প্রতিবছরই এসএসসি, এইচএসসিসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকে। এই অনুপস্থিতি অসুস্থতা কিংবা আকস্মিক দুর্ঘটনার কারণে হলে মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু এর কারণ যদি হয় আর্থিক অসচ্ছলতা, বাল্যবিবাহ কিংবা অন্য কোনো সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।

চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের তথ্য নির্ধারিত গুগল ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে তারা।

এতে দেখা যায়, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছয় হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ হাজার ২০৩ জনের তথ্য ও কারণ জানা গেছে, যার প্রায় ৪০ শতাংশ ঘটেছে বাল্যবিবাহের কারণে। পরীক্ষার জন্য ফরম পূরণ করেও তারা পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। ধারণা করা যায়, নবম শ্রেণিতে নিবন্ধন করার পর থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগের মধ্যবর্তী সময়ে তাদের বিয়ে হওয়ার কারণে তারা পরীক্ষা দিতে পারেনি। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।

আরও উদ্বেগের বিষয় হলো অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের ৫১ শতাংশ জানিয়েছে, তারা আর পড়াশোনা করবে না।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অনুসন্ধানে আরও বেরিয়ে এসেছে, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনুপস্থিতির হার বেশি। মাঝপথে এসব শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকলে কিংবা তারা ছিটকে পড়লে আর্থসামাজিক ক্ষেত্রে তা বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

এসএসসি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। এর মধ্য দিয়ে প্রতিবছর বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অনুপস্থিত থাকা কিংবা মাঝপথে ঝরে পড়ার কারণটিও আমরা জানতে পারলাম। অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডও অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধান করবে আশা করি। ঢাকা বোর্ড তাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর পর মূল কাজটি করতে হবে সরকারকেই। পরীক্ষার অনুপস্থিতির সঙ্গে যেহেতু আর্থসামাজিক অবস্থা জড়িত, সেহেতু সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে যুক্ত করতে হবে।

জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে, বাংলাদেশে ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগেই। আবার ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা।

সরকারের নীতিনির্ধারকেরা যতই দাবি করুন না কেন বাংলাদেশ মানবসম্পদের বিপুল উন্নতি করেছে, ইউএনএফপিএর প্রতিবেদন তার বিপরীত চিত্রই তুলে ধরে। কোনো দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের ১৮ বছরের আগে বিয়ে হওয়ার অর্থ, তাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে ফেলা। এ অবস্থায় পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিনই বৈকি। কেবল এসএসসিতে অনুপস্থিতির হার কমিয়ে আনা নয়, মানবসম্পদকে যথাযথ কাজে লাগানোর জন্যও বাল্যবিবাহের অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করতেই হবে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরতে পরতে সমস্যা। সব সরকারই শিক্ষার মূল সমস্যা নিরসন না করে উপরিকাঠামোয় কিছুটা প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করছে। শিক্ষাবিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার কোনো কার্যকর ও টেকসই পদক্ষেপ নিলে পরীক্ষায় অনুপস্থিতির সংখ্যা কমিয়ে আনা অসম্ভব হবে না।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ক ষ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গ্রামে বসে ড্রোন বানান তরুণ আশির উদ্দিন

ছয় কক্ষের পুরোনো একটি একতলা ঘর। ঘরের পেছনের দিকের ১৫ বর্গফুটের একটি কক্ষ। সেই কক্ষজুড়ে ছড়িয়ে আছে উড়োজাহাজ ও ড্রোনের নানা আদল, বৈদ্যুতিক ডিভাইস ও তার। আছে ল্যাপটপ ও সাদা খাতা। সেই সাদা খাতায় আবার নানা নকশা আঁকা। কক্ষটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘এয়ারক্রাফট মেইনটেন্যান্স ল্যাব’।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার একেবারে দক্ষিণে পুঁইছড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ পুঁইছড়ি গ্রামে অবস্থিত এই ল্যাব স্থানীয় তরুণ আশির উদ্দিনের। এই ল্যাব থেকেই একের পর এক ড্রোন বানিয়ে তাক লাগাচ্ছেন তিনি। ২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২ হাজারের বেশি উড়োজাহাজের নমুনা ও ২০ থেকে ২৫টি ড্রোন তৈরি করেছেন আশির উদ্দিন। সব কটিই সফলভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করা হয়েছে।

এর মধ্যে বেশ কিছু ড্রোন বিক্রি করেছি। ১০ কেজি ওজনের একটি ড্রোনের দাম মানভেদে তিন থেকে চার লাখ টাকা। সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের ড্রোন ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। একটি ড্রোন তৈরিতে ৬ জনের টিমের ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগেআশির উদ্দিন

২০১৫ সালে এসএসসি পাস করেন আশির। এরপর চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি পলিটেকনিক থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিপ্লোমা শেষ করেন। আশির জানান, এসএসসি শেষ করার পর শখের বশে মোটর দিয়ে খেলনা নৌকা বানানো শুরু করেন তিনি। একদিন ছাদে বসে নৌকা বানানোর সময় দেখেন মাথার ওপর দিয়ে উড়োজাহাজ যাচ্ছে। তখনই এর আদলে ছোট উড়োজাহাজ বানানোর কথা মাথায় আসে। জানান, এরপর অত্যাধুনিক সব উড়োজাহাজের নমুনা তৈরি করতে থাকেন। একপর্যায়ে শুরু করেন ড্রোন বানানো। এলাকার আকাশেই এসবের উড্ডয়ন ও অবতরণের পরীক্ষা করা হয়। তাঁর নির্মাণ করা ড্রোন গোয়েন্দা নজরদারি, যুদ্ধসহ নানা কাজে ব্যবহার করা যায় বলে জানান আশির।

আশির উদ্দিন বলেন, ‘এর মধ্যে বেশ কিছু ড্রোন বিক্রি করেছি। ১০ কেজি ওজনের একটি ড্রোনের দাম মানভেদে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। সর্বোচ্চ ২০ কেজি ওজনের ড্রোন ৬ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি। একটি ড্রোন তৈরিতে ৬ জনের টিমের ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগে।’

নিজের ল্যাবে তৈরি করা একটি ড্রোন নিয়ে আশির উদ্দিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গ্রামে বসে ড্রোন বানান তরুণ আশির উদ্দিন
  • এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা দিচ্ছেন না সোয়া ৪ লাখের বেশি শিক্ষার্থী
  • এসএসসিতে অনুপস্থিতির বড় কারণ বাল্যবিবাহ