রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কারে ছাত্রশিবিরের ১২৫ প্রস্তাবনা
Published: 22nd, June 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনের তপশিল ঘোষণার পাশাপাশি একাডেমিক ও প্রশাসনিক সংস্কারের দাবিতে ২০টি ক্যাটাগরিতে ১২৫টি প্রস্তাবনা পেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির। রোববার সকাল সোয়া ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান এবং দুপুরে ক্যাম্পাসের পরিবহন মার্কেটে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাবনা তুলে ধরেন তারা।
এসব প্রস্তাবনা অনুযায়ী আগামী তিন দিনের মধ্যে রোডম্যাপ প্রকাশ করা না হলে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তারা।
তাদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে- পূর্ণাঙ্গ টিএসসিসি, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, আবাসন ব্যবস্থা সংস্কার, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার সংস্কার, চিকিৎসা কেন্দ্রের সংস্কার, ভর্তি-ফর্ম ফিলাপ পেমেন্ট সিস্টেম আধুনিকায়ন, যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল কার্যকর ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ। তিনি বলেন, আগামী ২৬ জুনের মধ্যে রাকসু নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে হবে। ৩১ শে জুলাই এর মধ্যেই রাকসু নির্বাচন সম্পন্ন করতে হবে। রাকসু বাস্তবায়ন উপলক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির জোরদার করতে হবে। সিসিটিভি নজরদারি, গোয়েন্দা তৎপরতা, পুলিশ টহল বৃদ্ধিসহ বহিরাগত প্রবেশ সীমিত করতে হবে।
ছাত্রশিবিরের সভাপতি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের শতভাগ আবাসনব্যবস্থা নিশ্চিতকরণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং এ সংক্রান্ত রোডম্যাপ প্রণয়ন করতে হবে। হল উন্নয়নের নামে ৫০ টাকার আবশ্যিক ফিসহ অযৌক্তিক সকল ফি বাতিল করতে হবে। নারী শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককেই ১ম বর্ষ থেকে আবাসিক সিট নিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা চালু করতে হবে। রিডিং রুমের সিট সংখ্যা ও পরিসর বৃদ্ধি করতে হবে। গ্রন্থাগারে প্রশাসক নয়, লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ দিতে হবে। সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত লাইব্রেরী খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রকে একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেলে রূপান্তরিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, প্রতিটি বিভাগে পাঁচ অথবা দশ বছর মেয়াদী একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রস্তুত করতে হবে। শিক্ষক মূল্যায়ন পদ্ধতির মাধ্যমে পাঠদানের ব্যাপারে শিক্ষকদের মনোযোগ, শ্রম, নিষ্ঠা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। পরীক্ষার উত্তরপত্রে শিক্ষার্থীর রোল নম্বরের ক্ষেত্রে কোডিং পদ্ধতি চালু করতে হবে। রাবি অধ্যাদেশ ১৯৭৩-এর আলোকে সিন্ডিকেটে ৩ জনের প্যানেল নির্ধারণ করবে। তার মধ্যে থেকে আচার্য একজনকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দিবেন। এ প্রক্রিয়ায় উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে। রেজিষ্ট্রার অফিসে কাজের দীর্ঘ সূত্রিতা, পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সার্টিফিকেট-মার্কশিট শাখায় ভোগান্তি বিলোপ করতে হবে। চলমান শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা সংস্কার করে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্ট্যান্ডার্ড বা আদর্শ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ধর্ষকদের শাস্তি দাবিতে শাবিতে মানববন্ধন
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবি) ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও অন্য মেয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে সাইবার বুলিংয়ের প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। একই সঙ্গে ধর্ষকদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনের সড়কে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে এ দাবি করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্য শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, শিক্ষার্থী ধর্ষণের ঘটনা জানাজানির পরে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়ে শিক্ষার্থীদের চরিত্র নিয়ে কুৎসা রটনা হচ্ছে। কোনো কোনো মেয়ে শিক্ষার্থীর ছবি দিয়ে বিভিন্ন আইডি ও পেজ থেকে তাদের বুলিং করা হচ্ছে। এসব কাজের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক আল-আমিন বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় দুই ছাত্র জড়িত থাকায় আমাদের বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা অত্যন্ত মর্মাহত। আমরা জড়িতদের রাষ্ট্রীয় আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি। এদিকে এ ঘটনার পরে সামাজিক মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। আমরা এসব সাইবার বুলিংয়ের নিন্দা জানাচ্ছি। নারী শিক্ষার্থীদের নামে বানোয়াট তথ্য দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে। তা বন্ধ না হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
গত ২ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে তাঁর দুই সহপাঠী মেসে নিয়ে অচেতন করে ধর্ষণ করেছে। ধর্ষণের পাশাপাশি মেয়ের ভিডিও ও নগ্ন ছবি ধারণ করে। ১৯ জুন ওই দুই শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে তাদের পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে প্রশাসন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ২০ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইন এবং পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন। এ মামলায় পুলিশ ধর্ষক শান্ত তারা আদনান ও স্বাগত দাস পার্থকে গ্রেপ্তার করেছে।