ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস জোরালোভাবে সামনে এসেছে। ইতোমধ্যে ২১টি মুসলিম দেশ এই অন্যায় হামলার নিন্দা জানিয়েছে। বলা বাহুল্য, ইসলামী ঐক্য বা মুসলিম ভ্রাতৃত্ব কেবল নিজেদের পারস্পরিক সহযোগিতার তাগিদেই নয়, বরং এটি ইমানের পূর্ণতার জন্য অপরিহার্য অনুষঙ্গ। কারণ এর নির্দেশ রয়েছে পবিত্র কোরআন ও হাদিসে। কোরআনের একটি সুপরিচিত বাণী– ‘তোমরা আল্লাহর রশিকে ঐক্যবদ্ধভাবে দৃঢ়তার সঙ্গে আঁকড়ে ধরো এবং দলে দলে বিভক্ত হয়ো না।’ (আল ইমরান, ১০৩)। এ ব্যাপারে হাদিসের বাণী– ‘তোমরা কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা ইমানদার হও, আর তোমরা ইমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা একে অপরকে ভালোবাস.

..!’ (সহিহ মুসলিম)। 

সহিহ মুসলিমের একটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘আদ-দিনু আন-নাসিহাহ’। অর্থাৎ দ্বীন হচ্ছে কল্যাণ কামনা করা। সাহাবিগণ জিজ্ঞেস করলেন, কার জন্য হে আল্লাহর রাসুল? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর, তাঁর কিতাবের, তাঁর রাসুলের, মুসলমানদের শাসক ও সাধারণ মুসলমানদের জন্য।’ ওপরের আয়াত এবং হাদিস দুটি থেকে বোঝা যায়, ইসলামী ঐক্য ইমানদার হওয়ার পূর্বশর্ত। 
বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষায়ও ইসলামী ঐক্যের গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমান বিশ্বে মুসলমানরা পার্থিব কোনো দিক থেকেই পিছিয়ে নেই; অস্ত্র, জনবল ও সম্পদ– সবই আছে। যা নেই, তা হচ্ছে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতা। একটি দেশ আক্রান্ত হলে অন্য দেশগুলোর চেয়ে চেয়ে দেখা যেন মুসলমানদের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ কেউ মুখে দু’চারটি বুলি আওড়ায়; কেউ ‘নিজে বাঁচলে বাপের নাম’– এই ভেবে মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকে। কেউ আবার পূর্বশত্রুতাবশত মুসলমানদের বিরুদ্ধে শত্রুদের গোপনে সহযোগিতা করার মতো জঘন্য কাজে জড়িত হয়! এটিই আমাদের বড় পরাজয়। 
এক সময় মুসলিম ইতিহাস-ঐতিহ্যের লীলাভূমি ইরাক ধ্বংস করা হয়েছে; আফগানিস্তানে মুসলমানদের ওপর ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। তখনও মুসলমানদের টনক নড়েনি। এমনকি আজকের আক্রান্ত ইরান আমেরিকা কর্তৃক ইরাক আক্রান্ত হওয়ার সময় ইরাককে সাহায্য করেনি। আজ সেই ইরানও বাতিল শক্তি দ্বারা আক্রান্ত। এখন মধ্যপ্রাচ্যের যেসব মুসলিম দেশ পূর্বশত্রুতা মনে ধরে রেখে ইরানকে সহযোগিতা করা থেকে বিরত থাকছে; অদূর ভবিষ্যতে তারাও যে আক্রান্ত হবে না– এমনটি ভাবা যায় না। 

তবে এবার আশার কথা হচ্ছে, ইরানের ওপর ইসরায়েলের সন্ত্রাসী আক্রমণের বিরুদ্ধে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো আগের তুলনায় অধিক সোচ্চার। ইতোমধ্যে ২১টি মুসলিম দেশ এই অন্যায় হামলার নিন্দা জানিয়েছে। কয়েকটি মুসলিম দেশ নিয়ে ইসলামিক আর্মি গঠনের গুঞ্জনও শুরু হয়েছে। এটি করতে পারলে ভবিষ্যতে কোনো শত্রু রাষ্ট্র মুসলিম রাষ্ট্রের ওপর হামলা করার সাহস পাবে না। সুতরাং আমাদের আকাঙ্ক্ষা– মুসলমানরা একটি ঐক্যবদ্ধ শক্তিতে পরিণত হোক। সব রকম মতবিরোধ মিটিয়ে সবাই এক থাকুক। যখনই কোনো মুসলিম রাষ্ট্র আক্রান্ত হবে, তখনই অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র আক্রান্ত রাষ্ট্রের প্রতি সহযোগিতার হাত প্রসারিত করবে– মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর জনগণের এটিই এখন সবচেয়ে বড় কামনা। চলমান ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মুসলিম বিশ্বকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে। এই ইসরায়েল বছরের পর বছর ফিলিস্তিনের ভূমি দখল করে তাদের নিজ ভূমিতে পরাধীন করে রেখেছে এবং পবিত্র ভূমি জেরুজালেমকে নিজেদের কব্জায় আবদ্ধ করেছে। তারা অন্যান্য মুসলিম দেশের ওপরেও হামলা চালাচ্ছে। মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হলে এবং জোরালো ব্যবস্থা গ্রহণ করলে এমনটা সম্ভব হতো না। সেই সঙ্গে মানবাধিকার ও মজলুমের পক্ষে যেসব রাষ্ট্র সত্যিকার অর্থে দাঁড়াতে চায়, তাদেরও উচিত ইসরায়েলি গণহত্যা ও জুলুমের বিরুদ্ধে গঠিত লড়াইয়ে শামিল হওয়া।
  
আবু রুফাইদাহ রফিক: সহকারী অধ্যাপক, আরবি, জয়নারায়ণপুর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা, বেগমগঞ্জ, নোয়াখালী

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল সহয গ ত ইসল ম র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

বড়পুকুরিয়ায় সব ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ, ৮ জেলায় বিদ্যুৎ–বিভ্রাট

দিনাজপুরের পার্বতীপুরে অবস্থিত কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষমতাসম্পন্ন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে পার্বতীপুর উপজেলাসহ উত্তরাঞ্চলের আট জেলার বাসিন্দারা বিদ্যুৎ–বিভ্রাট ও লো-ভোল্টেজের কবলে পড়েছে।

গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে যান্ত্রিক ত্রুটির মুখে পড়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ১২৫ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট এবং এর আগে ১৬ অক্টোবর সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে গর্ভনর ভালভ স্টিম সেন্সরের চারটি টারবাইন নষ্ট হয়। এসব কারণে কেন্দ্রটির ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিটে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের সংস্কারকাজ ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে প্রায় পাঁচ বছর ধরে চলমান। ফলে তখন থেকে এই ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তবে শিগগিরই ইউনিটটিতে উৎপাদন শুরুর আশা করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন১২ দিন পর বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তৃতীয় ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

এ বিষয়ে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ত্রুটির কারণে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের বন্ধ হওয়া তৃতীয় ও দ্বিতীয় ইউনিটে এক সপ্তাহের মধ্যে উৎপাদন করা যাচ্ছে না। তবে ত্রুটি সারিয়ে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি সচলের চেষ্টা চলছে।

জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও উত্তরাঞ্চলে চাহিদা পূরণে পার্বতীপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ, অন্যদিকে সরবরাহে ঘাটতি। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ। জাতীয় গ্রিড থেকেও মিলছে না চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ। জাতীয় গ্রিড থেকে কমিয়ে দেওয়া হয় দিনাজপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ। বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ত্রুটি দেখা দিলে প্রভাব পড়ে পার্বতীপুরে। বিশেষ করে পার্বতীপুর উপজেলার পল্লীবিদ্যুতের ৮০ হাজার গ্রাহক ভোগান্তিতে পড়ছেন। এক সপ্তাহ ধরে বেড়েছে ভ্যাপসা গরম। ৩২ থেকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পুড়ছে অঞ্চলটি। এই গরমে সেখানে বেড়েছে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট। সকাল, ভোর কিংবা গভীর রাতে চলে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট।

উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের রঘুনাথপুর নয়াপড়া আবু সালেম বলেন, একদিকে গরম; অন্যদিকে রাত-দিন সমানতালে বিদ্যুৎ–বিভ্রাট। এ অবস্থায় সুস্থ থাকাটাই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে।

বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ থাকায় ভোগান্তি আরও বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন দিনাজপুর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-২ এর পার্বতীপুর জোনাল কার্যালয়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) জহুরুল হক। তিনি বলেন, ছুটির দিন ছাড়া জোনটিতে প্রতিদিনের চাহিদা ১৮ মেগাওয়াট। কয়েক দিন থেকে চাহিদার তুলনায় সরবরাহে ঘাটতি থাকায় লোডশেডিং হচ্ছে। এতে পল্লীবিদ্যুতের প্রায় ৮০ হাজার গ্রাহক দুর্ভোগে পড়েছেন। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ছয় থেকে সাত মেগাওয়াট। এ ছাড়া বিদ্যুতের ভোল্টেজ স্থিতিশীল রাখাও কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়া ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট থেকে প্রতিদিন ১৪০ থেকে ১৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো জাতীয় গ্রিডে। ইউনিটটি চালু রাখতে দৈনিক ১ হাজার ৬০০ টন কয়লা লাগে। ১২৫ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিট থেকে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হতো। ইউনিটটি চালু রাখতে দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ টন কয়লা ব্যবহার করা হতো। ১২৫ মেগাওয়াট দ্বিতীয় ইউনিটে প্রতিদিন ৬০ তেকে ৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হতো। এখানে ব্যবহৃত হতো ৮০০ থেকে ৯০০ টন কয়লা। ২০২০ সাল থেকে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটটি সংস্কারের জন্য ওভার হোলিংয়ে আছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন কয়লার প্রয়োজন পড়ে। তবে এ পর্যন্ত তিনটি ইউনিট একই সঙ্গে কখনো চালাতে পারেনি তাপবিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুনযান্ত্রিক ত্রুটিতে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সরবরাহ করা কয়লার ওপর নির্ভর করে চলে ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রটি। বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে কয়লা মজুত রয়েছে ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। এদিকে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) পার্বতীপুর কার্যালয় জানিয়েছে, পার্বতীপুর শহরে বিদ্যুতের চাহিদা ছয় থেকে সাত মেগাওয়াট। কিন্তু বরাদ্দ মিলছে তিন থেকে চার মেগাওয়াট। শহরে নেসকোর আওতাধীন প্রায় ২০ হাজার গ্রাহক আছেন। পার্বতীপুর শহরে নেসকোর বিদ্যুতের চাহিদা বর্তমানে সাত মেগাওয়াট। চাহিদার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে সর্বোচ্চ তিন মেগাওয়াট।

এ ব্যাপারে কয়লাভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, তৃতীয় ও প্রথম ইউনিটটি মেরামতের কাজ চলমান। দুটি ইউনিট চালু হলে এ অঞ্চলে লোডশেডিংয়ের মাত্রা অনেকটা কমবে আসবে। এক সপ্তাহের পর কেন্দ্রটির দুটি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিরবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ