বাবার মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন কলেজে, ওড়না পেঁচিয়ে গেল প্রাণ ছাত্রীর
Published: 22nd, June 2025 GMT
মোটরসাইকেলে চেপে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন শান্তা। কলেজে পৌঁছাতে হবে, একাদশ শ্রেণির শেষ পরীক্ষা। বাবার পেছনে বসে যাওয়ার সময় ওড়না বাতাসে উড়ছিল। সেটি খেয়াল করেননি। কিছু দূর যেতেই পেছনের চাকায় পেঁচিয়ে যায় ওড়না। ছিটকে পড়েন রাস্তায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রাণ হারান তিনি।
আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায়। নিহত ইশরাত জাহান শান্তা (১৮) হাতিয়া ডিগ্রি কলেজের মানবিক বিভাগের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর বাবা মো.
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্বজনেরা জানান, রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে কলেজে পরীক্ষায় অংশ নিতে বাবার মোটরসাইকেলে রওনা হন শান্তা। সোনাদিয়া ইউনিয়নের হিল্টন সড়কে পৌঁছাতেই ঘটে দুর্ঘটনা। চলন্ত মোটরসাইকেলের চাকায় শান্তার ওড়না পেঁচিয়ে যায়। তার একটি অংশ গলায় জড়িয়ে পড়ে। ঝাঁকুনিতে দুজনই ছিটকে পড়েন রাস্তায়। গুরুতর আহত হন বাবা-মেয়ে।
পথচারীরা তাঁদের উদ্ধার করে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক শান্তার অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে দ্রুত ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন।
স্বজনেরা তাঁকে স্পিডবোটে করে নলচিরা ঘাট থেকে চেয়ারম্যানঘাটে নেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু গন্তব্যে পৌঁছানোর আগেই, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে চেয়ারম্যানঘাটে পৌঁছাতেই মারা যান শান্তা।
হাসপাতালের উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (স্যাকমো) মো. শামীম জানান, মোটরসাইকেল থেকে পড়ে কলেজছাত্রীর মাথায় গুরুতর জখম হয়। এ ছাড়া তাঁর ওড়না পেঁচিয়ে যাওয়ায় গলাতে ফাঁসের মতো চিহ্ন ছিল। হাসপাতালে আনার পরপরই তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
শান্তার চাচা মো. আশ্রাফ জানান, আশঙ্কাজনকভাবে তাঁকে ঢাকা নেওয়ার জন্য নদী পেরিয়ে চেয়ারম্যানঘাট পৌঁছালে শান্তার মৃত্যু হয়। পরে শান্তার মৃতদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। তিনি জানান, মেয়ের মৃত্যুতে তাঁর ভাই অনেকটা বাক্শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তিনি সবার সঙ্গে অস্বাভাবিক আচরণ করছেন।
জানতে চাইলে হাতিয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আজমল হুদা প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি তিনি শুনেছেন। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ বিষয়টি থানায় অবহিত করেনি।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শত কোটি টাকার নদী খনন কাজ বন্ধ
নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু কিছুদিন কাজ করার পর তা বন্ধ চলে যায় চুক্তি করা টিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দ্রুত পুনরায় খনন কাজ শুরু করার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙন থেকে সংরক্ষণ প্রকল্পের আওয়াতায় ২৫০ কোটি ব্যয়ে নদীর নাব্যতা ফেরাতে চেঙ্গী ও মাইনি নদীর ৫৮ কিলোমিটার খনন কাজ শুরু করেছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রকল্প অনুযায়ি, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ এবং মাইনি নদীর ইয়ারাংছড়ি থেকে লংগদু মুখ পর্যন্ত খনন করার কথা।
আরো পড়ুন:
ঢাকার ৪৪ খাস পুকুর-জলাশয় সংস্কার শুরু
মাদারীপুরে নদীর মাটি চুরি, ভাঙন আতঙ্ক
কিন্ত মাইনি নদীর খনন কাজ চললেও চেঙ্গী নদীর কাজ কিছুদিন করার পর বন্ধ করে চলে যায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। মহালছড়ি থেকে নানিয়ারচর অংশে কাজ নতুন করে শুরু হলেও রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচর থেকে বুড়িঘাট শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ স্মৃতি স্তম্ভ পর্যন্ত অংশের খনন কাজ ৩-৪ মাস ধরে একেবারে বন্ধ।
এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে। ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
নানিয়ারচর পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা মো. খোরশেদ আলম, মো. আনসার আলী ও হাসাপতাল এলাকা বাসিন্দা মো. নুরুল হক জানান, নদীর খনন কাজ শেষ হলে তারা উপকৃত হতেন। বিশেষ করে কাপ্তাই হ্রদের পানি যখন কমে যায়, শুকনা মৌসুমে নদী পথে তাদের মালামাল আনা-নেওয়া করতে সুবিধা হত। আর সেই মাটিগুলো দিয়ে যদি নিচু রাস্তাগুলো উচু করা যেত তাহলে তারা উপকৃত হতেন। তাদের দাবি আবার যেন দ্রুত খনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এনিয়ে কথা বলতে নানিয়ারচর অংশের টিকাদারী প্রতিষ্ঠান ওয়েল এডব্লিউআর (জেভি) এর ম্যানেজার মো. মাহবুবের ও মহালছড়ি অংশের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এআরকেএল-এসএমআইএল (জেবি) এর ম্যানেজার মো. সোয়েবের মোবাইল নাম্বারে কল দেওয়া হলে তারা রিসিভ করেননি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষন বিভাগ-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমেদ জানান, চেঙ্গী নদীর মহালছড়ি থেকে নানিয়ার এর কাজ মাঝখানে বন্ধ হয়েছিল, ড্রেজার নিয়ে গিয়েছিল কন্ট্রাকটর। তখন কাজ বাতিলের নোটিশ করেছিলেন। তবে মহালছড়ি অংশের ঠিকাদার আবার নতুন করে ড্রেজার নিয়ে এসেছে। এখন থেকে নিয়মিত কাজ চলবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি জানান, নানিয়াচরে ঠিকাদার নিজস্ব ব্যবস্থাপনার কারণে কাজ করতে পারেনি। ফলে উপরের নির্দেশে কাজ বাতিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেখানে নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ করতে হবে। আর মাইনী নদীর খনন কাজ চলমান আছে, আগামী জুন মাসে শেষ হবে।