কারমাইকেল কলেজে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
Published: 23rd, June 2025 GMT
রংপুরে কারমাইকেল কলেজে একাডেমিক ভবন, অডিটরিয়াম, আবাসিক হল নির্মাণ, শিক্ষক–সংকট সমাধানসহ ৩৭ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজের সব ভবনের গেটে তালা দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবি, গতকাল রোববার তাঁরা রেল ও সড়কপথ অবরোধ করে ২৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দাবি পূরণের ঘোষণা দেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কারমাইকেল কলেজ ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে একাদশ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত এ কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজের বেশির ভাগ শ্রেণিকক্ষ জরাজীর্ণ। শ্রেণিকক্ষে ফ্যান, বেঞ্চ ও আলোর স্বল্পতা; মিলনায়তন নেই। ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসিক হলে মাত্র ৮০০ শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। শিক্ষক–সংকট কাটছে না।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কলেজে পুলিশ বক্স নেই। শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য দুটি বাস আছে, কিন্তু সেগুলো ফিটনেসবিহীন। এ রকম ছোট ছোট সমস্যার অন্ত নেই।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে বেলা দেড়টা পর্যন্ত। পরে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আবার অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রশাসনিক ভবনের গেট ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।
ইসলাম শিক্ষা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আল মাহামুদ আসাদ বলেন, গতকাল রেল ও সড়কপথ অবরোধ করেছিলেন। তখন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (সার্বিক) আশ্বাস দিয়েছিলেন, শিক্ষা উপদেষ্টাকে ক্যাম্পাসে আসার দাবিটি তাঁরা তাঁকে জানাবেন। এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। দাবি না মানা পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
জানতে চাইলে কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে তাঁরা একমত। কিন্তু এসব দাবি বাস্তবায়নে তাঁদের করণীয় খুব সীমিত। কলেজ প্রশাসন থেকে ১৪টি দাবি পূরণে তাঁরা লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শিক্ষা উপদেষ্টার ক্যাম্পাসে আসার জন্য শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছেন, এ বিষয়ে তাঁর একান্ত সচিবের (পিএস) সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
টাঙ্গাইলে মাওলানা ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শ্রদ্ধা
টাঙ্গাইলে নানা আয়োজনে মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে টাঙ্গাইলের সন্তোষ এলাকায় তাঁর মাজার প্রাঙ্গণ সর্বস্তরের মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া-মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এই নেতাকে স্মরণ করা হয়।
দিনের কর্মসূচি শুরু হয় মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোহাম্মদ আনোয়ারুল আজীম আকন্দ শ্রদ্ধা জানান। পরে ভাসানীর পরিবারের সদস্য, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, গণসংহতি আন্দোলন, গণ অধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
ভাসানীর মাজার প্রাঙ্গণে আলোচনা সভার আয়োজন করে জেলা বিএনপি। দলটির জেলা শাখার সভাপতি হাসানুজ্জামিল শাহীনের সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু। এ ছাড়া বক্তব্য দেন ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান, প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, শিশুবিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, জেলা সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবালসহ আরও অনেকে।
নির্বাচন ভন্ডুল করার চেষ্টা চলছে জানিয়ে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এতে কোনো লাভ হবে না। দেশের মানুষ নির্বাচনের জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে যে সরকার আসবে, তা বিএনপিরই সরকার হবে। তিনি দাবি করেন, মাওলানা ভাসানীর আদর্শ অনুসরণ করা মানেই শহীদ জিয়াউর রহমানের পথ অনুসরণ করা।
জামায়াতে ইসলামীর সমালোচনা করে শামসুজ্জামান দুদু বলেন, জামায়াত গণতন্ত্রের পক্ষের কোনো শক্তি নয়। জুলাই বিপ্লবের ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে এই দল। তাঁর দাবি, বিএনপির সঙ্গে থেকে জামায়াত ১৫-২০টি আসন পেয়েছে। অথচ বিএনপির সঙ্গে না থাকলে তিনটি আসনও পায় না। এবার নির্বাচনে জামায়াতের একটি আসনও জুটবে না।
ভাসানীর মাজারে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে গণসংহতি আন্দোলনের নেতা জুনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশে যারা খুন করেছে, তাদের প্রত্যেকের বিচার হতে হবে। ফ্যাসিবাদী কায়দায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বিচারে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে। তার বিচার চলছে। আমরা মনে করি, আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করে এই বিচারপ্রক্রিয়া হয়েছে। বিচারের মধ্য দিয়ে যে রায় আসবে, এর মাধ্যমে বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।’
আওয়ামী লীগ গণ–অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন গন অধিকার পরিষদের নেতা ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক। ভাসানীর মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের যাঁরা হাজার কোটি টাকা নিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। তাঁদের নির্দেশে ককটেল নিক্ষেপ ও জ্বালাও–পোড়াও থেকে বিরত থাকার জন্য দলটির সাধারণ কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তাঁর দাবি, ১৯৭৫ সালের পর আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় আসতে ২১ বছর সময় লেগেছে। এরপর ৪১ বছরেও আর রাজনীতিতে দাঁড়াতে পারবে না তারা।