এবারের ঈদের অসংখ্য নাটকের ভিড়ে আলাদা করে দাগ কাটে ব্যতিক্রমী কিছু নাটক। তেমনি একটি নাটক 'সম্মান'। একজন নীতিবান শিক্ষক ও তার প্রতি এক আদর্শ ছাত্রের সম্মান প্রদর্শন করার গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে এ নাটক ৷ আকবর হায়দার মুন্নার গল্প অবলম্বনে নাটকটির চিত্রনাট্য করেছেন লিমন আহমেদ। পরিচালনা করেছেন তপু খান।

ক্লাব ইলেভেন এন্টারটেইনমেন্টের ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার হওয়া এই নাটকে শিক্ষকের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন বরেণ্য অভিনেতা তারিক আনাম খান। তার ছাত্রের ভূমিকায় আছেন ফারহান আহমেদ জোভান। এতে জোভানের বিপরীতে জুটি বেঁধেছেন কেয়া পায়েল। মূল তিনটি চরিত্রই মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে দর্শকের মনে। 

১৩ জুন প্রচার হওয়া নাটকটি এরইমধ্যে ৫ লাখেরও বেশি দর্শক উপভোগ করেছেন। অদ্ভুত বিষয় হলো ১৬ হাজারেরও বেশি লাইক পড়া নাটকটিতে একটিও ডিজলাইক নেই৷ সাড়ে ৯ শতাদিক মন্তব্যের সবই নাটকটির বাস্তবধর্মী গল্প ও প্রধান তিনটি চরিত্রের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। বিশেষ করে শিক্ষক চরিত্রে তারিক আনাম খান ও ছাত্রের চরিত্রে জোভানের অভিনয় দর্শকের মনে দাগ কেটেছে। 

নাটকটির প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করে নির্মাতা ও লেখক ইশতিয়াক আহমেদ লিখেছেন, ‘মুন্না ভাই ও তপু খানের ‘সম্মান’ দেখলাম। দারুণ গল্প। জোভান অভিনেতা হিসেবে তার শতভাগ দিয়েছেন। কেয়া পায়েল সবসময়ই সাবলীল, প্রাণবন্ত। আর যার কথা বলতে একটু আয়োজন করে নিতে হয়, তিনি তারিক আনাম খান। আমি সবসময়ই ওনাতে মুগ্ধ। এখানে কেবল বাড়িয়েছেন সেটা। সব মিলিয়ে ‘সম্মান’এই ঈদের ভালো নাটকের তালিকার একটি।’

ক্লাব ইলেভেন এন্টারটেইনমেন্ট চ্যানেলে নাটকটির মন্তব্যের ঘরে রাফি আহমেদ নামে এক দর্শক লিখেছেন, 'সম্মান নাটকটি এক কথায় বাস্তব জীবনে আমাদের শিক্ষক এবং গুরুজনের প্রতি শ্রদ্ধা, সম্মান ও তাদের গুরুদক্ষিণা দেওয়ার পরিপূর্ণ দৃষ্টান্ত প্রকাশ করে।'

কৌস্তব সান্ত্রা নামে ভারতীয় এক দর্শক নাটকটি দেখে মুগ্ধতা জানিয়ে লিখেছেন, 'কাঁটাতারের ওপার থেকে এ সম্মান নাটকটি দেখলাম। এই বছর ঈদের সেরা সেরা নাটক এই 'সম্মান' হওয়া উচিত। বাস্তব জীবনে শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা ভালোবাসা তো এখন আর দেখাই যায় না খুব একটা। আমি বিগত ৭ বছর ধরে বাংলাদেশের নাটকগুলো দেখি নিয়মিত। এক কথায় অসাধারণ।'

এ নাটক নিয়ে পরিচালক তপু খান বলেন, 'গতানুগতিক ভাবনার বাইরে গিয়ে একটা কাজ করার পরিকল্পনা ছিল আমাদের।জানি এ ধরনের কাজগুলো ভিউ কম পায়। তবে সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে আমরা নাটকটি তৈরি করেছি। সে জায়গা থেকে আমরা সফল। শিক্ষকের প্রতি ছাত্রের কতোটা শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত, একজন আদর্শ শিক্ষক কেমন হওয়া উচিত সেই গল্প নিয়ে  নিয়েই এই নাটক।

নাটকটি পছন্দ করার জন্য দর্শককে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তারিক আনাম খান, জোভান, কেয়া পায়েলসহ 'সম্মান' নাটকের পুরো টিম৷

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন টকট র চর ত র কর ছ ন আহম দ

এছাড়াও পড়ুন:

৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে

বান্দরবানের থানচি উপজেলার প্রায় ৩০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসার জায়গা ৫০ শয্যার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির সংকটে এই হাসপাতাল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। বর্তমানে পুরো হাসপাতাল চালাচ্ছেন মাত্র একজন চিকিৎসক। গত পাঁচবছরে চিকিৎসাধীন ও রেফার্ড করা ২৪ জন রোগী মারা গেছেন।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ১৯৯৫ সালে ৩১ শয্যার থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যাত্রা শুরু করে। পরে এটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়। এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১২ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও কর্মরত আছেন মাত্র দুইজন। তাদের মধ্যে একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন চিকিৎসাধীন। এ কারণে রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ১৮ জন নার্স পদে রয়েছেন মাত্র চারজন। চারজন মিডওয়াইফ থাকার কথা, নেই একজনও।

আরো পড়ুন:

ফরিদপুরে পাগলা ঘোড়ার কামড়ে আহত ২০

বক্তব্য দেওয়ার সময় অসুস্থ হয়ে পড়লেন কাদের সিদ্দিকী

প্রাথমিক থেকে শুরু করে জরুরি চিকিৎসার জন্য এই হাসপাতালে ছুটে যান পাহাড়ি ও বাঙালিরা। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা যোগ হয়নি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক চিকিৎসক না থাকায় গর্ভবতী নারী, শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়ছেন। 

দুর্গম এলাকার রোগীরা অনেক সময় নদীপথ কিংবা পাহাড়ি রাস্তা পাড়ি দিয়ে হাসপাতালে এলেও কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা সেবা পান না। বরং তাদের বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। অনেক সময় বান্দরবানে যাওয়ার পথে রোগীরা মারা যান। এ কারণে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন তারা।

হাসপাতালের পরিসংখ্যানবীদ পঙ্কজ বড়ুয়া জানান, ২০২০ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এখানে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ১৯৮ জন রোগী। এর মধ্যে ৪৫৬ জনকে রেফার্ড করা হয় বান্দরবান সদর হাসপাতালে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন ১৭ জন রোগী। 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স চালক মংক্যসিং মারমা বলেন, “২০১৯ সালে চাকরিতে যোগদান করার পর থেকে অন্তত সাতজন রেফার্ড করা রোগী মাঝপথে আমার গাড়িতেই মারা গেছেন।”

 

শৈসাই মং মারমা তিন বছর আগে বিনা চিকিৎসায় তার মাকে মারা যেতে দেখেছেন। তিনি জানান, তার মা শৈমেপ্রু মারমা (৩৪) অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। ২০২২ সালের ১৪ নভেম্বর হঠাৎ তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। রেমাক্রী বাজার থেকে নদীপথে থানচি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান মাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তাকে জেলা সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। ভাড়া গাড়িতে জেলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় চিম্বুক বারো মাইল এলাকায় তার মা মারা যান।

লেংরু ম্রো নামে চার সন্তানের মা হারিয়েছেন স্বামীকে। তিনি জানান, তার স্বামী রেং য়ুং ম্রো (৪৫) কিডনি জটিলতা নিয়ে থানচি হাসপাতালে যান। সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে তাকে বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। থানচি থেকে বান্দরবান যাওয়ার মাঝপথে মারা যান তার স্বামী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংমে মারমা বলেন, ‍“হাসপাতালে চিকিৎসক, ওষুধ ও যন্ত্রপাতির সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বদলি হলেও অনেকেই থানচিতে যোগ দেন না, ডিপুটেশনে থেকে যান সদর হাসপাতালে। ফলে এ অঞ্চলের পাহাড়ি ও বাঙালি প্রায় ৩০ হাজার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।”

রিয়েং ম্রো নামে অপর বাসিন্দা বলেন, “পাহাড়ে বসবাসকারীদের অধিকাংশ গরিব। জেলা সদর হাসপাতালে রোগী নিয়ে যাওয়া ব্যয়বহুল ও কষ্টকর। রেমাক্রি, বড় মোদক, তিন্দু থেকে থানচি সদরে রোগী আনতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। এরপর আবার বান্দরবান সদর হাসপাতালে রেফার্ড করলে সাধারণ মানুষ কীভাবে চিকিৎসা করাবে?” 

থানচি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মো. ওয়াহিদুজ্জামান মুরাদ বলেন, “বর্তমানে হাসপাতালে আমিসহ দুইজন চিকিৎসক রয়েছেন। একজন ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসাধীন। তিন রোগীদের সেবা দিতে পারছেন না। ফলে পুরো হাসপাতাল পরিচালনার দায়িত্ব আমাকে একাই সামলাতে হচ্ছে।”

তিনি আরো বলেন, “জনবল ও সরঞ্জাম সংকটের কারণে গুরুতর রোগীদের রেফার্ড করা ছাড়া উপায় থাকে না। দীর্ঘ পথের কারণে অনেকেই জীবিত অবস্থায় সদর হাসপাতালে পৌঁছাতে পারেন না।”

বান্দরবান জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ শাহীন হোসাইন চৌধুরী বলেন, “শুধু বান্দরবান নয়, পুরো তিন পার্বত্য জেলাতেই চিকিৎসক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নতুন করে ৪৮তম বিসিএসের ডাক্তার পদায়ন না হওয়া পর্যন্ত এই সংকট পুরোপুরি সমাধান করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিভাগীয় প্রধানকে বিষয়টি চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের আট-দশজন চিকিৎসককে বান্দরবানে বদলি করার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ২৬ হাজার শিশু তীব্র অপুষ্টির শিকার: জাতিসংঘ
  • গ্রাহকের কাছে পেয়ারা খেতে চায় জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা
  • গল্পটা এই ক্লাসরুম থেকেই শুরু: ইরফান সাজ্জাদ
  • রাশিয়ায় এক বাঙালি বিপ্লবীর খোঁজে
  • আপনার এত সাহস হয় কী করে, সাংবাদিককে নায়িকা
  • দুবাইয়ে বিকৃত যৌন ব্যবসা চক্রের প্রধানকে চিহ্নিত করল বিবিসির এক অনুসন্ধান
  • মহানবী (সা.)–এর ইন্তেকালের পরে শাসন নিয়ে যা ঘটেছে
  • কুবিতে নতুন ১৮ বিভাগ ও ৪ ইনস্টিটিউট চালুর সুপারিশ
  • সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
  • ৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে