ঈদুল আজহা উপলক্ষে দেশের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছুটি শেষ হয়েছে ১২ জুন। শুক্র ও শনিবার (১৩ ও ১৪ জুন) ছিল সাপ্তাহিক ছুটি। ফলে রবিবার (১৫ জুন) খুলছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ক্লাস ও প্রশাসনিক কার্যক্রম শুরু হচ্ছে আজ থেকে। তবে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় উদ্বিগ্ন শিক্ষর্থী ও অভিভাবকরা। 

সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আজ থেকে প্রথম ধাপে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান শুরু হবে। এরপর প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে। প্রাথমিক, মাধ্যমিক, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঈদুল আজহার ছুটির সঙ্গে গ্রীষ্মকালীন ছুটি রয়েছে। ঈদের ছুটি শেষে এখন চলছে গরমের ছুটি। মাদ্রাসায় ছুটি সবচেয়ে দীর্ঘ।

গত ১ জুন থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটি শুরু হয়। শিক্ষা স্তর ভেদে ছুটির সময়ের পার্থক্য ছিল। যেখানে মাদ্রাসাগুলো পায় সর্বোচ্চ ২৫ দিনের ছুটি আর সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোতে ছুটি ছিল ১০ দিন।

শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী, প্রাথমিক বিদ্যালয় খুলবে ২৪ জুন। মাধ্যমিক বিদ্যালয় খুলবে ২২ জুন, মাদ্রাসা ২৬ জুন এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২২ জুন খুলে দেওয়া হবে। তবে ছুটি শেষে সাপ্তাহিক বন্ধ পড়লে সেক্ষেত্রে আরো দুদিন পর প্রতিষ্ঠানগুলোতে ক্লাসসহ সব কার্যক্রম পুনরায় শুরু হবে।

এদিকে, গত কিছুদিন ধরে আবারো করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক সর্বশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩৯ জনকে পরীক্ষা করে ৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এ নিয়ে মোট আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮০৭ জন।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এর ১০ দিন পর ওই বছরের ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। ২০২১ সালের ৫ ও ১০ আগস্ট দু-দিন করোনায় সর্বাধিক ২৬৪ জন করে মারা যান।

এই অবস্থায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঁচটি সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে— অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, বাইরে ও জনসমাগম স্থলে মাস্ক পরা, আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, চোখ, নাক ও মুখে হাত না দেওয়া, হাঁচি-কাশির সময় টিস্যু বা কনুই দিয়ে মুখ ঢেকে রাখা।

মাউশির মহাপরিচালক প্রফেসর ড.

মুহাম্মদ আজাদ খান জানান, করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে স্কুল-কলেজের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মশার লার্ভা ধ্বংস করতে ছুটির আগে ও পরে নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, তারা সার্বিক পরিস্থিতি নজরদারিতে রেখেছে এবং প্রয়োজনে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এমনকি চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে শুরু হতে যাওয়া উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষা নিয়েও বিকল্প ভাবা হচ্ছে। পরীক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শঙ্কা থাকলেও পরীক্ষা নির্ধারিত সময়ে শুরু করা হবে। সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে একাধিক বিকল্পও ভেবে রাখা হচ্ছে।

ঢাকা/হাসান/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ