বাস-অটোরিকশা মুখোমুখি সংঘর্ষে জাবি শিক্ষার্থীসহ নিহত ৪
Published: 20th, June 2025 GMT
নাটোরের বনবেলঘড়িয়া বাইপাস এলাকায় যাত্রীবাহী বাস ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) এক শিক্ষার্থীসহ চারজন নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র মো. সাগর (২৫)। তিনি রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা। এছাড়া নিহত অন্যরা হলেন সিএনজি অটোরিকশার চালক বাবু (৩৫), শহিদুল ইসলাম (৩৮) এবং আরও একজন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি। নিহত সবাই নাটোর সদরের হরিশপুর এলাকায় যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।
ঝলমলিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এশাই) আবুল কালাম জানান, হরিশপুর যাওয়ার পথে বনবেলঘড়িয়া বাইপাস মোড়ে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে সিএনজি অটোরিকশার সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই সাগর ও চালক বাবু মারা যান। পরে গুরুতর আহত শহিদুল ও অপর যাত্রীকে উদ্ধার করে নাটোর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় সড়কে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং দুর্ঘটনা-কবলিত যানবাহন দুটি সরিয়ে নেয়।
নিহতদের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় আইনি প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় পার্টিতে নেতাদের বিরোধ, ডিগবাজি
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনে ৫ আগস্টের পর জাতীয় পার্টি (জাপা) চাপে পড়ায় পূর্ববর্তী ভূমিকার দায় এড়াতে বিরোধে জড়িয়েছেন দলটির নেতারা। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগ আমলের তিন বিতর্কিত নির্বাচনে এমপি হলেও পরিবর্তিত রাজনীতিতে ‘টিকতে’ দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে সরাতে চাচ্ছেন। ফ্যাসিবাদের দোসর তকমামুক্ত হতে জাপায় নতুন নেতৃত্বের চেষ্টা করছেন তারা। এই তৎপরতায় দলের বাইরের ‘ইন্ধন’ও রয়েছে।
জাপা সূত্র সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছে। দলটির ছয় জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, তারা মনে করেন, শেখ হাসিনার শাসনামলের বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের নেতৃত্বে থাকলে জাপা টিকতে পারবে না। অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের বিরোধিতার কারণে সরকারের বৈঠক এবং সংস্কারে ডাক না পাওয়া জি এম কাদের যেভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে বলছেন, তাতে জাপার বিপদ বাড়ছে। তাই তাঁকে ঝেড়ে ফেলতে ডিগবাজি খেয়ে তৎপর হয়েছেন জাপার আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতারা।
জি এম কাদের ২৮ জুনের সম্মেলন স্থগিত করলেও জ্যেষ্ঠ নেতারা জানিয়েছেন, ওই দিন সম্মেলন হবেই। কাদের না এলে তাঁর অনুপস্থিতিতেই সম্মেলন হবে। নতুন নেতৃত্বও নির্বাচিত হবে সেদিন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কর্মসূচি থাকায় ২৮ জুন চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে দলের সম্মেলন করা সম্ভব নয়– কারণ দেখিয়ে ১৭ জুন জি এম কাদের সম্মেলন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানান।
যদিও তাঁর বিরোধীদের ভাষ্য, চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র না পেলে প্রেসিডিয়ামের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাকরাইলে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে সম্মেলন হবে। তবে এখনও চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্র ভাড়া পাওয়ার চেষ্টা চলছে। সম্মেলনের জন্য আগামীকাল রোববারের মধ্যে পুলিশ-প্রশাসনের অনুমতি পাওয়া যাবে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যানবিরোধীরা।
এখনও জি এম কাদেরের অনুগত প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটওয়ারী সমকালকে বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের চেয়ারম্যান সম্মেলনে সভাপতিত্ব করবেন। তিনি অনুপস্থিতি থাকলে সেই সম্মেলন অবৈধ হবে।
জাপা নেতারা জানান, জি এম কাদেরকে সরাতে সামনে আনা হয়েছে দলের গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারা। এ ধারার ফলে জাপা চেয়ারম্যান কারণ দর্শানো ছাড়াই দলের যে কাউকে পদ থেকে সরাতে পারেন, বহিষ্কার করতে পারেন। যে কাউকে যে কোনো পদ দিতে পারেন। এ জন্য তাঁর জবাবদিহিতা নেই।
১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জাপা প্রতিষ্ঠা করার পর থেকেই এই ধারা রয়েছে দলের গঠনতন্ত্রে। এর ক্ষমতাবলে এরশাদের পর জি এম কাদেরও অনেক নেতাকে পদ দিয়েছেন, বহিষ্কার করেছেন। সম্মেলনে নির্বাচিত মহাসচিবকে সরিয়েছেন।
এ ধারা বিলোপে একাট্টা হয়েছেন জাপার সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুসহ সাবেক ও বর্তমান জ্যেষ্ঠ নেতাদের বড় অংশ। তাদের প্রায় সবাই আওয়ামী লীগে বিতর্কিত নির্বাচনে এমপি-মন্ত্রী হয়েছেন। আনিসুল ইসলাম এবং রুহুল আমিন হাওলাদার ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিএনপির এমপি ছিলেন।
জাপার চেয়ারম্যান হতে চাচ্ছেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। মহাসচিব হতে চাচ্ছেন রুহুল আমিন হাওলাদার। ২০১৪ সালের নির্বাচন এরশাদ ও জি এম কাদের বর্জন করলেও রওশন এরশাদ ও আনিসুলের নেতৃত্বে জাপা অংশ নেয়। জাপা বিরোধী দলের আসনে বসলেও হাসিনা সরকারের মন্ত্রী হন আনিসুল ইসলাম। ২০১৮ সালেও তিনি এমপি হন। গত বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিরোধীদলীয় উপনেতা হয়েছিলেন।
রুহুল আমিন হাওলাদার ২০১৪ এবং ২০২৪ সালে এমপি হয়েছেন। ২০১৩ সালে ছিলেন সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী। মুজিবুল হক চুন্নু তিন নির্বাচনেই এমপি হয়েছেন। ২০১৪ সালে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী। জি এম কাদেরের সঙ্গে বিরোধে রওশনের নেতৃত্বে পৃথক জাতীয় পার্টি গড়া কাজী ফিরোজ রশিদ এবং সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে এমপি হন। তারাও জি এম কাদেরকে নেতৃত্ব থেকে সরানোর তৎপরতায় যোগ দিয়েছেন।
বিরোধী দলের আসনে বসেও প্রায় সব ইস্যুতে সরকারের সুরে কথা বলে আওয়ামী লীগের আমলে গৃহপালিত বিরোধী দলের তকমা পাওয়া জাপার নেতাদের মধ্যে জি এম কাদের বাদে অন্যরা ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনার সমালোচনা করছেন।
কয়েক দিন ধরে গণমাধ্যমকে এড়িয়ে চলছেন জি এম কাদের। তবে তিনি একাধিকবার বলেছেন, যারা শেখ হাসিনার সময়ে সরকারের ক্ষমতা ব্যবহার করে জাপাকে যন্ত্রণা দিয়েছে, তারাও আবার তৎপর হয়েছে। তাদের লক্ষ্য নতুন ক্ষমতাধরদের খুশি করে আগামী নির্বাচনে কিছু একটা পাওয়া।
যদিও এসব বক্তব্যকে নাকচ করেছেন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হতে চাওয়া ব্যারিস্টার আনিসুল। তিনি বলেছেন, জি এম কাদের নিজে শেখ হাসিনার মন্ত্রী হয়েছেন। সরকারকে ব্যবহার করে বিরোধীদলীয় উপনেতা, নেতা হয়েছেন। তাঁর মুখে এসব কথা মানায় না।
চেয়ারম্যানকে ভারতের দোসর আখ্যা দিয়ে আনিসুল ইসলাম বলেছেন, জি এম কাদের একসময় বলেছেন, ভারত অনুমতি না দেওয়ায় তিনি সব কথা বলবেন না। এখন তিনি যেসব কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের সমর্থনে, সেগুলো কি ভারতের অনুমোদনে বলছেন? তাঁর বিরুদ্ধে দলীয় চেয়ারম্যানের ক্ষমতার অব্যবহার হয়, আর্থিক কেলেঙ্কারিরও অভিযোগ রয়েছে।
এখনও জি এম কাদেরের সঙ্গে রয়েছেন বলে জানালেও মুজিবুল হক চুন্নু সমকালকে বলেন, সম্মেলন ২৮ জুন হবে কিনা জানি না। তবে প্রেসিডিয়ামের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছিল, ওইদিন চীন মৈত্রীতে বা কাকরাইলে সম্মেলন হবে। চীন মৈত্রী না পাওয়ায় কাকরাইলে সম্মেলন করা যেত। কিংবা প্রেসিডিয়ামের অনুমোদন নিয়ে সম্মেলন স্থগিত করা যেত। চেয়ারম্যান একক সিদ্ধান্তে সম্মেলন স্থগিত করায় কাজটি সুন্দর হয়নি। সম্মেলনে আনিসুল ইসলাম এবং রুহুল আমিন হাওলাদার একটি প্যানেল দিচ্ছেন। জি এম কাদেরের প্যানেল থেকে আমি মহাসচিব প্রার্থী হতে চাই। জি এম কাদের যদি সম্মেলন না করেন, তখন কোথায় যাব?
২০(ক) ধারা পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে চুন্নু বলেন, জি এম কাদের গণতন্ত্রের কথা সবচেয়ে বেশি বলেন। তিনি গণতন্ত্রের চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু ২০(ক) ধারাও রাখছেন। এ ধারা বলে তিনি যে কোনো সময়ে মহাসচিবকেও সরাতে পারেন। এত অনিশ্চয়তা নিয়ে রাজনীতি হয় না। তাই ধারাটি শিথিল করে প্রেসিডিয়ামের অনুমোদনে বহিষ্কার এবং পদ দেওয়ার নিয়ম করতে বলেছি।
জি এম কাদেরবিরোধীদের সূত্রের খবর, আনিসুল চেয়ারম্যান ও রুহুল আমিন মহাসচিব হবেন। চুন্নুকে নির্বাহী চেয়ারম্যান হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান হবেন কাজী ফিরোজ রশীদ। তিনি এককালে এরশাদকে ছেড়ে জাপা ভেঙে বিএনপির জোটে গিয়েছিলেন। জাপা ভেঙে একই নামে দল করা আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে দলে ফিরিয়ে প্রধান পৃষ্ঠপোষক হওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনিও শেখ হাসিনার মন্ত্রী ছিলেন।
আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বিষয়ে আনিসুল ইসলাম বলেছেন, তাঁকে সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তিনি উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করছি। যারা অতীতে জাতীয় পার্টি থেকে চলে গেছেন, পৃথক দল করেছেন– তাদের সবাইকে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা রয়েছে। সৌজন্যতার অংশ হিসেবে বিএনপি এবং অন্য দলকে আমন্ত্রণ করা হবে।
সম্মেলনের সঙ্গে সরকার বা সরকারি সংস্থার যোগসূত্র নেই বলেও দাবি করেন আনিসুল ইসলাম। তবে জি এম কাদেরের অনুসারী এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, যারা সম্মেলন চান তাদের সবাই ‘ডিপ স্টেটের’ নিয়ন্ত্রিত ছিলেন। তারা নতুন করে কিছু করছেন মানেই, রাষ্ট্রযন্ত্রের সমর্থনে করছেন। কিংবা ৫ আগস্ট-পরবর্তী মামলা থেকে বাঁচতে করছেন। আবার সবাই ধনাঢ্য ব্যবসায়ী হওয়ায় ব্যবসা রক্ষার স্বার্থেও তৎপর হতে পারেন।