Samakal:
2025-08-01@05:01:31 GMT

শৈশবের স্মৃতি

Published: 14th, June 2025 GMT

শৈশবের স্মৃতি

বাবা কলকাতার ইসলামিয়া কলেজ থেকে ব্যাচেলর এবং মাস্টার্স করেন। কলেজে পড়াকালীন লেখক শওকত ওসমান তাঁর বন্ধু ছিলেন। সওগাতসহ আরও কিছু পত্রিকায় লিখতেন। আমাদের ছোটবেলায় পশ্চিম পাকিস্তানে কিছু বাঙালি পরিবার খুব শক্তভাবে বাংলা সংস্কৃতি ধরে রেখেছিল। আমরা বাংলা মিডিয়ামে পড়েছি সেখানে। বাবা পুলিশ বিভাগে চাকরি করতেন। সুযোগ হয়েছিল বাবার একটা ডায়েরি পড়ার। ডায়েরিতে লেখা ছিল– ‘আজ ভাষা দিবস, সবাই শহীদ মিনারে ফুল দিয়েছে; কিন্তু আমি আমার চাকরির কারণে যেতে পারছি না।’
শৈশবে বাবার সঙ্গে খুব খোলামেলা সম্পর্ক ছিল। প্রথম যে স্মৃতি মনে আছে, বাবার একটা ভেসপা ছিল। তখন আমার বয়স দু’বছর ছিল, ষাট দশকের কথা। যে বয়সের কথা মানুষের মনে থাকার কথা নয়। বাবা কোথাও গেলে ভেসপার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতাম। তখন আমরা ছিলাম চট্টগ্রামে।
বাবা গান পছন্দ করতেন। খুবই সংস্কৃতিমনা মানুষ ছিলেন। আমাদের গানের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছিলেন। সিগমা হুদা, খুশী কবির, রুনা লায়লাও গান শিখতেন। তারা তখন পশ্চিম পাকিস্তানে ছিলেন। 
তখন দুপুরবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে বের হয়ে যেতাম। বাবা যদি লাঞ্চের পর বাসায় আসতেন, আমাকে আটকানোর চেষ্টা করতেন। আমি লুকিয়ে বের হয়ে যেতাম। ফিরে আসার পর বকা দিতে পারতেন না। আমি ভাইবোনের মধ্যে ছয় নম্বর। ছোট শুধু দুই ভাই। বাবা আমায় কিছুটা প্রশ্রয় দিতেন। আমি ছোটবেলা থেকে বেখাপ্পা। সব ভাইবোন যা করত, তার উল্টোটা করতাম। এখনও ওদের চোখে বেখাপ্পা। আমি অবশ্যই তা মনে করি না। বাবা এটি বুঝতেন, আমি খানিক অন্যরকম, যে কারণে প্রশ্রয় পেতাম। বাবার এই প্রচ্ছন্ন স্নেহ বুঝতে পারতাম। তিনি অনেকটা আগলে রাখতেন। এ নিয়ে বাকি ভাইবোনদের মধ্যে ক্ষোভও ছিল। তবে একাত্তর আমাদের জীবনে বিশাল রেখাপাত করেছে। আমার বড় ভাইকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া আবার ছেড়ে যাওয়া। সেই ট্রমা আমরা ভুলিনি। আমাদের লুকিয়ে থাকা, গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ানো। কালারফুল শৈশব একাত্তরে স্তিমিত হয়ে পড়ে।
ম্যাট্রিক পাসের পর চারুকলায় টিকে গিয়েছিলাম। বাবা তাতে মানা করেননি; আবার খুব আগ্রহও দেখননি। আমি সকাল ৭টায় ক্লাসে যেতাম। সেখানে ল্যান্ডস্কেপ করতাম, স্টাডি করতাম। ফিরতাম সন্ধ্যার আগে। কেন এত সময় ক্যাম্পাসে থাকি; অন্যরা তো কলেজে এত সময় থাকে না। এটি বোঝাতে দুই বছর লেগে যায়।
বাবা তখন ডিআইজি ছিলেন। শাহবাগের পুলিশ কন্ট্রোল রুমও বাবার দায়িত্বে ছিল। বার্ষিক এক্সিবিশনের পুরস্কার। আমি পুরস্কার পেলাম। মঞ্চে উঠে দেখি, বাবা সামনে বসে আছেন– এটি ছিল আমার জন্য বিশাল সারপ্রাইজ। আমাদের বন্ধুরা জেনেছিলেন আমি কার মেয়ে। যারা রাজনীতির সঙ্গে ছিল, তারা খাতির করার জন্যই সম্ভবত বাবাকে দাওয়াত করেছিলেন। আমার পাওয়া প্রথম পুরস্কারটি হাতে তুলে দিয়েছিলেন খুশী কবিরের বাবা আকবর কবির। এটি ১৯৭৭ সালের কথা। তিনি ছিলেন তথ্য উপদেষ্টা। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

দুনিয়ায় প্রত্যেক মুসলিমকে যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে

জীবন একটি পরীক্ষার ময়দান, যেখানে আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও কষ্টের মুখোমুখি হই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)

এই পরীক্ষাগুলো প্রায়ই আমাদের হতাশ বা বিমর্ষ করে তুলতে পারে, কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায় যে এই কষ্টগুলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং পরকালে চিরস্থায়ী সুখের পথ প্রশস্ত করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এই দুনিয়ার জীবন তো কেবল ক্ষণস্থায়ী ভোগ, আর পরকালই হলো চিরস্থায়ী আবাস।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৩৯)

পরীক্ষার উদ্দেশ্য

ইসলামে পরীক্ষা বা কষ্টকে আল্লাহর রহমতের অংশ হিসেবে দেখা হয়। এগুলো আমাদের পাপ থেকে মুক্তি, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি, নিজেকে নম্র করা এবং তাঁর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।

আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫

পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখনই তুমি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করবে, আল্লাহ তা তোমার জন্য আরও উত্তম কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩,০৭৪)

আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য

দুনিয়ার জীবন সাময়িক এবং এর কষ্টগুলো ক্ষণস্থায়ী। আমরা প্রায়ই দুনিয়ার সমস্যায়, যেমন অর্থনৈতিক সংকট, সম্পর্কের জটিলতা বা সামাজিক চাপ, এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ি যে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ভুলে যাই। পবিত্র কোরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘কিন্তু যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর ভয় করেছে এবং নিজের নফসকে অবৈধ কামনা থেকে বিরত রেখেছে, তার জন্য জান্নাতই হবে আশ্রয়।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪০–৪১)

ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য পর্দা তুলে দিতেন এবং তাকে দেখাতেন, কীভাবে তিনি তার জন্য সবকিছু পরিচালনা করেন, তবে তার হৃদয় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় গলে যেত এবং কৃতজ্ঞতায় টুকরা টুকরা হয়ে যেত। তাই যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে দুঃখ করো না। হয়তো আল্লাহ তোমার দোয়ার কণ্ঠ শুনতে চান।’ (ইবন কাইয়্যিম, আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১২৮, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)

পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি।

পরীক্ষা আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়। এটি আমাদের নম্র করে, আমাদের পাপমুক্তি ঘটায় এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বাড়ায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ায় যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে, তাকে জান্নাতে একবার ডুবিয়ে দেওয়া হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘হে আদম সন্তান, তুমি কি কখনো কোনো কষ্ট দেখেছিলে? তুমি কি কখনো দুঃখ অনুভব করেছিলে?’ সে বলবে, ‘না, হে আমার রব! আমি কখনো কোনো কষ্ট দেখিনি, কখনো কোনো দুঃখ অনুভব করিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর–২৮০৭)

আরও পড়ুনবালকের ঈমানের পরীক্ষা ও বাদশাহের নির্মম পরিণতি০৪ মে ২০২৪আল্লাহর পরিকল্পনায় ভরসা

পরীক্ষার সময় মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের পরিকল্পনার চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)

এই আয়াত আমাদের শেখায় যে কষ্টের পেছনে আল্লাহর একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে।

হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬

আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পরকালের জন্য চিন্তিত থাকে, আল্লাহ তার বিষয়গুলো সহজ করে দেবেন, তার হৃদয়ে তৃপ্তি দেবেন এবং দুনিয়া তার কাছে আসবে, যদিও সে তা অপছন্দ করে।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪১০৫)

পরীক্ষায় ধৈর্য ও দোয়া

পরীক্ষার সময় ধৈর্য ধরা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩) দোয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করি এবং তাঁর রহমতের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করি।

ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে সিজদায় তোমার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করো এবং জেনে রাখো, আল্লাহ কখনো ভোলেন না।’ (আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১৩০, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)

আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না।

জীবনের পরীক্ষাগুলো আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়, আমাদের হৃদয়কে বিশুদ্ধ করে এবং পরকালে জান্নাত লাভের পথ প্রশস্ত করে। দুনিয়ার কষ্ট ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা ও রহমত চিরস্থায়ী।

আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না; বরং নবীজি (সা.)–এর শিক্ষা ও ধৈর্য, দোয়া এবং আল্লাহর ওপর ভরসার মাধ্যমে আমরা জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় বিজয়ী হতে পারব।

আরও পড়ুনত্যাগের পরীক্ষা, সফলতার উদ্যাপন০১ আগস্ট ২০২০

সম্পর্কিত নিবন্ধ