ধর্ম অবমাননার অভিযোগ: তোপের মুখে জেনেসিস ইয়াসমিন
Published: 22nd, June 2025 GMT
সারা শরীর গাঢ় নীল। লাল লিপস্টিকে ঠোঁট রাঙিয়েছেন। মাথায় টিকলি। নাকে নত, গলায় নেকলেস ও হাতে গোছা গোছা চুড়ি। পরনে সোনালি সিক্যুইনের বিকিনি। চুলের লম্বা বিনুনি মাথা থেকে নেমে গেছে মাটিতে। গোপনাঙ্গে ছুঁইয়েছেন খ্রিষ্ট ধর্মের পবিত্র ক্রস!
২০ জুন ইউটিউবে মুক্তি পেয়েছে ‘ট্রু ব্লু’ শিরোনামের মিউজিক ভিডিও। তাতে এমন রূপে দেখা যায় ভারতীয় বংশোদ্ভূত কানাডিয়ান র্যাপার জেনেসিস ইয়াসমিন মোহনরাজকে। এই গায়িকা, র্যাপার, মডেলকে সবাই টমি জেনেসিস নামেই চেনেন।
টমি জেনেসিসকে এমন রূপে দেখে ভীষণ চটেছেন হিন্দু, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তোপের মুখে পড়েছেন তিনি। তার গাত্রবর্ণ যেন মনে করিয়ে দিচ্ছে শ্যামা কালীকে। ‘ধর্ম নিয়ে ছেলেখেলা হচ্ছে’— এমনই মন্তব্য নেটিজেনদের।
আরো পড়ুন:
ভাঙন আতঙ্কে গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্র পাড়ের বাসিন্দারা
নোবেলকে ‘জাতীয় বেয়াদব’ বললেন রবি চৌধুরী
রিয়া নামে একজন লেখেন, “লজ্জাজনক! মেয়েটি একসঙ্গে দুটি ধর্মকে আক্ষরিক অর্থেই অবজ্ঞা করছে।” সোনিয়া লেখেন, “এটা অসম্মানজনক। হিন্দু দেবী ও সংস্কৃতিকে উপহাস করা মজার নয়। লজ্জা পাও। এই বাজে গানটি খুব খারাপভাবে ব্যর্থ হবে।”
ঋতিকা লেখেন, “অন্য যেকোনো ধর্মের সঙ্গে এটি করার চেষ্টা করুন, তাদের দেবতাদের যৌনতায় লিপ্ত করুন, পবিত্র প্রতীক দিয়ে উস্কানিমূলক ভঙ্গি করুন এবং এটিকে ‘শিল্প’ হিসেবে চিহ্নিত করুন। আশা করছি, আপনি বুঝতে পারছেন এটা নিয়ে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ তৈরি হবে। সবসময় হিন্দুধর্ম কেন সহজ লক্ষ্য? এটি নিন্দনীয় নয়? এটি ঐশ্বরিক নারীত্ব নয়, এটি অবশ্যই সাংস্কৃতিক শ্রদ্ধা নয়, এটি মুক্তির পোশাক পরে উপহাস।” অনেকে বিষয়টি নিয়ে আদালত পর্যন্ত যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় টমি জেনেসিসকে বিতর্ক চললেও মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেননি এই মডেল।
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
‘১৪ সালে বিএনপির কারণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জোট হয়নি’
আওয়ামী লীগ ঠেকাতে ২০১৪ সালে বিএনপির সঙ্গে জোট করার চেষ্টা করেছিল জাতীয় পার্টি। কিন্তু বিএনপির কারণে সেটা হয়নি বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
শনিবার (৯ আগস্ট) ঢাকার গুলশানে ইমানুয়েল কমিউনিটি সেন্টারে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিলে একথা বলেন তিনি।
বিএনপির উদ্দেশ্যে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “আজকে সবচাইতে বড় দল, তারা ২০১৮ সালে নির্বাচন করেননি? ২০১৪ সালে নির্বাচনে বিএনপির একজন বড় নেতার সঙ্গে কথা বলেছি আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে এলায়েন্স করার জন্য, কিন্তু সেদিন বিএনপির কারণে সেটা হয়নি।”
‘‘আমরা নির্বাচন করেছি, আপনারা সংসদ নির্বাচন করেননি, কিন্তু আপনারা সেদিন তো স্থানীয় নির্বাচনগুলো করেছেন। ১৮তে আপনারা করেছেন, আমরাও করেছি, আপনাদের সঙ্গে আমাদের প্রার্থক্য কোথায়। আপনারা এই কিছুদিন আগে মেয়রের যে নির্বাচনটা হয়েছে সেই নির্বাচন আপনারা বৈধতা দিতে চাচ্ছেন। বৈধতা দিয়েছেনও। আজকে স্ববিরোধিতার রাজনীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে” বলেন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
আওয়ামী লীগ আমলে নির্বাচন করার জন্য দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চেয়ে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “নির্বাচন আমরা করেছি, কোনো অন্যায় করিনি। তখনকার যে নিয়ম ছিল, আইন ছিল সেটা মেনে করেছি। বিশ্বের স্বীকৃত একটা সরকার ছিল। সেই সরকারকে প্রতিহত করতে হলে আপনাকে পার্লামেন্টে যেতে হবে। আমরা তো বিপ্লবী পার্টি নই। তারপরও আজকে ফিরোজ রশীদ যে কথা বলেছেন, আমি তার সঙ্গে একসূরে বলবো, তারপরও যদি জনগণ মনে করে আমরা কোনো অন্যায় করেছি, তাহলে নিঃশর্তভাবে আমরা ক্ষমা চাচ্ছি।”
‘‘কারণ আমরা জনগণকে রায়কে সম্মান করতে চাই। চলতে চাই, আমরা এটা বলবো না যে আমি যেটা বুঝি সেটাই ভালো, আপনারা যেটা বুঝেন সেটা খারাপ। হ্যাঁ তবে আপনাদের বুঝাবার চেষ্টা করবো। তারপরও জনগণ যদি মনে করে আমরা অন্যায় করেছি তাহলে আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা চাচ্ছি।”
নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে আনিস বলেন, “আমরা জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করি। স্বপ্ন দেখছি, এদেশের শাসনভার আমরা নিতে পারবো যদি আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকি। আমরা যদি মানুষের কাছে যেতে পারি। আজকে সময় এসেছে আমাদের পার্টিকে শক্তিশালী করার। পাড়া মহল্লায় যেতে হবে আমাদের। আশা করছি, আমরা জনগণের কাছে যেতে পারবো। কারণ আমরা কোনো অন্যায় করিনি।”
সরকারের সংস্কারের সমালোচনা করে দলের এই জ্যেষ্ঠনেতা বলেন, “আজকে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, এ সংস্কার যারা আজকে করার জন্য বসেছে, তারাই একসময় সংস্কারে বাধা দিয়েছিলো। আপনারা বুদ্ধিজীবীরাই সেদিন আমাদের হাইকোর্ট বিকেন্দ্রিকরণ করতে দেন নাই। স্বাস্থ্যনীতি করতে দেয়নি, উপজেলা পদ্ধতি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর বিলুপ্ত করে দিয়েছিল, পরে যখন দেখেছে দেশকে চালাতে পারছে না তখন এই উপজেলা পদ্ধতি আবার এনেছে।”
‘‘আপনারা পিআর পদ্ধতির কথা বলছেন, এটাও এরশাদ সাহেবের কথা। প্রাদেশিক সরকারও তার কথা। আজকে ৪৫ বছর পর আপনারা এখন অনুধাবন করছেন এসব জিনিস করতে হবে-যোগ করেন তিনি।
জাতীয় পার্টি জনগণের পার্টি উল্লেখ করে ব্যারিস্টার আনিস বলেন, “আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যান একজন সামরিক শাসক ছিলেন। যখন তিনি ক্ষমতায়। কিন্তু তিনি এসে করলেন কি? সাধারণত সামরিক শাসকরা ক্ষমতা নিজের হাতে রাখতে পছন্দ করেন কিন্তু তিনি ক্ষমতা বিকেন্দ্রিকরণ করেছিলেন। উপজেলা করে মানুষের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দিলেন। উপজেলায় কোর্ট নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, সেটাও আপনারা বন্ধ করে দিয়েছেন। অতএব আপনারা সংস্কার আমাদের শিখায়েন না।”
কাউন্সিলের প্রথম অধিবেশনের উদ্বোধনী আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির (জেপির) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার। সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন দলের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
দলের যুগ্ম মহাসচিব বেলাল হোসেন, ফখরুল আহসান শাহজাদা ও দপ্তর সম্পাদক রাজ্জাক খানের পরিচালনায় কাউন্সিলে বক্তব্য রাখেন, কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সাহিদুর রহমান টেপা, এটিইউ তাজ রহমান, সোলায়মান আলম শেঠ, নাসরিন জাহান রতনা, নাজমা আকতার, লিয়াকত হোসেন খোকা, মোস্তফা আল মাহমুদ, মাসরুর মওলা, জহিরুল ইসলাম জহির, জসিম উদ্দিন ভূইয়া, আরিফুর রহমানখান, নুরুল ইসলাম মিলন, জিয়াউল হক মৃধা, মোবারক হোসেন আজাদ, খান ইসরাফিল খোকনসহ দলটির অধিকাংশ সিনিয়র নেতা ও বিভিন্ন জেলা কমিটির সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা।
এ সময় সারাদেশ থেকে আগত কাউন্সিলরদের পাশাপাশি প্রায় তিন হাজারের অধিক ডেলিগেট কাউন্সিলে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে সকালে জাতীয় ও দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কাউন্সিলের উদ্বোধন করা হয়। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ইভা