শিক্ষাজীবন আমাদের মেধার ভিত্তি তৈরি করে, কিন্তু কর্মজীবনের মূলমন্ত্র হলো সঠিক দক্ষতা। আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে কেবল পুঁথিগত বিদ্যাই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন এমন কিছু দক্ষতা যা একজন শিক্ষার্থীকে কর্মজীবনে টিকে থাকতে এবং সাফল্য অর্জন করতে সাহায্য করবে। ‘দক্ষতা উন্নয়ন: কর্মজীবনের প্রস্তুতি’ কেবল একটি স্লোগান নয়, এটি বর্তমান ও ভবিষ্যতের কর্মজীবনের জন্য একটি অপরিহার্য বিনিয়োগ।
কেন দক্ষতা উন্নয়ন জরুরি?
কর্মবাজার প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের এই যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ডেটা সায়েন্স এবং অটোমেশনের মতো প্রযুক্তিগুলো অনেক পুরোনো পেশাকে প্রতিস্থাপন করছে, আবার নতুন অনেক সুযোগ তৈরি করছে। এই পরিস্থিতিতে একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন শুধু ‘কী শিখতে হবে’ তা জানা নয়, বরং ‘কীভাবে শিখতে হবে’ এবং ‘কীভাবে সেই শেখা কাজে লাগাতে হবে’ তার সঠিক নির্দেশনা। যেসব শিক্ষার্থী তাদের একাডেমিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক দক্ষতাগুলো বৃদ্ধি করে, তারাই প্রতিযোগিতামূলক কর্মবাজারে এগিয়ে থাকে। নিয়োগকর্তারা এখন শুধু ভালো ফলাফলের চেয়ে সমস্যা সমাধানের দক্ষতা, যোগাযোগ ক্ষমতা এবং দলবদ্ধভাবে কাজ করার ক্ষমতার ওপর বেশি জোর দেন।
কী ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন?
কর্মজীবনের প্রস্তুতির জন্য দক্ষতাগুলোকে মূলত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
কঠিন দক্ষতা (Hard Skills): এগুলো নির্দিষ্ট কাজ বা পেশার জন্য প্রয়োজনীয় এবং দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে। যেমন: কম্পিউটার প্রোগ্রামিং, ডেটা অ্যানালাইসিস, গ্রাফিক ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, বিদেশি ভাষা শেখা, অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যার ব্যবহার ইত্যাদি। এই দক্ষতাগুলো সরাসরি কোনো একটি কাজের সঙ্গে যুক্ত এবং প্রায়শই সার্টিফিকেট বা ডিগ্রির মাধ্যমে স্বীকৃত হয়। বর্তমান যুগে ডিজিটাল দক্ষতার গুরুত্ব অপরিসীম। মাইক্রোসফট অফিস সুইট, গুগল ওয়ার্কস্পেস বা ডেটা ভিজ্যুয়ালাইজেশন টুলের মতো সাধারণ ডিজিটাল সরঞ্জামগুলোর জ্ঞান প্রায় সব পেশার জন্যই অপরিহার্য।
নরম দক্ষতা (Soft Skills): এগুলো ব্যক্তিগত গুণাবলি এবং সামাজিক দক্ষতা যা একজন ব্যক্তিকে কর্মক্ষেত্রে সফল হতে সাহায্য করে। নরম দক্ষতা সাধারণত পরিমাপযোগ্য নয়, তবে কর্মজীবনে এর প্রভাব অপরিসীম। উদাহরণস্বরূপ:
যোগাযোগ দক্ষতা (Communication Skills): কার্যকরভাবে নিজের ভাবনা প্রকাশ করা, অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং মৌখিক ও লিখিত উভয় ক্ষেত্রেই স্পষ্টতা বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি চমৎকার উপস্থাপনা বা একটি তথ্যসমৃদ্ধ ইমেল আপনাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।
সমস্যা সমাধানের দক্ষতা (Problem-Solving Skills): কর্মক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ আসে। সৃজনশীলভাবে এবং দ্রুততার সঙ্গে সমস্যা চিহ্নিত করা ও সমাধান করার ক্ষমতার মাধ্যমে একজন কর্মীর দক্ষতা পরিমাপ করা যায়।
নেতৃত্ব গুণ (Leadership Qualities): শুধু ম্যানেজার হওয়ার জন্য নয়, যে কোনো পর্যায়ে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা অর্থাৎ একটি দলকে অনুপ্রাণিত করা, সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
দলবদ্ধ কাজ (Teamwork): আধুনিক কর্মক্ষেত্রে একা কাজ করার চেয়ে দলগতভাবে করার প্রবণতা বেশি। অন্যদের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, সহযোগিতা করা এবং যৌথ লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখা সফলতার চাবিকাঠি।
সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা (Critical Thinking): তথ্য বিশ্লেষণ করে যুক্তিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা। গুজব বা ভুল তথ্যের ভিড়ে সঠিক তথ্য যাচাই করার জন্য এই দক্ষতা অপরিহার্য।
অভিযোজন ক্ষমতা (Adaptability): দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া এবং নতুন পরিস্থিতি বা প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার ক্ষমতা।
সময় ব্যবস্থাপনা (Time Management): কাজগুলো অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সাজানো এবং সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করার দক্ষতা।
কীভাবে দক্ষতা উন্নয়ন করা যায়?
দক্ষতা অর্জনের জন্য কেবল ক্লাসরুমের পড়াশোনা যথেষ্ট নয়। এর জন্য প্রয়োজন সক্রিয় উদ্যোগ এবং নিরন্তর প্রচেষ্টা:
অনলাইন কোর্স ও সার্টিফিকেশন: Coursera, edX, Udemy, Khan Academy-এর মতো প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন বিষয়ে অসংখ্য কোর্স পাওয়া যায়। এই কোর্সগুলো নির্দিষ্ট দক্ষতার ওপর গভীর জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে এবং অনেক সময় চাকরির বাজারে বাড়তি সুবিধা দেয়।
ওয়ার্কশপ ও সেমিনার: স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক ওয়ার্কশপ ও সেমিনারে অংশ নিয়ে নতুন দক্ষতা শেখা এবং বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করা যেতে পারে।
ইন্টার্নশিপ ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ: একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি ইন্টার্নশিপ বা স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজের মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়। এটি কেবল ব্যবহারিক জ্ঞানই দেয় না, পেশাদার নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতেও সাহায্য করে।
মেন্টরশিপ: অভিজ্ঞ পেশাদারদের কাছ থেকে পরামর্শ ও নির্দেশনা নেওয়া যেতে পারে। একজন মেন্টর সঠিক পথে চলার জন্য মূল্যবান দিকনির্দেশনা দিতে পারেন।
প্রজেক্ট-ভিত্তিক কাজ: নিজের আগ্রহের ভিত্তিতে ছোট ছোট প্রজেক্টে কাজ করা। যেমন: একটি ওয়েবসাইট তৈরি করা, ডেটা সেট অ্যানালাইসিস করা, বা একটি ছোট ব্যবসার পরিকল্পনা তৈরি করা। এটি ব্যবহারিক দক্ষতা বাড়াতে সহায়ক।
পড়া ও গবেষণা: নিয়মিত নতুন বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করা এবং গবেষণামূলক নিবন্ধ পড়া আপনার জ্ঞানকে আপ-টু-ডেট রাখতে সাহায্য করবে।
কর্মজীবনের প্রস্তুতি একটি চলমান প্রক্রিয়া। আজকের সাফল্যের জন্য যেমন দক্ষতা জরুরি, তেমনি ভবিষ্যতের জন্য নতুন দক্ষতা অর্জনের পথে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। মনে রাখতে হবে, সবচেয়ে মূল্যবান হলো নিজের ওপর করা বিনিয়োগ। সঠিক দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী শুধু একটি ভালো চাকরিই পায় না বরং নিজের কর্মজীবনের লাগাম নিজেই ধরতে পারে এবং সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছাতে পারে। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স হ য য কর ব যবহ র ক প রস ত ত র জন য প র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
নেপালে তুষারধসে ৭ পর্বতারোহীর মৃত্যু
নেপালে একটি পর্বতের বেস ক্যাম্পে তুষারধসে তিনজন ইতালীয়সহ সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের দেহাবশেষ উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। মঙ্গলবার এক অভিযান সংগঠন এ তথ্য জানিয়েছে।
সোমবার সকালে ৫ হাজার ৬৩০ মিটার উঁচু ইয়ালুং রি শৃঙ্গের বেস ক্যাম্পে ১২ জনের একটি দল তুষারধসের কবলে পড়ে।
অভিযান সংগঠক ড্রিমার্স ডেস্টিনেশনের ফুরবা তেনজিং শেরপা এএফপিকে জানিয়েছেন, দুই নেপালিসহ একজন জার্মান এবং একজন ফরাসি পর্বতারোহীও মারা গেছেন।
উদ্ধার অভিযানের জন্য সোমবার তুষারধস স্থানে পৌঁছানো শেরপা বলেন, “আমি সাতজনের মৃতদেহই দেখেছি।”
শেরপার কোম্পানি সাতজনের মধ্যে তিনজনের জন্য অভিযান পরিচালনা করেছিল।
দোলখা জেলার একজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা জ্ঞান কুমার মাহাতো জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালে দুই ফরাসি এবং দুই নেপালিসহ পাঁচজন বেঁচে থাকা পর্বতারোহীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আজ ভোরে হেলিকপ্টারে করে উদ্ধারকারীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে।”
মাউন্ট এভারেস্টসহ বিশ্বের ১০টি সর্বোচ্চ শৃঙ্গের মধ্যে আটটি অবস্থিত নেপালে। এখানে প্রতি বছর শত শত পর্বতারোহী এবং ট্রেকাররা ভ্রমণ করেন।
ঢাকা/শাহেদ