কক্সবাজারে যেখানে সস্তায় মিলবে শামুক–ঝিনুক ও মুক্তার মালা
Published: 22nd, June 2025 GMT
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কেনাকাটার তালিকার থাকে শামুক-ঝিনুকের তৈরি রকমারি অলংকার। শহর এবং সৈকত এলাকায় এসব পণ্য বেচাবিক্রির দোকান আছে দুই শতাধিক। কিন্তু মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে দূরের হিমছড়ি পাহাড়ি ঝরনা যাঁরা দেখতে যান, তাঁরা ইচ্ছা করলে সেখান থেকে কম দামে কিনে নিতে পারেন পছন্দের পণ্যসামগ্রী।
হিমছড়ি এলাকায় একটি দোকানে শামুক-ঝিনুক, কৃত্রিম মুক্তা ও পাথর দিয়ে তৈরি বিভিন্ন রকমের পণ্য বিক্রি হয়। দোকানের নাম ‘আনসার স্টোর’। দোকানের বিক্রেতা কিশোর মো.
জানতে চাইলে সিলেটের নাসরিন আকতার (২৩) বলেন, মাত্র ১৫০ টাকায় একটা মুক্তার মালা, ৩০ টাকায় ঝিনুকের বালা পাওয়া যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজনেরা এসব উপহার পেলে বেজায় খুশি হবেন। আরেক তরুণী বড় দুটি শামুক কিনে তাতে লিখিয়ে নেন ‘ভালো থেকো, মনে রেখো’। ২৫ টাকা দামের শামুকে নাম লেখাতে তাঁর খরচ হয়েছে ১৫ টাকা।
বিক্রেতা আতিক উল্লাহ জানায়, গ্রামের লোকজন সমুদ্রসৈকত থেকে শামুক-ঝিনুক কুড়িয়ে আনেন। রোদে শুকিয়ে মালা তৈরির উপযোগী করে তাদের কাছে বিক্রি করেন। মালা তৈরির কৃত্রিম মুক্তা ও পাথর কিনে আনতে হয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার শহর থেকে। আসল মুক্তা ও পাথর পাওয়া যায় না, গেলেও দাম অনেক বেশি। তার দোকানে প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার টাকার পণ্য বেচাবিক্রি হয়। বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিক্রি বেড়ে যায়। মাসে তার লাভ থাকে ১ লাখ টাকার মতো। এই টাকায় ভাইবোনের লেখাপড়া ও সংসার খরচ চলে।
আতিক উল্লাহর বাড়ি হিমছড়ি এলাকাতে। বাবার আনসার উল্লাহর নামের দোকানের নাম রাখা হয়েছে বলে জানায় সে। দুই বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় আতিক উল্লাহ স্থানীয় ওয়ামী একাডেমিতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। আশপাশে উচ্চবিদ্যালয় না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর পড়াশোনা হয়নি তার। তিন বছর ধরে একাই দোকান পরিচালনা করছে আতিক। ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার প্রতিজ্ঞা রয়েছে তার।
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণি পয়েন্টের ছাতা মার্কেটে শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্য বিক্রির দোকান আছে ১৫৭টি। সুগন্ধা সৈকতে আছে আরও ৫০-৬০টি দোকান। এসব দোকানে প্রতিদিন ১০-১৫ লাখ টাকার রকমারি অলংকার বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে সৈকত ঝিনুক শিল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, আগে সমুদ্রসৈকতে জোয়ারের সময় বিপুল পরিমাণ মরা শামুক-ঝিনুক ভেসে আসত। এখন কমে গেছে। পর্যটকের চাহিদা পূরণ করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে শামুক-ঝিনুকের পণ্য সংগ্রহ করতে হয়। আর কৃত্রিম মুক্তা ও পাথর আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রকম র
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিক তুহিনের মোবাইল ফোন খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ
সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ভিডিও ধারণ ও সত্য উন্মোচন করতে গিয়ে জীবন দিয়েছেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। তাকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনায় জড়িত আট জনকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে এই হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ রয়েছে তার ব্যবহত মোবাইল ফোনে। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশ তার মোবাইল উদ্ধার করতে পারেনি।
ধারণা করা হচ্ছে সাংবাদিক তুহিনের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন উদ্ধার করা গেলে ঘটনার রহস্য আরও বেশি স্পষ্ট ও স্বচ্ছ প্রমাণিত হবে। সচেতন মহল ও সাংবাদিক সমাজ বলছে, মোবাইল ফোন পাওয়া গেলে ঘটনার মোড় ঘুরে যেতে পারে। এসকল সন্ত্রাসী, তাদের মদদদাতা ও হত্যার আসল রহস্য বের হয়ে আসতো।
নিহত সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন।
তার সহকর্মী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সাংবাদিক তুহিন দু’টি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন। তিনি চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন অনিয়ম ও অব্যবস্থাপানা নিয়ে ভিডিও ধারণ করতেন। স্পর্শকাতর ছাড়া মোটামুটি সব ভিডিও তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিতেন।
হত্যাকাণ্ড সংঘটিত এলাকা চান্দনা চৌরাস্তা এলাকাতেই অধিকাংশ সময় কাটাতেন তুহিন। যার কারণে এ এলাকার মোটামুটি সব অনিয়ম ও অপরাধীরা তার পরিচিত ছিল।
সিসিটিভি ফুটেজের চিত্র ও পুলিশের ভাষ্যমতে, গত বৃহস্পতিবার বাদশা নামে এক ব্যক্তি ব্যাংক হতে ২৫ হাজার টাকা তুলে ফিরছিলেন। এসময় আসামি গোলাপী তাকে হানিট্রাপে ফেলার চেষ্টা করে। এটি যখন বাদশা বুঝতে পারে, তখন তার থেকে ছুটতে চায় এবং কিল-ঘুষি মারে। এসময় আগে থেকে ওৎপেতে থাকা অন্য আসামিরা এসে একটি মুদী দোকানে বাদশাকে কোপানো শুরু করে। বাদশা প্রাণ বাঁচাতে দৌড়াতে থাকে।
ঘটনাটি সাংবাদিক তুহিন নিজের পেশাগত কারণেই ভিডিও করে। আসামিরা সাংবাদিক তুহিনকে ভিডিও ডিলেট করতে বলে কিন্তু তিনি রাজি হননি। এক পর্যায়ে ওই আসামিরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়।
স্থানীয় দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে প্রথমে চান্দনা চৌরাস্তায় শাপলা ম্যানশনের সন্ত্রাসীরা বাদশা নামে লোকটার উপরে হামলা করে। ওই ঘটনার ২০-৩০ মিনিট পর ঘটনাস্থলের ঠিক বিপরীত পাশে মসজিদ মার্কেটের সামনে চায়ের দোকানে সাংবাদিকের উপর হামলা করে। এই দীর্ঘ সময় সন্ত্রাসীদের দেশীয় অস্ত্র নিয়ে শোডাউন দিতেও দেখা গেছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন খান বলেন, “নিহত সাংবাদিকের দু’টি মোবাইল ফোন ছিল কিন্তু এখনো তার খোঁজ আমরা পাইনি। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদেও পাওয়া যায়নি ফোন। আমরা তার নম্বর ট্রেকিং করে রেখেছি। ফোন বন্ধ থাকায় লোকেশনও সনাক্ত করা যাচ্ছে না। আমরা ফোনটি উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”
ঢাকা/রেজাউল/এস