ইরানে আকস্মিক হামলার পর একে একে ফাঁস হচ্ছে এর পেছনে থাকা ইসরায়েলের গোপন পরিকল্পনার তথ্য। কীভাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েলের হয়ে এই খেলায় খেলেছেন তাও ফাঁস হয়েছে। ট্রাম্প স্বীকারও করেছেন তিনি ইসরায়েলের হামলার বিষয়টি আগে থেকেই জানতেন। হামলা সফল হওয়ায় তিনি খুশি।

শুক্রবার খোদ ইসরায়েলই স্বীকার করেছিল ইরানে হামলার জন্য তারা বছরের পর বছর ধরে পরিকল্পনা করেছিল। গত দুদিন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ইসরায়েলের জন্য অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। ইসরায়েলের দাবার ঘুঁটি হিসেবে কাজ করেছেন ট্রাম্প। গত এপ্রিল ইরানের সঙ্গে পরমাণু আলোচনার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেশ ভালোভাবেই জানতেন তিনি যেসব শর্ত দিবেন সেগুলো ইরান মানবে না। এরপরেও সেই আলোচনা ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এই ফাঁকে ইসরায়েল তার হামলার প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে নিয়ে আসে। এর পাশাপাশি ইসরায়েল এমন ভান করেছিল, যেন তাদের পুরো মনোযোগ ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর রয়েছে। ট্রাম্পের নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তারা ইরানে হামলা চালাতেই পারে না!

৯ জুন সোমবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোনে কথা বলেন। ওই সময় তারা দুজন ইরানে হামলার বিষয়ে চূড়ান্ত আলোচনা করেন, ট্রাম্প নেতানিয়াহুকে হামলার অনুমতি দিয়ে দেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, তাদের ফোনালাপ শেষ হওয়ার পরে ইসরায়েলি ও মার্কিন কর্মকর্তারা সংবাদমাধ্যমকে জানান, ইরান ইস্যুতে নেতানিয়াহুর ওপর চটেছেন ট্রাম্প। ইরানে কোনো ধরনের হামলা চালাতে নেতানিয়াহুকে নিষেধ করেছেন তিনি। এ ধরনের মিথ্যা খবর ছড়িয়ে দেওয়ার পরপর নেতানিয়াহু তার সামরিক বাহিনীকে ইরানে হামলার চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে বলেন এবং বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা হামলার অনুমোদন দেয়।

ইরান অবশ্য ট্রাম্পের কথায় বিশ্বাস করে বসেছিল। সংবাদমাধ্যমে ছড়ানো মিথ্যা খবর দেখে ইরানিদের মধ্যে বেশ গাছাড়া ভাব চলে এসেছিল। ঠিক এই জিনিসটাই চেয়েছিল ইসরায়েল।

ইরানের সামরিক বাহিনীর প্রধান, বিপ্লবী বাহিনীর প্রধানসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা কোথায় থাকেন ইসরায়েল তার গোয়েন্দাদের বদৌলতে  আগে থেকেই সেসব স্থান চিহ্নিত করে রেখেছিল। এছাড়া ওই দিন ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা ভূগর্ভস্থ কোন বাঙ্কারে অবস্থান করবেন সেটাও জানতো ইসরায়েল। তাই শুক্রবার রাতে প্রথম হামলাতেই ইরানের সামরিক নেতৃত্বকে খতম করে দেয় ইসরায়েল। এর ফলে ইসরায়েলি বাহিনী যখন ইরানের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছিল তখন পাল্টা হামলার নির্দেশ দেওয়ার মতো ইরানের কোনো শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাই জীবিত ছিল না। আগে থেকেই গোপনে পাঠিয়ে দেওয়া ড্রোন, অস্ত্র ও কমান্ডোদের মাধ্যমে ইরানের সম্পূর্ণ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করে দেয় ইসরায়েল। এর ফলে নির্বিবাদে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানগুলো ইরানের ভেতরে হামলা চালিয়ে সব তছনছ করে দেয়।
 

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র কর মকর ত কর ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ