গাজায় চলমান গণহত্যার মধ্যেই ইরানে ইসরায়েলের হামলা এবং তার জের ধরে মধ্যপ্রাচ্যে যে অশান্তির বিষবাষ্পের উদ্‌গিরণ শুরু হয়েছে, তা বৈশ্বিক আতঙ্ক জাগিয়ে তুলেছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইরানের শীর্ষ কর্মকর্তাদের হত্যা এবং তার জবাবে ইসরায়েলে ইরানের প্রত্যাঘাত যে নতুন সংঘাতের সূচনা করেছে, তা স্পষ্টতই অঞ্চলটিতে সর্বাত্মক যুদ্ধে মোড় নিচ্ছে। 

ইসরায়েলের দিক থেকে ‘তেহরানকে জ্বালিয়ে দেওয়া হবে’ বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে এবং ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে—যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স যদি ইসরায়েলকে রক্ষায় সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তাহলে ইরান ওই দেশগুলোর মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু বানাবে। 

প্রতিমুহূর্তে নতুন নতুন মাত্রায় মোড় নিতে থাকা এই উত্তেজনার আঞ্চলিক পরিসর থেকে বৈশ্বিক উত্তেজনায় রূপান্তরিত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসছে। 

আজকের ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের নেপথ্যে পশ্চিম তথা যুক্তরাষ্ট্রের দায় যে অনেকখানি, তা স্পষ্টতই প্রতিভাত হচ্ছে। বিশেষ করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর রাশ টেনে ধরা প্রশ্নে ট্রাম্পের ব্যর্থতা অথবা অনিচ্ছা এই অশান্তির পেছনে বড় নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে।  

ইসরায়েল আঘাত হানার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘোষণা দেয়, এটি ইসরায়েলের নিজস্ব সিদ্ধান্ত; যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়িত নয়। সংবাদমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই সপ্তাহখানেক আগে নেতানিয়াহুকে অনুরোধ করেছিলেন, অন্তত যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের পারমাণবিক আলোচনার আগে যেন ইসরায়েল এই ধরনের অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকে। কিন্তু নেতানিয়াহু সে অনুরোধ রাখেননি। 

এই প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন জাগে, ইসরায়েল কি এই হামলার মাধ্যমে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনাকে ভন্ডুল করে দিতে চেয়েছে? কারণ, ইসরায়েলের কাছে সম্ভাব্য ইরান-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি এক কৌশলগত হুমকি।

যদিও ট্রাম্প প্রকাশ্যে ইসরায়েলের এই হামলাকে সমর্থন দেননি; কিন্তু ইসরায়েলি পক্ষের দাবি, তারা মার্কিন সম্মতির একটি গোপন সংকেত পেয়েই হামলা চালিয়েছে। ইরান পাল্টা হামলা চালানোর পর ট্রাম্প ইরানের প্রতি ‘আরও ভয়াবহ হামলা আসছে’, ‘চুক্তি করো, নইলে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না’ এবং ‘আমরা সব আগেই জানতাম’ ইত্যাদি বলে যে দ্বৈত অবস্থানের জানান দিয়েছেন, তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিকে এক বিপজ্জনক সংকটের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। 

ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যকে নিজের নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক লক্ষ্য অনুযায়ী পুনর্গঠনের চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এর অংশ হিসেবে তারা ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ধ্বংস করতে চায়। কারণ, ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে ইসরায়েল তার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। 

তবে ইসরায়েল যদি বিশ্বাস করে থাকে, কেবল কয়েকজন বিজ্ঞানী ও কিছু অবকাঠামো ধ্বংস করলেই ইরানের পরমাণু হুমকি চিরতরে থেমে যাবে, তাহলে তা হবে একটি অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও কল্পনাপ্রসূত হিসাব। বরং, এই হামলার ফলে ইরান হয়তো আরও দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে এগিয়ে যেতে পারে এবং তা মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোকেও সেই পথে ঠেলে দিতে পারে। 

ট্রাম্প তাঁর শপথ গ্রহণ ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমার সবচেয়ে গর্বের উত্তরাধিকার হবে শান্তি প্রতিষ্ঠার ভূমিকা।’ অথচ এখন তাঁর বক্তব্যে সেই শান্তির ইঙ্গিত অনুপস্থিত। তিনি বলছেন, এই সংঘাত যদি আঞ্চলিক যুদ্ধে রূপ নেয়, তাতেও তিনি উদ্বিগ্ন নন। এই মনোভাব বিপজ্জনক। 

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বর্তমান অস্পষ্টতা ও আত্মবিরোধিতা কেবল মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতাই বাড়াচ্ছে না, বরং তা এমন এক পরিস্থিতির জন্ম দিচ্ছে, যেখানে ভুল সিদ্ধান্তের পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ ও সুদূরপ্রসারী। এই সত্যকে সবার উপলব্ধি করতে হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র ন র পর

এছাড়াও পড়ুন:

বাবা পটুয়া কামরুল হাসান স্মরণে মেয়ে শুমোনা হাসানের গান

ভালোবাসা, স্মৃতি ও উত্তরাধিকারকে কেন্দ্র করে এক আবেগঘন পরিবেশে পটুয়া কামরুল হাসানের কন্যা শুমোনা হাসান তার বাবাকে উৎসর্গ করে একটি হৃদয়স্পর্শী গান প্রকাশ করেছেন।

বাবা দিবস উপলক্ষে আজ দ্য ডেইলি স্টার সেন্টারে একটি অনুষ্ঠানে ‘কত দূর বাবা তোমার বাড়ি’ শিরোনামে গানটি প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শুমোনার পরিবার, ঘনিষ্ঠজন, এবং সম্মানিত গণমাধ্যমকর্মীরা।

গানটি শুমোনার নিজস্ব রচনা, সুর এবং কণ্ঠে পরিবেশিত। এতে ফুটে উঠেছে একজন কন্যার তার বাবার সঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো, তাদের ভালবাসা, সংগ্রাম এবং অনন্য সম্পর্কের গল্প। গানের প্রতিটি কথা ও সুর যেন এক আবেগের যাত্রাপথ।

অনুষ্ঠানে শুমোনা বলেন, ‘এই মুহূর্তটি আমার এবং আমার পরিবারের জন্য এক বিজয়ী এবং আবেগময় সময়। বাবার আত্মা সবসময় আমাকে পথ দেখিয়েছে। এই গানটি তার প্রতি আমার ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার ছোট্ট বহিঃপ্রকাশ।’

শুমোনা জানান, ভবিষ্যতেও তিনি এই ধারা অব্যাহত রেখে তাঁর বাবার স্মৃতিকে সম্মান জানাতে চান সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ