স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় ঘটককে মারধর
Published: 19th, June 2025 GMT
বগুড়ার শেরপুরে নবদম্পতির মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় উপহার দেওয়ার কথা বলে ডেকে এনে ঘটককে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেছে কনের পরিবার।
শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের সূত্রাপুর গোয়ালপাড়া গ্রামে গত রবিবার (১৫ জুন) সন্ধ্যায় মজিবর শেখ (৬৫) নামের ওই ঘটককে মারধর করা হয়।
মজিবর শেখ শেরপুরের ওমরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
মারধরের ঘটনায় মজিবর শেখের ছোট ভাই নজরুল শেখ বাদী হয়ে কনের বাবা জহুরুল ইসলামসহ চারজনের নামে শেরপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
গত ৯ জুন সুঘাট ইউনিয়নের সূত্রাপুর গোয়ালপাড়া গ্রামের জহুরুল ইসলামের মেয়ে সুমাইয়া খাতুনের (২১) সঙ্গে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার ঘাসুরিয়া গ্রামের মো.
মজিবর শেখ অভিযোগ করেছেন, তাকে উপহার হিসেবে লুঙ্গি দেওয়ার কথা বলে জহুরুল ইসলামের বাড়িতে ডেকে নেওয়া হয়। তিনি লুঙ্গি নিতে গেলে প্রথমে এলোপাথারি মারধর করা হয়। এরপর তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে গরুর গোবর মাখানো স্যান্ডেল ও লাঠি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারধর করা হয়। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নির্যাতন করা হয়। ছোট ভাই নজরুল শেখ খবর পেয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন।
মজিবর শেখকে উদ্ধারের পর প্রথমে শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরে ১৭ জুন উন্নত চিকিৎসার জন্য শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত জহুরুল ইসলাম বলেন, “বিয়ের পর থেকেই আমাদের মেয়ের সঙ্গে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন খারাপ আচরণ শুরু করে। অথচ, ঘটক মজিবর শেখ আমাদের বলেছিলেন, ছেলের পরিবার ভালো। এই প্রতারণার কারণে রাগের বসে একটু শাসন করা হয়েছে।”
এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে উপ-পরিদর্শক (এসআই) তোফাজ্জল হোসেন বলেন, “আমি গতকাল এ বিষয়ে তদন্ত করতে গিয়েছিলাম। যেটা জানতে পেরেছি, ঘটক কনের মেয়ের পরিবারের আত্মীয়। মেয়ের বাবা জহুরুলের আপন মামা হন ঘটক মজিবর শেখ। ঘটক তার নাতনিকে সম্প্রতি বিয়ে দিয়েছিলেন। নাতনির সংসারে অশান্তি হলে তাকে ডেকে এনে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মারধর করা হয়।”
তিনি আরো বলেন, “যারা মারধর করেছেন, তারা নিয়মিত মজিবর শেখের চিকিৎসার খরচ বহন করছেন। যেহেতু, তারা আত্মীয়, তাই আমরা আরো কিছুদিন সময় নিচ্ছি। পরবর্তী সময়ে তারা মামলা করতে চাইলে আমরা মামলা নেবো।”
ঢাকা/এনাম/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ইসির সিদ্ধান্ত ইতিবাচক
সব দল ও পক্ষের লক্ষ্য যদি হয় একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন, তাহলে নির্বাচনবিষয়ক আইন ও বিধিমালা সংশোধনের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যাবে না। বিশেষ করে যেসব আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করেছে, সেগুলো মেরামত করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
ইসির চূড়ান্ত প্রস্তাবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংজ্ঞায় ‘সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী’ যুক্ত করা হয়েছে। আইনে এটি যুক্ত হলে তিন বাহিনীকে নির্বাচনী দায়িত্ব দিতে আলাদা কোনো আদেশের প্রয়োজন হবে না। প্রস্তাবে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরাও পুলিশের মতো ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন এবং বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের ক্ষমতা পাবেন। এ ছাড়া ইভিএমে ভোট না করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকায় ইসির পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া যতটা সহজ হয়েছে, রাজনৈতিক সরকারের সময়ে সেটা পারত কি না, সন্দেহ আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো, যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তারা নির্বাচনে সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা ও এখতিয়ার নিজেদের সুবিধামতো নিয়ন্ত্রণ বা খর্ব করতে চায় আর বিরোধী দলে থাকলে বাড়ানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। দ্বিতীয়ত, ইভিএম ব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক ছিল বহু বছর ধরে। এ নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রাম কম হয়নি। সে ক্ষেত্রে ইসির নেওয়া দুটি সিদ্ধান্তই ইতিবাচক বলে মনে করি। রাজনৈতিক দলগুলোও স্বাগত জানিয়েছে।
তবে ইসির বৈঠকে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত বিতর্ক তৈরি করতে পারে। যেমন জোটগত নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা। আসন সমঝোতা ও জোটগত নির্বাচনকে এক করে দেখা ঠিক হবে কি না, তা আরও বিচার-বিবেচনার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়। অন্যদিকে ইসি একক প্রার্থীর ক্ষেত্রে ‘না’ ভোটের যে প্রস্তাব করেছে, তা নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। নবম জাতীয় সংসদে ‘না’ ভোটের ব্যবস্থা ছিল সব আসনের ক্ষেত্রে। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে এটি বাতিল করে দেয়। নির্বাচন কমিশন যে নির্বাচন উৎসবমুখর পরিবেশে হবে বলে আশা করছে, সেই নির্বাচনে একক প্রার্থী থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ। যদি ইসি না ভোটের প্রয়োজনীয়তা বোধ করে, সেটি সব আসনের জন্যই হওয়া উচিত।
ইসির প্রস্তাবে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় নিরীক্ষার বিষয় সুনির্দিষ্ট করা (ব্যত্যয় হয়েছে মনে করলে ইসি সেগুলোই নিরীক্ষা করবে), দলের অনুদান ব্যাংকের মাধ্যমে নেওয়া এবং দাতার আয়কর বিবরণীতে সেটা দেখানোর বিধান করার কথা বলা হয়েছে। এর পক্ষে-বিপক্ষে মত এসেছে।
রাজনৈতিক দলের অনুদান বিষয়ে সর্বক্ষেত্রে ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ করার প্রস্তাবটি ভালো। রাজনৈতিক দলগুলো যেখানে সর্বক্ষেত্রে সরকার ও প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি চায়, সেখানে এ বিষয়ে আপত্তি করার কোনো যুক্তি নেই।
অনিয়মের কারণে পুরো আসনের ভোট বাতিলের সিদ্ধান্তও সাহসী বলে মনে করি। অবশ্যই তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তা করতে হবে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন নির্বাচন কমিশন যখন একটি আসনের উপনির্বাচন পুরোপুরি বাতিল করেছিল, তখন সব দলই সেই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছিল। এখন আপত্তি কেন?
অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতার আলোকেই গত সোমবার নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈঠকে নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বা আরপিও সংশোধনের বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। সংসদ না থাকায় ইসির প্রস্তাব অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে যাবে। অনুমোদনের পর রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করলে এগুলো আইনের অংশ হবে।