Samakal:
2025-11-03@03:23:01 GMT

শৈশবের স্মৃতি

Published: 14th, June 2025 GMT

শৈশবের স্মৃতি

বাবা কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স করেন। কলেজে পড়াকালীন লেখক শওকত ওসমান তাঁর বন্ধু ছিলেন। সওগাতসহ আরও কিছু পত্রিকায় লিখতেন। আমাদের ছোটবেলায় পশ্চিম পাকিস্তানে কিছু বাঙালি পরিবার খুব শক্তভাবে বাংলা সংস্কৃতি ধরে রেখেছিল। আমরা বাংলা মিডিয়ামে পড়েছি সেখানে। বাবা পুলিশ বিভাগে চাকরি করতেন। সুযোগ হয়েছিল বাবার একটা ডায়েরি পড়ার। ডায়েরিতে লেখা ছিল– ‘আজ ভাষা দিবস, সবাই শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছে; কিন্তু আমি আমার চাকরির কারণে যেতে পারছি না।’
শৈশবে বাবার সঙ্গে খুব খোলামেলা সম্পর্ক ছিল। প্রথম যে স্মৃতি মনে আছে, বাবার একটা ভেসপা ছিল। তখন আমার বয়স দু’বছর ছিল, ষাট দশকের কথা। যে বয়সের কথা মানুষের মনে থাকার কথা নয়। বাবা কোথাও গেলে ভেসপার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তখন আমরা ছিলাম চট্টগ্রামে।
বাবা গান পছন্দ করতেন। খুবই সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলেন। আমাদের গানের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সিগমা হুদা, খুশী কবির, রুনা লায়লাও গান শিখতেন। তারা তখন পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। 
তখন দুপুরবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে যেতাম। বাবা যদি লাঞ্চের পর বাসায় আসতেন, আমাকে আটকানোর চেষ্টা করতেন। আমি লুকিয়ে বের হয়ে যেতাম। ফিরে আসার পর বকা দিতে পারতেন না। আমি ভাইবোনের মধ্যে ছয় নম্বর। ছোট শুধু দুই ভাই। বাবা আমায় কিছুটা প্রশ্রয় দিতেন। আমি ছোটবেলা থেকে বেখাপ্পা। সব ভাইবোন যা করত, তার উল্টোটা করতাম। এখনও ওদের চোখে বেখাপ্পা। আমি অবশ্যই তা মনে করি না। বাবা এটি বুঝতেন, আমি খানিক অন্যরকম, যে কারণে প্রশ্রয় পেতাম। বাবার এই প্রচ্ছন্ন স্নেহ বুঝতে পারতাম। তিনি অনেকটা আগলে রাখতেন। এ নিয়ে বাকি ভাইবোনদের মধ্যে ক্ষোভও ছিল। তবে একাত্তর আমাদের জীবনে বিশাল রেখাপাত করেছে। আমার বড় ভাইকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া আবার ছেড়ে যাওয়া। সেই ট্রমা আমরা ভুলিনি। আমাদের লুকিয়ে থাকা, গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো। কালারফুল শৈশব একাত্তরে স্তিমিত হয়ে পড়ে।
ম্যাট্রিক পাসের পর চারুকলায় টিকে গিয়েছিলাম। বাবা তাতে মানা করেননি; আবার খুব আগ্রহও দেখননি। আমি সকাল ৭টায় ক্লাসে যেতাম। সেখানে ল্যান্ডস্কেপ করতাম, স্টাডি করতাম। ফিরতাম সন্ধ্যার আগে। কেন এত সময় ক্যাম্পাসে থাকি; অন্যরা তো কলেজে এত সময় থাকে না। এটি বোঝাতে দুই বছর লেগে যায়।
বাবা তখন ডিআইজি ছিলেন। শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমও বাবার দায়িত্বে ছিল। বার্ষিক এক্সিবিশনের পুরস্কার। আমি পুরস্কার পেলাম। মঞ্চে উঠে দেখি, বাবা সামনে বসে আছেন– এটি ছিল আমার জন্য বিশাল সারপ্রাইজ। আমাদের বন্ধুরা জেনেছিলেন আমি কার মেয়ে। যারা রাজনীতির সঙ্গে ছিল, তারা খাতির করার জন্যই সম্ভবত বাবাকে দাওয়াত করেছিলেন। আমার পাওয়া প্রথম পুরস্কারটি হাতে তুলে দিয়েছিলেন খুশী কবিরের বাবা আকবর কবির। এটি ১৯৭৭ সালের কথা। তিনি ছিলেন তথ্য উপদেষ্টা। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ