সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও তাঁর স্ত্রী নুরান ফাতেমার ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন আজ সোমবার এ আদেশ দেন।

উল্লেখ্য, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি হাছান মাহমুদকে। তিনি দেশে নেই—এমন গুঞ্জন ছিল। এর মধ্যে গত এপ্রিলে ঈদুল ফিতরে লন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে দেখা গেছে তাঁকে। লন্ডনের গ্যাংসহিল এলাকার আল-কালাম মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করেন তিনি।

দুদকের তথ্য অনুযায়ী, সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদের ১২টি ব্যাংক হিসাব এবং তাঁর স্ত্রী নুরান ফাতেমার ৩৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আবেদন করে দুদক। শুনানি নিয়ে আদালত তাঁদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।

গত ১৬ জানুয়ারি হাছান মাহমুদ, তাঁর স্ত্রী নুরান ফাতেমা, মেয়ে নাফিসা জুমাইনা মাহমুদসহ তাঁদের ছয়টি কোম্পানির নামে থাকা মোট ৮১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন আদালত।

হাছান মাহমুদ ও তাঁর পরিবারের সদস্য ছাড়া যে ছয়টি কোম্পানির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ হয়েছে, সেগুলো হলো দ্য বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিসেস লিমিটেড, একাডেমি অব মেরিন এডুকেশন অ্যান্ড টেকনোলজি লিমিটেড, বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিস, জে এ এস লিমিটেড, বিসমিল্লাহ মেরিন সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হোল্ডিংস লিমিটেড এবং অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশ সোলারস পাওয়ার লিমিটেড।

আরও পড়ুনহাছান মাহমুদ ও তাঁর পরিবারসহ ছয় কোম্পানির ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

দুদকের পক্ষ থেকে আদালতকে জানানো হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের অনিয়ম ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান করছে দুদক। এরই অংশ হিসেবে হাছান মাহমুদ ও তাঁর পরিবারের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ছয়টি কোম্পানিতে ৭৫৩ কোটি ৩০ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের তথ্য পায় দুদক। বর্তমানে এসব কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে ২৪ কোটি ৬৬ লাখ টাকা জমা আছে। এখন এসব টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করছেন। আদালত শুনানি নিয়ে এসব ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করার আদেশ দেন।

আরও পড়ুনলন্ডনে ঈদের জামাতে প্রকাশ্যে দেখা গেল হাছান মাহমুদকে০১ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আইএমএফের দুই কিস্তির ১৩০ কোটি ডলার মিলবে দু-এক দিনের মধ্যে

বাংলাদেশের জন্য চলমান ঋণ কর্মসূচির চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড়ের প্রস্তাব অনুমোদনে করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে সংস্থাটির নির্বাহী পর্ষদের সভায় এ অনুমোদন করা হয়। আগামী দু-এক দিনের মধ্যে একসঙ্গে দুই কিস্তির ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার বাংলাদেশ পাবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা দিতে ঋণ কর্মসূচি অনুমোদন করা হয়। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ায় ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ  হলো আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। 

২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে। তিন কিস্তিতে আইএমএফের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ২৩৯ কোটি ডলার। ১৩০ কোটি পাওয়া গেলে ১০৯ কোটি ডলার বাকি থাকবে। তবে এ কর্মসূচির সঙ্গে নতুন করে প্রায় ৭৬ কোটি যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে।

আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও শর্ত পরিপালন নিয়ে, বিশেষত টাকা-ডলার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। ফেব্রুয়ারিতে অর্থ মন্ত্রণালয় জানায়, চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এপ্রিলে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল শর্ত পালনের অগ্রগতি পর্যালোচনায় ঢাকায় আসে। তবে সমঝোতা না হওয়ায় চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এর পর ওয়াশিংটনে ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হয়।

সবশেষ গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতা হয় এবং বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং পর্ষদ সভার অনুমোদন সাপেক্ষে ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ