কিশোরীদের পিসিওএস কেন হয়, লক্ষণগুলো কী
Published: 17th, June 2025 GMT
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস শুধু হরমোনজনিত সমস্যা নয়, বর্তমানে এটি একটি সামাজিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদের ৮ থেকে ১৩ শতাংশের এ রোগ হচ্ছে। সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, ১৫ থেকে ২০ বছর বয়সী অর্থাৎ কিশোরীদের মধ্যে সাম্প্রতি পিসিওএস উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বয়ঃসন্ধিকালে মাসিক শুরুর কিছুদিন পর থেকেই এই সমস্যা হতে পারে। তবে বিষয়টিকে তখন ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এতে পিসিওএস কিশোরী মেয়েদের প্রজননস্বাস্থ্য ও পরবর্তী সময়ে সামগ্রিক নারী স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে।
কেন হয়
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, কায়িক শ্রম না করা, স্থূলতা, পরিবেশ ও জিনগত কারণ পিসিওএসের জন্য দায়ী। এতে ডিম্বাশয় বা ওভারিতে সিস্ট (তরলপূর্ণ থলি) তৈরি ও হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়। পুরুষ হরমোন অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং ডিম্বাণু তৈরি ও নিঃসরণের জন্য প্রয়োজনীয় হরমোন পর্যাপ্ত থাকে না। ফলে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু পরিপক্ব হয়ে স্ফুরণ ঘটা বন্ধ হয়ে যায়। মাসিকও নিয়মিত হয় না। তৈরি হয় ছোট ছোট অনেক সিস্ট। ডিম্বাশয় বড় দেখায়। তবে অনেক সময় সিস্ট না–ও থাকতে পারে। আবার ডিম্বাশয়ে সিস্ট থাকা মানেই যে পিসিওএস তা–ও নয়। এ রোগে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট থাকে বা অকার্যকর হয়। রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে যায়, ফলে ওজন বাড়তে থাকে।
লক্ষণ
এ রোগের লক্ষণগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ওভারির পরিবর্তনের বিষয়টি সব সময় বোঝা যায় না। উল্লেখযোগ্য লক্ষণ হচ্ছে—১.
পরামর্শ ও চিকিৎসা
প্রাথমিক অবস্থায় পিসিওএস শনাক্ত করার ক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ওজন কমাতে হবে। ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড খাওয়া যাবে না। কায়িক পরিশ্রম, নিয়মিত ব্যায়াম এবং উচ্চতা ও ওজনের ভারসাম্য রাখতে হবে।
পিসিওএস হলে সাধারণত হরমোন থেরাপি, ইনসুলিন প্রতিরোধক, ওভুলেশন উজ্জীবক ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। স্ত্রীরোগ–বিশেষজ্ঞ, হরমোন–বিশেষজ্ঞ, ডায়েটেশিয়ান, চর্ম ও মনোরোগ–বিশেষজ্ঞের সাহায্যও নেওয়া যেতে পারে।
ডা. সারাবান তহুরা, কনসালট্যান্ট, গাইনি অ্যান্ড অবস, আলোক মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।
আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।
বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’
এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।
সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।