Samakal:
2025-09-21@21:08:40 GMT

ভূতের ট্রেন

Published: 20th, June 2025 GMT

ভূতের ট্রেন

তামিম ও মুনা। ওরা দুই ভাইবোন। একটু ছুটি পেলেই ঘুরে বেড়ায়। বাবা-মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঘুরতে বের হয়ে যায় গ্রামের আশপাশে। ওদের গ্রামের নাম বকুলপুর।
বকুলপুরে একটি পুরোনো রেলস্টেশন আছে। সে অনেক আগে সেখানে ট্রেন আসা বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আর কেউ সেখানে যেতে সাহস করে না। বেশ রহস্যময় রেলস্টেশন!
একদিন বিকেলে সেখানে ঘুরতে গেলো তামিম ও মুনা। ওরা দেখলো, ধুলো জমে থাকা একটি বেঞ্চ, তার ওপরে পড়ে আছে চকচকে টিকিট। মুনা টিকিটটা তুলে নিলো। তাতে লেখা, ‘ভূতের ট্রেন! আজ রাত বারোটায় ছাড়বে।’
মুনা চোখ বড় বড় করে বললো, ‘ভূতের ট্রেন!’
তামিম হেসে বললো, ‘আজ রাতে দেখবো, সত্যিই ভূতের ট্রেন বলে কিছু আছে কিনা।’
ওরা অপেক্ষা করতে লাগে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নামলো। অন্ধকারে ঢেকে গেছে পুরো স্টেশন। কোথাও কারও সাড়াশব্দ নেই। চারপাশে কেবল ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। হঠাৎ দূর থেকে ভেসে আসে হুইসেলের শব্দ!
মুনা ফিসফিস করে বললো, ‘তামিম, শুনতে পাচ্ছো?’
তামিম মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। তবে কথা বললো না। একটু পর ঝিকঝিক শব্দ করে ট্রেন ঢুকলো স্টেশনে। ট্রেনের রং নীল। রাতের অন্ধকারে জ্বলজ্বল করছিলো। তামিম ও মুনার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মতো লাগছে।
ট্রেনটা স্টেশনে থামলো। তারপর দরজা খুলে গেলো। তখন একজন লম্বা লোক বেরিয়ে এলেন। তাঁর পরনে অনেক আগের পুরোনো পোশাক। লোকটার চোখ দুটো জ্বল জ্বল করছে! তিনি গম্ভীর গলায় বললেন, ‘তোমাদের ভূতের ট্রেনে স্বাগতম! আমি এই ট্রেনের কন্ডাক্টর।’
লোকটিকে দেখে ভয়ে কাঁপছে তামিম ও মুনা। তবুও তারা দুরুদুরু বুকে ট্রেনে ওঠে।
ট্রেনের ভেতরটা একেবারে অন্যরকম! দেওয়ালগুলো ধোঁয়ার মতো দুলছে, আর বাল্ব থেকে সবুজ আলো বের হচ্ছে!
সিটে বসে থাকা যাত্রীদের দিকে তাকিয়ে দুই ভাইবোন চমকে উঠলো!
একজন পুরোনো তলোয়ার পরিষ্কার করছে। আরেকজন পায়ের কাছে বসানো কাঠের বাক্স থেকে চকচকে মুদ্রা বের করছে। তিনি দেখতে জলদস্যুর মতো। আর একটি ছেলে জানালার বাইরে তাকিয়ে হাসছে। মুনা ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করলো, ‘ওরা কি ভূত?’
কন্ডাক্টর হেসে বললেন, ‘কেউ ভূত, কেউ আত্মা। এ ট্রেনে সব যাত্রী রহস্যময়!’
খানিকটা পথ চলার পর ট্রেনটা থেমে গেলো। জানালার বাইরে তাকিয়ে তামিম অবাক। বাইরে চকলেটের শহর! একটি ছোট্ট ভূত খুশিতে লাফাতে লাফাতে ট্রেন থেকে নামলো।
ছোট্ট ভূতটা বললো, ‘এখানে কত্তো চকলেট, আমি চকলেট খেতে যাই।’
মুনা বললো, ‘আমরা কি নামতে পারি?’
কন্ডাক্টর মাথা নেড়ে বললেন, ‘হ্যাঁ, নামতে পারবে। তবে সাবধানে থেকো, এটা ভূতের শহর।’
তারা চকলেট শহরে নেমে মজার মজার চকলেট খেলো। সেখানে আইসক্রিমের গাছ ছিলো। হঠাৎ আকাশে মেঘ ঘনিয়ে এলো। যে কোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। তাই সবাই ট্রেনে ওঠে। ট্রেন আবার চলতে শুরু করে। তখনই ট্রেনের সব আলো উধাও! কুয়াশার মতো কিছু ট্রেনের মধ্যে ঢুকে পড়েছে!
কন্ডাক্টর ফিসফিস করে বললেন, ‘এই জায়গা বিপজ্জনক, এখানে ভূতের আত্মারা থাকে। ওরা তোমাদের নাম ধরে ডাকতে পারে। তবে তোমরা সাড়া দেবে না।’
তামিম ও মুনা শক্ত করে একজন আরেকজনের হাত ধরে রাখে।
তখনই ওরা ফিসফিস ডাক শুনতে পেলো, ‘তামিম, মুনা, আমাদের সাথে এসো।’ একটি সাদা ছায়া তাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
কন্ডাক্টর হুইসেল বাজিয়ে বললেন, ‘দৌড়াও!’ ওমনি ট্রেন দ্রুতগতিতে ছুটতে শুরু করে।
একটু যেতেই ট্রেন থেকে কুয়াশা উধাও। আবার সবুজ আলো জ্বলে ওঠে। তখন একটি ছেলে এসে বসল ওদের পাশে।
‘তোমার নাম কী?’ মুনা জিজ্ঞেস করল।
ছেলেটি বললো, ‘আমি নীলু। অনেক আগে ঝড়ের রাতে হারিয়ে গিয়েছি। তারপর থেকে এই ট্রেনে ঘুরে বেড়াই।’
তামিম বললো, ‘তুমি কখনো বাড়ি ফিরতে পারবে না?’
কন্ডাক্টর বললেন, ‘এ ট্রেন হারানো আত্মাদের বাড়ি পৌঁছে দিতে পারে।’
কন্ডাক্টরের কথায় তামিম ও মুনা ভাবলো, তারা নীলুকে সাহায্য করবে।
তারপর কন্ডাক্টর একটি জাদুর দরজা দেখালেন। তিনি বললেন, ‘এই দরজা দিয়ে ঢুকলে নীলুর অতীত দেখা যাবে।’
ওরা দরজা পার হতেই একটি পুরোনো গ্রাম দেখতে পেলা। সেখানে ছোট্ট নীলু দাদুর সাথে খেলছে। এরপর হঠাৎ ঝড় উঠলো। বাতাসে উড়ে গেলো গাছের ডাল, চারদিকে ধুলা উড়ছে। সেই ঝড়ে নীলু পথ হারিয়ে ফেলে!
মুনার চোখ ছলছল করে ওঠে। ও বললো, ‘নীলু, সেদিন তুমি বাসায় ফিরতে পারোনি?’
নীলু বললো, ‘এখন মনে পড়েছে, আমি পথ হারিয়ে ফেলেছিলাম। এবার আমি ফিরতে চাই।’
ট্রেন থামে পরবর্তী স্টেশনে। সেখানে হলুদ আলো ছড়িয়ে আছে। কন্ডাক্টর বললেন, ‘এটাই নীলুর বাড়ি ফেরার পথ।’
নীলু বললো, ‘আজ থেকে তোমরা আমার বন্ধু। অনেক ধন্যবাদ। আমি এবার যাই।’
তারপর সে ধীরে ধীরে আলোয় মিলিয়ে গেলো। মুনা চোখ মুছে বললো, ‘আর কি কখনো নীলুর সাথে দেখা হবে?’
কন্ডাক্টর হাসলেন। খুব রহস্যময় সেই হাসি। তিনি বললেন, ‘হয়তো দেখা হবে, আবার নাও হতে পারে। এখন তোমাদের বাড়ি ফেরার সময় হয়েছে।’
ট্রেন ধীরে ধীরে বকুলপুর রেলস্টেশনে ফিরে এলো। তামিম ও মুনা ট্রেন থেকে নামে। তারপর পেছন ফিরে তাকালো। কিন্তু ট্রেন, কন্ডাক্টর–সব অদৃশ্য হয়ে গেছে! n

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গল প বলল ন চকল ট ত রপর

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসুতে দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল, জয় ধরে রাখতে মরিয়া শিবির

দীর্ঘ ৩৫ বছর পর আর মাত্র চারদিন পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচন। রাকসু নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে, তেমনি নির্বাচনী মাঠে বেশ জোরালো উপস্থিতি নিয়ে নামছে ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবির।

ডাকসু ও জাকসুর ৫৩টি পদে একটিতেও জয় না পাওয়ার দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল। অন্যদিকে, ডাকসু-জাকসুতে বড় জয় পাওয়ার পর আত্মবিশ্বাসী ছাত্রশিবির এবার রাবিতেও তাদের আধিপত্য ধরে রাখতে চায়।

আরো পড়ুন:

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: পোষ্য কোটা নিয়ে ছাত্র-শিক্ষক হাতাহাতি

রাকসু নির্বাচন: আলোচিত ভিপি প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু কিংবা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার রাকসুতে ভিন্নধর্মী কৌশল ও প্রচার গ্রহণ করেছে এ দুই শক্তি।

চলতি মাসের ৯ সেপ্টেম্বর এবং ১১ সেপ্টেম্বর নানা অভিযোগ আর নাটকীয়তার মধ্যে শেষ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু) নির্বাচন। দুইটি সংসদের মোট ৫৩টি পদেই পরাজিত হয়েছে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল। কোথাও কোনো অবস্থানই তৈরি করতে পারেনি সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।

দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের ভোটে বড় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির মনোনীত প্যানেল। ডাকসুর ২৩টি ও জাকসুর ২০টি পদে বিজয়ী হয়েছে তারা। ডাকসুর বাকি পাঁচটি পদের মধ্যে চারটিতে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা এবং একটি পদে জয় পেয়েছেন বামপন্থি প্যানেল ‘প্রতিরোধ পর্ষদ’ এর একজন প্রার্থী।

অন্যদিকে, জাকসুর ২৫টি পদের মধ্যে একটি (ভিপি পদ) গেছে স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন প্যানেলের হাতে, দুটি পদ পেয়েছে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস), আর দুটি পদে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থীরা। বাকি সব পদে জয়ী হয় শিবির সমর্থিতরা।

এছাড়া জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যারা সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, সেই আন্দোলনের কয়েকজন নেতাও অংশ নিয়েছিলেন ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে। কিন্তু তারাও ভোটে জিততে পারেননি।

গত ৭ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাকসুর ২৩টি পদে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল ঘোষণা করে ছাত্রদল। এবারের প্যানেলে তারা ক্লিন ইমেজধারী, নির্যাতিত এবং বহুমাত্রিক পরিচয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দিয়েছে। এতে রয়েছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়, রাজশাহী ফুটবল দলের গোলকিপার, ব্যান্ড সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা, ডিনস পুরস্কারজয়ী শিক্ষার্থী, সংস্কৃতিকর্মী ও জনপ্রিয় সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

প্যানেলে শীর্ষ তিন পদের মধ্যে একটিসহ মোট চারটি পদে নারী প্রার্থী রাখা হয়েছে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। বিশেষ করে ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবীর তার নম্র স্বভাব, সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ এবং ইতিবাচক ছাত্র নেতৃত্বের কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি করতে পেরেছেন।

জিএস পদে আছেন নাফিউল জীবন, যিনি ছাত্রলীগের হাতে বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এজিএস পদে জাহিন বিশ্বাস এষা একজন বলিষ্ঠ নারী কণ্ঠ এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পরিচিত মুখ, যিনি নারী ভোটারদের মনোযোগ কৌশলে টানছেন।

বছরের পর বছর আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চলার পর গত ১৬ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। নবগঠিত এই কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ দলের শীর্ষ অন্তত ২০ নেতার ছাত্রত্ব নেই। তাই তারা প্রার্থী হতে পারেননি। বাকি যাদের ছাত্রত্ব আছে, তাদের ক্যাম্পাসে পরিচিতি যেমন কম, তেমনি অভিজ্ঞতার দিক থেকেও বেশ পিছিয়ে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, ছাত্রদলের প্যানেলে অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত ও ‘অনভিজ্ঞ’ যাদের প্রার্থী করা হয়েছে, তারা শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে কতটুকু জায়গা নিতে পারবেন!

ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী নাফিউল জীবন বলেন, “ডাকসু ও জাকসুর অভিজ্ঞতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। এবার আমরা নতুন উদ্যম, শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সমর্থন নিয়ে রাকসুতে ইতিবাচক ফলাফলের বিষয়ে আশাবাদী। নতুন মুখ মানেই নতুন চিন্তা, নতুন চেতনা এবং নতুন ভাবনা। শিক্ষার্থীদের সমস্যার সমাধানে উদ্যম ও সততাই আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি—এটাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”

তিনি বলেন, “আমরা সহিংসতা নয়, শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করছি। শান্তিপূর্ণ প্রচার ও সমস্যার সমাধানের পরিকল্পনাই আমাদের বিজয়ী হওয়ার প্রধান বিষয়।”

ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দীন আবীর বলেন, “ডাকসু কিংবা জাকসুর সঙ্গে রাকসুর তুলনা করা যথার্থ হবে না। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব পরিবেশ, সংস্কৃতি ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আলাদা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আচার-আচরণ, চলাফেরা এবং ক্যাম্পাস সংস্কৃতিও অন্যদের থেকে ভিন্ন। তাই রাকসুর প্রেক্ষাপটকে ঢাবি বা জাহাঙ্গীরনগরের নির্বাচনের সাথে এক কাতারে ফেলা সঠিক হবে না।”

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, যদিও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেক সময় ‘শিবিরের ক্যান্টনমেন্ট’ বলা হয়, তবুও শিক্ষার্থীদের আস্থা ও সমর্থন নিয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সমর্থিত ‘ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্ম’ প্যানেল রাকসু নির্বাচনে বিজয়ী হবে।”

অপরদিকে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দীর্ঘদিন ধরেই ছাত্রশিবিরের প্রভাবাধীন বলে পরিচিত। তবে এবারের নির্বাচনে ছাত্রশিবির ভিন্ন পথে হেঁটেছে। ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ নামে একটি বৈচিত্র্যময় ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্যানেল গঠন করে তারা চমক দিয়েছে। এখানে শুধু ভিপি পদে রয়েছেন রাবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। বাকি পদগুলোতে নানা সংগঠন, শ্রেণি ও সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে।

জিএস পদে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ফাহিম রেজা, এজিএস পদে ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’ এর সভাপতি সালমান সাব্বির। প্যানেলে আছেন তিনজন নারী শিক্ষার্থী-ছাত্রী সংস্থার সভানেত্রী সাইয়্যেদা হাফসাসহ দুজন। সহ-সমাজসেবা সম্পাদক পদেও নারী প্রার্থী রয়েছেন। নির্বাহী সদস্য পদে আছেন একজন সনাতন ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থী। এছাড়া জুলাই আন্দোলনে চোখ হারানো দ্বীপ মাহবুবকেও প্যানেলে রেখেছে শিবির।

এ বৈচিত্র্যকে শিবির নেতৃত্বের অন্যতম কৌশল বলা হচ্ছে। তারা প্রচারে ছাত্রদলের মতো আক্রমণাত্মক না হয়ে শিবিরের স্বভাবসুলভ বিনয়ী আচরণ, কুশল বিনিময় এবং সাংস্কৃতিক উপায়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছাচ্ছেন।

শিবির প্যানেলের সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক প্রার্থী জাহিদ হাসান জোহা এক নতুন মাত্রা যোগ করেছেন প্রচারে। গম্ভীরা গানের সুরে কখনো কৃষক, কখনো শিক্ষক, কখনো গায়ক সেজে ক্যাম্পাস মাতিয়ে তুলছেন তিনি। গানে গানে শিবিরের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরছেন, এটি শিবিরের অন্যতম সৃজনশীল প্রচার হিসেবে প্রশংসিত হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের অনুমিত ‘নিজস্ব ভোট’ রয়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার। তাছাড়া ছাত্রী সংস্থার কারণে ছয়টি নারী হলের ভোটারদের বড় একটি অংশ শিবিরের দিকে থাকতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৯ হাজার ভোটারের প্রায় ৪০ শতাংশ আবাসিক হলে থাকেন, বাকি ৬০ শতাংশ আশপাশে, যেখানে শিবিরের সামাজিক প্রভাব দীর্ঘদিনের।

রাবি ছাত্র শিবিরের সভাপতি ও ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ এর ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর জাহিদ বলেন, “ডাকসু, জাকসু এবং রাকসু—প্রতিটি নির্বাচনের প্রেক্ষাপট আলাদা এবং সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, নির্বাচনী ধারা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতিও স্বতন্ত্র। তাই প্রতিটি নির্বাচনকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা প্রয়োজন। তবে ডাকসু ও জাকসুতে শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতি যে আস্থা রেখেছেন, সেটি আসলে শিক্ষার্থীদের একটি বার্তা। তারা পরিবর্তন চান, তারা সৎ, যোগ্য ও সাহসী নেতৃত্ব চান।”

তিনি বলেন, “এই জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে, আর সেই ধারাবাহিকতাই আমরা রাকসুতেও বজায় রাখতে চাই। অনেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে শিবিরের ঘাটি বলে কিন্তু আমরা এভাবে কখনো বলি না। কারণ এখানে সব মতাদর্শের শিক্ষার্থীরা থাকেন। তাদের মনে আঘাত লাগতে পারে। আমরা নারী শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বীর সবাইকে সম্মান-শ্রদ্ধা করি। সব মতাদর্শ একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবে এটাই স্বাভাবিক।”

তিনি আরো বলেন, “রাকসুতে আমরা শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ও সমস্যাগুলো সরাসরি শুনে সেগুলোর সমাধানকে আমাদের ইশতেহারে রাখছি। আমরা চাই একটি নিরাপদ, স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক শিক্ষাঙ্গন, যেখানে ভিন্নমত দমন নয়, বরং অংশগ্রহণমূলক রাজনীতি চর্চা হবে। ক্যাম্পাসে সাংগঠনিক শক্তিকে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগিয়ে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছি। 

“আমাদের মূল লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। শেষ পর্যন্ত আমাদের লক্ষ্য একটাই শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা। আমরা বিশ্বাস করি, রাকসুতেও শিক্ষার্থীরা আমাদের ওপর আস্থা রাখবেন,” যোগ করেন শিবির সভাপতি।

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আপনাদের কার্যক্রম তো সন্ত্রাসীদের মতো’ সাংবাদিকদের বললেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ভিডিও ভাইরাল
  • ‎ বিশ্বসেরা গবেষকের তালিকায় বেরোবির ৩ শিক্ষক-শিক্ষার্থী
  • ব্যাংকিং খাতে আস্থা বাড়াতে নিজের কর্মপরিকল্পনা ও উদ্যোগের গল্প বললেন সৈয়দ মাহবুবুর রহমান
  • ভারত ম্যাচের আগে দলে মনোবিদ যুক্ত করেছে পাকিস্তান
  • প্রকাশ্য থেকে গুপ্ত: ভেতর থেকে দেখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি
  • ডাকাতি হওয়া ২৩ ভরি স্বর্ণ উদ্ধার, গ্রেপ্তার ৩
  • বেতনের অর্ধেক যদি চলে যায় বাসা ভাড়ার পেছনে...
  • রাজনৈতিক ‘অস্ত্র’ না হয়ে প্রভাবমুক্ত হোক পুলিশ
  • গকসু নির্বাচন: জাহিদের প্রচারণায় সবুজের ডাক
  • রাকসুতে দুঃখ ঘোচাতে চায় ছাত্রদল, জয় ধরে রাখতে মরিয়া শিবির