দেশে দুই বিচারপতি বলেছেন, প্রক্রিয়ায় অনিয়ম বা ত্রুটি পাওয়া গেলে অবশ্যই তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।

মামলাকারীদের আবেদন মেনে সুপ্রিম কোর্ট অবশ্য খসড়া ভোটার তালিকা পেশ করার ওপর স্থগিতাদেশ দেননি। তবে ইসিকে তাঁরা বলেছেন, তাদের কাজ গণহারে ভোটার বাদ দেওয়া নয়। তাদের দেখা উচিত যাতে গণহারে ভোটারদের তালিকাভুক্ত করা যায়।

এসআইআর–প্রক্রিয়া অনুযায়ী ভোটার তালিকা সংশোধনের পর খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে ১ আগস্ট। সে লক্ষ্যেই ইসি এগিয়ে চলেছে। ইসি সূত্রে খবর, নিবিড় সংশোধনপ্রক্রিয়ার পর প্রাথমিকভাবে দেখা যাচ্ছে ৬৫ লাখেরও বেশি নাম খসড়া তালিকা থেকে বাদ যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে অন্তত ২২ জন ‘মৃত’, ৩৬ লাখ ‘নিখোঁজ’। এ ছাড়া বেশ কয়েক লাখ ভোটারের নাম বিভিন্ন এলাকার তালিকায় রয়েছে। অর্থাৎ একই ভোটার অন্তত দুই জায়গায় নথিভুক্ত। আগের তালিকা অনুযায়ী বিহারে মোট ভোটারের সংখ্যা ৭ কোটি ৮৯ লাখ। ইসির দাবি, এই তালিকায় বহু ভোটার ভুয়া। তাদের বাদ দিতেই এই নিবিড় সংশোধন।

যে প্রক্রিয়ায় এই খসড়া তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে, মামলাকারীদের আপত্তি তা নিয়েই। তাঁদের অভিযোগ, ইসি যেভাবে নাগরিকত্বের যাচাই করছে, সে জন্য যেসব নথি পেশ করতে বলা হচ্ছে, তা বহু ক্ষেত্রে সম্ভবপর নয়। তেমন করা তাদের কাজও নয়। সেই কাজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তাঁদের অভিযোগ, এভাবে বহু দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষের ভোটাধিকার ইসি কেড়ে নিচ্ছে।

গত সোমবার ও মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি হয়। মঙ্গলবারের শুনানিতে মামলাকারীদের আইনজীবী কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে আশ্বস্ত করে বিচারপতিরা বলেন, কমিশনের ত্রুটি–বিচ্যুতি দেখলে তাঁরা অবশ্যই ব্যবস্থা নেবেন। ভোটার প্রমাণে আধার কার্ড ও ভোটার কার্ডকে নথি হিসেবে গ্রাহ্য করার সুপারিশ বিচারপতিরা জোরের সঙ্গে করেছেন। এই দুই নথি জাল করা সহজ বলে ইসির দাবি নস্যাৎ করে বিচারপতিরা বলেছেন, যে ১১টি নথির ওপর নির্ভর করে তারা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, সেগুলোর প্রতিটিই জাল করা সম্ভব। কপিল সিব্বাল ও প্রশান্ত ভূষণকে বিচারপতিরা বলেন, খসড়া ভোটার তালিকায় ‘মৃত’ অথচ আসলে জীবিত, এমন ১৫ জনকে আপনারা হাজির করুন। আমরা ব্যবস্থা নেব।

আগামী ১২ ও ১৩ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি। তার আগে ৮ আগস্টের মধ্যে মামলাকারীদের বক্তব্য লিখিতভাবে আদালতে পেশ করতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ