জুলাই গণ–অভ্যুত্থান: ফ্ল্যাট পাবে শহীদদের পরিবার
Published: 19th, June 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবারকে বিনা মূল্যে ফ্ল্যাট দিতে প্রকল্প নিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। মোট ৮০৪টি ফ্ল্যাট তৈরিতে প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৬২ কোটি টাকা। সরকারের কোষাগার থেকে এই ব্যয় করা হবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ। তারা জানিয়েছে, ফ্ল্যাটগুলো নির্মাণ করা হবে রাজধানীর মিরপুর ১৪ নম্বর সেকশনে একটি সরকারি জমিতে। প্রকল্পের আওতায় ৬টি ১৪ তলা ভবন ও ১০টি ১০ তলা ভবন নির্মাণ করা হবে।
নির্মাণ করা হবে মোট ৮০৪টি ফ্ল্যাট। প্রতিটির আয়তন হবে ১ হাজার ৩৫৫ বর্গফুট। প্রতিটি ফ্ল্যাটে দুটি শয়ন কক্ষ (বেডরুম), একটি ড্রয়িংরুম (বসার ঘর), একটি লিভিং রুম (আড্ডা ও বিশ্রাম ঘর), একটি খাবার কক্ষ, রান্নাঘর ও তিনটি শৌচাগার বা টয়লেট থাকবে।
প্রত্যেকের পরিবার পাচ্ছে এককালীন ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবে প্রতিটি শহীদ পরিবার। নতুন করে তাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক নাম ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ পরিবারের স্থায়ী বাসস্থান প্রদানের নিমিত্তে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অধিগ্রহণকৃত নিজস্ব জমিতে (‘৩৬ জুলাই’) আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ’। জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) উপস্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে। সেখানে অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে। ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে এখন পর্যন্ত ৮৩৪ জনকে শহীদ ঘোষণা করা হয়েছে। শহীদদের পরিবারকে নানাভাবে সহায়তা দিচ্ছে সরকার। প্রত্যেকের পরিবার পাচ্ছে এককালীন ৩০ লাখ টাকা। এ ছাড়া প্রতি মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পাবে প্রতিটি শহীদ পরিবার। নতুন করে তাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মিরপুরে ভবনের যে নকশা করা হয়েছে, সেখানে ৮০৪টি ফ্ল্যাট হবে। কমও হতে পারে। বাকিদের জুলাইয়ে আহতদের জন্য নেওয়া প্রকল্পে ফ্ল্যাট দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সূত্র। উল্লেখ্য, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন, তাঁদের জন্য ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করতে মিরপুরে আলাদা একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য ৪০৫ কোটি ২০ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। শহীদ পরিবার ও আহত ব্যক্তিদের জন্য এককালীন অর্থ, মাসিক সম্মানী, চিকিৎসা ভাতা, বাসস্থানের ব্যবস্থা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির পেছনে এ অর্থ ব্যয় হবে।
মিরপুরে ভবনের যে নকশা করা হয়েছে, সেখানে ৮০৪টি ফ্ল্যাট হবে। কমও হতে পারে। বাকিদের জুলাইয়ে আহতদের জন্য নেওয়া প্রকল্পে ফ্ল্যাট দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সূত্র।পরিকল্পনা কমিশনে ১৬ জুন শহীদদের আবাসিক ফ্ল্যাট দেওয়াসংক্রান্ত প্রকল্পের ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। কর্মকর্তারা কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেন, যা নিয়ে জটিলতা হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরাধিকার–সংক্রান্ত জটিলতা। শহীদদের উত্তরাধিকার হিসেবে কারা ফ্ল্যাট পাবেন, বাবা, মা, ভাই, বোন নাকি স্ত্রী ও সন্তান—এ প্রশ্ন নিয়ে আলোচনা করেছেন কর্মকর্তারা।
বৈঠকে উপস্থিত একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, শহীদদের উত্তরাধিকার নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তবে কোনো সুরাহা হয়নি।
শহীদদের পরিবারকে যে ৩০ লাখ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে, তা সরকারের সঞ্চয়পত্র। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২৬) সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বাকি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, এ পর্যন্ত ৬৭১টি শহীদ পরিবারকে সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। ১৬৩টি পরিবারকে এখনো সঞ্চয়পত্র দেওয়া যায়নি। এর মধ্যে অন্তত ১৩৪টি ক্ষেত্রে শহীদদের উত্তরাধিকার নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। শহীদদের মধ্যে যাঁরা বিবাহিত ছিলেন, তাঁদের উত্তরাধিকার কে হবেন, বাবা-মা, নাকি স্ত্রী-সন্তান, এটা নিয়েই মূল জটিলতা। পরিবারগুলো এ ক্ষেত্রে একমত হয়ে আবেদন করছে না।
১ জুন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শাখায় এসেছিলেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার শহীদ হুমায়ূন কবিরের বড় ভাই হজরত আলী। তাঁর দাবি, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী সঞ্চয়পত্রের জন্য যে আবেদন করেছেন, সেখানে ওয়ারিশের তথ্য দেননি। পরে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা নথি ঘেঁটে দেখেন, আসলেই আবেদনের সঙ্গে ওয়ারিশের তথ্য দেওয়া হয়নি।
শহীদদের পরিবারকে যে ৩০ লাখ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে, তা সরকারের সঞ্চয়পত্র। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে ১০ লাখ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে (২০২৫-২৬) সঞ্চয়পত্রের মাধ্যমে বাকি ২০ লাখ টাকা দেওয়া হবে।জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ বলছে, ফ্ল্যাট নির্মাণের সময় একটা নীতিমালা করা হবে। সেখানে স্পষ্ট করে বলা থাকবে, ওয়ারিশ সূত্রে (উত্তরাধিকার) শহীদ পরিবারের কে ফ্ল্যাটের মালিক হবেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেখানেই পরিবারের সদস্যরা থাকেন। জীবিকাও সেখানে। পিইসি সভায় এ বিষয়েও আলোচনা হয়। সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন জেলা থেকে সবাই এসে ঢাকায় থাকবেন কি না, না থাকলে ফ্ল্যাট বিক্রি অথবা ভাড়া দিতে পারবেন কি না—তা নিয়েও আলোচনা হয়। তবে সিদ্ধান্ত হয়নি।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, মিরপুরে সরকারি যে জমিতে ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানে এখন পুরোনো কয়েকটি ভবন রয়েছে। ভবনগুলোতে বেশ কিছু পরিবার ভাড়া থাকে। উচ্ছেদ করতে গেলে তাঁরা আদালতে যেতে পারেন। এ বিষয়ও ভাবাচ্ছে মন্ত্রণালয়কে।
আমরা বুঝতে পারছি, একসময় এসব বিষয় আলোচনায় আসবে। তবে এখন এসব বিষয় চিন্তা করছি না। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। তখন এসব বিষয় সমাধান হবে।গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল বাসিরগৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ বলছে, এই মুহূর্তে তাঁদের অগ্রাধিকার হচ্ছে অবকাঠামো নির্মাণ। ভবন নির্মাণে যে সময় লাগবে, ততক্ষণে এসব বিষয়ে সমাধান ও সিদ্ধান্ত আসবে।
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল বাসির ১৭ জুন প্রথম আলোকে বলেন, কোনো পরিবারকে জোর করে ঢাকায় আনা হবে না। তাদের ইচ্ছার ওপর ঢাকায় আনা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি, একসময় এসব বিষয় আলোচনায় আসবে। তবে এখন এসব বিষয় চিন্তা করছি না। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। তখন এসব বিষয় সমাধান হবে।’
সৈয়দ নুরুল বাসির আরও বলেন, ফ্ল্যাট বিক্রির সুযোগ থাকবে না। যদি কেউ বিক্রি করতে চায়, তবে সরকারের শীর্ষ মহলের অনুমোদন নিতে হবে।
এখন ভাড়া বাসায় থাকি। সরকার ফ্ল্যাট দিলে আমাদের অনেক উপকার হবে।শহীদ মোহাম্মদ ইফতি আবদুল্লাহর বাবা মো.ইউনুস সরদার নিবন্ধন ফি কে দেবে
গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ সূত্র জানিয়েছে, ফ্ল্যাট নির্মাণের পর হস্তান্তরের সময় নিবন্ধন ফি দাঁড়াতে পারে ১০ লাখ টাকার আশপাশে। এই টাকা কে পরিশোধ করবে, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
এদিকে গত ৪ মে সচিবালয়ে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রকল্পটির ওপর আন্তমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় গৃহায়ণ ও গণপূর্তসচিব নজরুল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এ প্রকল্পের আওতায় জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ শুধু ভবন নির্মাণ করবে। গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। অভ্যন্তরীণ রাস্তা নির্মাণ করে দেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ মোহাম্মদ ইফতি আবদুল্লাহর বাবা মো. ইউনুস সরদার প্রথম আলোকে বলেন, ছেলে জীবিত থাকলে নিশ্চয়ই বাবা-মাকে ভালো রাখত। ছেলে তো আর ফিরে আসবে না। তিনি বলেন, ‘এখন ভাড়া বাসায় থাকি। সরকার ফ্ল্যাট দিলে আমাদের অনেক উপকার হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর ৩০ ল খ ট ক প রকল প র কর মকর ত দ র জন য গণপ র ত সরক র র
এছাড়াও পড়ুন:
শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা
একের পর এক জটিলতায় পড়ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পটি। অর্থ বরাদ্দের সংকট, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বকেয়া নিয়ে বিরোধ, কাজের ধীরগতি—সব মিলিয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রায় ৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ২২টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ মানুষের জন্য আধুনিক পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। এই সময়ে এসে নানা জটিলতায় ‘বিপদে’ পড়েছে ওয়াসা।
‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এরপর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। মেয়াদ বেড়েছে তিন দফা। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।প্রকল্প পরিচালক, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই নির্বাচনী মৌসুমে প্রকল্প বরাদ্দে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। অর্থ না এলে প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়বে। ২০২৭ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ না হলে এই পরিকল্পনা পিছিয়ে যাবে।
জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরই অর্থ বরাদ্দের অভাবে অনেক কাজ আটকে ছিল। এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পেলে সময়সীমা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা।প্রকল্পের নথিতে বলা হয়, দৈনিক ১০ কোটি লিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পয়োশোধনাগার, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য শোধনাগার, ২০০ কিলোমিটার পয়োনালা নির্মাণ করা হবে। এতে চট্টগ্রাম নগরের ২২টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রকল্পের আওতায় আসবে। আর উন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার সুফল পাবেন ২০ লাখ মানুষ।
এখনো কাজ বন্ধ, অর্থের টানাপোড়েন
প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড উপঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ না করায় সাতটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।
হালিশহর এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ করছে মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহান এন্টারপ্রাইজ, দেশ কন্ট্রাক্টরস অ্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড, ইনাস এন্টারপ্রাইজ, পোর্ট হারবার ইন্টারন্যাশনাল ও পাওয়ার বাংলা করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তাদের প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাইয়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উপঠিকাদাররা দুটি শর্তে কাজ শুরুতে রাজি হয়েছেন—আগামী সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি।
জানতে চাইলে এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক আহাদুজ্জামান বাতেন বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।’
আহাদুজ্জামান জানান, ‘মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় আমরা দুটি শর্ত দিয়েছি—সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিল পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি। এ দুই শর্তে কাজ আবার শুরু করছি।’