কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের কেনাকাটার তালিকার থাকে শামুক-ঝিনুকের তৈরি রকমারি অলংকার। শহর এবং সৈকত এলাকায় এসব পণ্য বেচাবিক্রির দোকান আছে দুই শতাধিক। কিন্তু মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়ে দূরের হিমছড়ি পাহাড়ি ঝরনা যাঁরা দেখতে যান, তাঁরা ইচ্ছা করলে সেখান থেকে কম দামে কিনে নিতে পারেন পছন্দের পণ্যসামগ্রী।

হিমছড়ি এলাকায় একটি দোকানে শামুক-ঝিনুক, কৃত্রিম মুক্তা ও পাথর দিয়ে তৈরি বিভিন্ন রকমের পণ্য বিক্রি হয়। দোকানের নাম ‘আনসার স্টোর’। দোকানের বিক্রেতা কিশোর মো.

আতিক উল্লাহ (১৭। তার দোকানে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে নানা রকম অলংকার। এর মধ্যে শামুক মালা ৩০ টাকা, পাথরের মালা ৫০ টাকা, কৃত্রিম মুক্তার মালা ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক প্রকারের হাতের বালার মধ্যে শামুকের বালা ২০ টাকা, পাথর ও মুক্তার বালা ৫০ টাকা করে। তিন প্রকারের চুল বাঁধার সামগ্রী রয়েছে। এর মধ্যে শামুক কাঠি ৬০ টাকা, শামুকের কাঁকড়া ৭০ টাকা। শামুকের কানের দুল ২০ টাকা, মুক্তার চুড়ি ১০০ টাকা, শামুক-ঝিনুকের হাতব্যাগ ১২০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সম্প্রতি সেখানে গিয়ে কয়েক জন তরুণ-তরুণীকে কেনাকাটা করতে দেখা যায়।

জানতে চাইলে সিলেটের নাসরিন আকতার (২৩) বলেন, মাত্র ১৫০ টাকায় একটা মুক্তার মালা, ৩০ টাকায় ঝিনুকের বালা পাওয়া যাচ্ছে। আত্মীয়স্বজনেরা এসব উপহার পেলে বেজায় খুশি হবেন। আরেক তরুণী বড় দুটি শামুক কিনে তাতে লিখিয়ে নেন ‘ভালো থেকো, মনে রেখো’। ২৫ টাকা দামের শামুকে নাম লেখাতে তাঁর খরচ হয়েছে ১৫ টাকা।

বিক্রেতা আতিক উল্লাহ জানায়, গ্রামের লোকজন সমুদ্রসৈকত থেকে শামুক-ঝিনুক কুড়িয়ে আনেন। রোদে শুকিয়ে মালা তৈরির উপযোগী করে তাদের কাছে বিক্রি করেন। মালা তৈরির কৃত্রিম মুক্তা ও পাথর কিনে আনতে হয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার শহর থেকে। আসল মুক্তা ও পাথর পাওয়া যায় না, গেলেও দাম অনেক বেশি। তার দোকানে প্রতিদিন ২০-২৫ হাজার টাকার পণ্য বেচাবিক্রি হয়। বৃহস্পতি ও শুক্রবার বিক্রি বেড়ে যায়। মাসে তার লাভ থাকে ১ লাখ টাকার মতো। এই টাকায় ভাইবোনের লেখাপড়া ও সংসার খরচ চলে।

আতিক উল্লাহর বাড়ি হিমছড়ি এলাকাতে। বাবার আনসার উল্লাহর নামের দোকানের নাম রাখা হয়েছে বলে জানায় সে। দুই বোন তিন ভাইয়ের মধ্যে বড় আতিক উল্লাহ স্থানীয় ওয়ামী একাডেমিতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। আশপাশে উচ্চবিদ্যালয় না থাকায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও আর পড়াশোনা হয়নি তার। তিন বছর ধরে একাই দোকান পরিচালনা করছে আতিক। ছোট ভাইবোনদের লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার প্রতিজ্ঞা রয়েছে তার।

কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের লাবণি পয়েন্টের ছাতা মার্কেটে শামুক-ঝিনুক দিয়ে তৈরি রকমারি পণ্য বিক্রির দোকান আছে ১৫৭টি। সুগন্ধা সৈকতে আছে আরও ৫০-৬০টি দোকান। এসব দোকানে প্রতিদিন ১০-১৫ লাখ টাকার রকমারি অলংকার বিক্রি হচ্ছে জানিয়ে সৈকত ঝিনুক শিল্প বহুমুখী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন বলেন, আগে সমুদ্রসৈকতে জোয়ারের সময় বিপুল পরিমাণ মরা শামুক-ঝিনুক ভেসে আসত। এখন কমে গেছে। পর্যটকের চাহিদা পূরণ করতে বিভিন্ন জায়গা থেকে শামুক-ঝিনুকের পণ্য সংগ্রহ করতে হয়। আর কৃত্রিম মুক্তা ও পাথর আমদানি করতে হয় বিদেশ থেকে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রকম র

এছাড়াও পড়ুন:

কাছের মানুষ পাশে থাকলে কঠিন যুদ্ধেও জেতা যায়, তার প্রমাণ বিসিএস ক্যাডার মালিহা

মালিহার মা আসমা বেগমের কথা না বললেই নয়। জন্ম মুন্সিগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার কলমা গ্রামে। ঢাকায় বড় হয়েছেন। বেগম বদরুন্নেছা সরকারি মহিলা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।

১৯৯৩ সালে জগন্নাথ কলেজে (সে সময় কলেজ ছিল, ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয় হয়) ভর্তি হন। এর এক বছর পর তাঁর বিয়ে হয়ে যায়।

একঝটকায় ঢাকার শিক্ষার্থী থেকে ঝিনাইদহের হরিশংকরপুর ইউনিয়নের বাকড়ি গ্রামের গৃহবধূ হয়ে গেলেন। আসমা বেগমের খুব ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা শেষ করে চাকরি করার।

স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার পাট চুকে গেল। চাকরির স্বপ্নের সমাপ্তি। মালিহা তাঁর মাকে সারাটা জীবন কেবল অন্যের জন্য করে যেতে দেখেছেন। বিনিময়ে মা পেয়েছে কেবল উপেক্ষা আর অবহেলা।

নতুন জীবন নতুন সংগ্রাম

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার পরই বিয়ে হয়ে যায় মালিহার। বিয়েতে মালিহার মায়ের কেবল একটা অনুরোধ ছিল পাত্র ও তাঁর মা-বাবার কাছে—তাঁর কন্যার লেখাপড়ার যাতে কোনো ত্রুটি না হয়। বিয়ের পর মায়ের ইচ্ছায়, স্বামীর পরামর্শে মালিহা ভর্তি হন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেনারি কলেজে।

মালিহা এই কলেজের প্রথম ব্যাচের ছাত্রী। তখন কলেজটি ছিল শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত। বর্তমানে কলেজটি যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

২০১৯ সালের মার্চে ইন্টার্ন চলাকালীন মা হন মালিহা। মা হয়েও ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করেন। তারপর সময় নষ্ট না করে শুরু করেন চাকরির পড়াশোনা।

সারা জীবন কেবল চেয়েছি মায়ের কষ্টের ভাগ নিতে। কী করলে আমার মা একটু স্বস্তি পাবে। আমার স্বামী সব সময় আমার পাশে ছিলেন। আমাকে অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন, “তুমি কেবল আবেগ নিয়ে কখনোই মায়ের পাশে দাঁড়াতে পারবা না। এ জন্য তোমার পায়ের নিচের মাটি শক্ত হতে হবে।” আমাকে আরও বলত, “আমার মতো স্টুডেন্টের যদি সরকারি চাকরি (ব্যাংকের প্রিন্সিপাল অফিসার) হয়, তোমার কেন হবে না। তুমি আমার চেয়ে বেশি যোগ্য, বেশি পরিশ্রমী, তোমার আরও ভালো চাকরি হবে।”মুলকে সাদ মালিহা, লাইভস্টক ক্যাডার, ৪৪তম বিসিএসযে কান্না আনন্দের

মালিহার মামি শিক্ষা ক্যাডার হন। সে সময় থেকে তাঁর রঞ্জু মামা তাঁকে বিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলেন। মালিহা ২০২০ সাল থেকে চাকরির পড়াশোনা শুরু করেন। ২০২৫ সালে এসে প্রথম সরকারি চাকরি পান। যোগ দেন সরকারি ব্যাংকের অফিসার পদে।

এর কিছুদিন পর ৩০ জুন ৪৪তম বিসিএসের ফল প্রকাশ করে। তবে তখন ক্যাডার পদ আসেনি মালিহার। বেশ হতাশ হয়ে গিয়েছিলেন।

লাইভস্টক ক্যাডারে ৬৮জন ‘রিপিট ক্যাডার’ ছিল। সেসব পুনর্মূল্যায়ন করে আবার যখন ৬ নভেম্বর নতুন ফল প্রকাশ করা হয়, তাতে নাম আসে মালিহার। বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্নপূরণ হয় তাঁর।

মালিহার মা আসমার নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন যেন মেয়ের ভেতর দিয়ে সত্য হয়ে ধরা দেয়। মালিহা যখন চাকরির সুখবর জানাতে মাকে ফোন করে কাঁদতে কাঁদতে ‘আম্মুউউউ’ বলে একটা চিৎকার দিয়েছেন, মা আসমা বেগম ভয়েই অস্থির! নিশ্চয়ই মেয়ের কোনো বিপদ হয়েছে। এরপরই শুনলেন খবরটা। মা-মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই পাশে কাঁদছেন, যে কান্না আনন্দের, প্রাপ্তির, সফলতার।

মামির শাড়ি আর ব্লেজার পরে বিসিএসের ভাইভা দিয়েছেন মালিহা

সম্পর্কিত নিবন্ধ